বিএনপির সমাবেশ মঞ্চে বিশৃঙ্খলা, সেলফি তুলতে ধাক্কাধাক্কি

মঞ্চে বহু কর্মীর আচরণে জ্যেষ্ঠ নেতারা বিরক্তি প্রকাশ করেন।

আবদুর রহমান, কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2022, 05:48 PM
Updated : 26 Nov 2022, 05:48 PM

কুমিল্লা নগরীর টাউন হল মাঠে শনিবার সকালে সমাবেশ নেতা-কর্মীদের উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়েই শুরু হয় বিএনপির সাংগঠনিক বিভাগীয় গণসমাবেশ। 

সমাবেশ শেষ হয় বিকাল ৫টার পর। এই দীর্ঘ সময় মাঠে থাকা হাজার হাজার নেতা-কর্মী শেষ পর্যন্ত ছিলেন উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে। শ্লোগান-মিছিলে মাতিয়ে রেখেছেন গোটা সমাবেশস্থল। দীর্ঘ এই সময়ে তাদের মধ্যে কোনো হট্টগোলের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়নি। 

তবে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে সমাবেশের মঞ্চে। 

সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা গেছে, মাঠে দলের নেতা-কর্মীরা যতটা সুশৃঙ্খল ছিলেন, ঠিক ততোটাই বিশৃঙ্খল ছিলেন মঞ্চে উঠে দাঁড়িয়ে থাকা শতাধিক কর্মী। বিশেষ করে সমাবেশ মঞ্চে যারা স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বে ছিলেন তাদেরই বেশি বেপরোয়া দেখা গেছে। 

এতে বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা গেছে। তবে তারা এ নিয়ে পরিচয় দিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। 

কুমিল্লা জেলা দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব জসিম উদ্দিন জানান, ৭০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রস্থের ওই মঞ্চে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে জায়গা ছিল বিএনপির পাঁচ সাংগঠনিক ইউনিটের জ্যেষ্ঠ নেতাদের। অন্যান্য বিভাগীয় গণসমাবেশের মতোই কুমিল্লাতেও খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের জন্য চেয়ার ফাঁকা রাখা ছিল। 

এদিকে, সমাবেশের মঞ্চে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানার সঙ্গে ছবি তোলা নিয়ে কর্মীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটতে দেখা গেছে। এতে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন রুমিন। এরপরও কর্মীদের মধ্যে সেলফি তোলার উৎসাহে কোনো ঘাটতি দেখা যয়নি।   

সরেজমিনে দেখা গেছে, বেলা ১টার দিকে প্রধান অতিথি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম মঞ্চে আসার কিছুক্ষণ পরই সংবাদ সংগ্রহে ব্যস্ত থাকা কুমিল্লার দুই গণমাধ্যমকর্মীর সঙ্গে অসদাচারণ করেন মহানগর বিএনপির এক কর্মী। তিনি বারবার ওই দুই সাংবাদিকদের ওপর হাত তোলার চেষ্টা এবং গালমন্দ করেন। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ জানালে দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। পরে মহানগর বিএনপির সভাপতি উৎবাতুল বারী আবু এসে ওই কর্মীকে ধমক দিয়ে সরিয়ে নেন। 

এ ঘটনার জন্য সাংবাদিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে আবু বলেন, “বিষয়টি আসলে ভুল বোঝাবুঝির কারণে হয়েছে। আমি বিষয়টির জন্য সাংবাদিকদের কাছে দুঃখিত।” 

সরেজমিনে সমাবেশ স্থলের মঞ্চে গিয়ে দেখা যায়, দলের শীর্ষ নেতারা যখন বক্তৃতা করছেন, তখনই মঞ্চে থাকা কর্মীরা নিজেদের মধ্যে আড্ডায় মেতে ছিলেন। বেশিরভাগ কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদেরই বক্তৃতা চলাকালে অন্য নেতাদের সঙ্গে ছবি ও সেলফি তুলতে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। মঞ্চে কর্মীদের এমন ভিড়ের কারণে প্রধান অতিথির বক্তৃতা চলাকালে গণমাধ্যমকর্মীদের দায়িত্ব পালনে বেকায়দায় পড়তে হয়েছে। 

এ ছাড়া মঞ্চে ওঠার সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেও ঘিরে ধরেন শতাধিক সেলফিপ্রত্যাশী। পরে নিজ আসনে বসে মির্জা ফখরুলকেও এসব কর্মীদের নেমে যেতে বলতে শোনা গেছে। কিন্তু তাতেও কর্মীরা নামেননি মঞ্চ থেকে। অনেককে দেখা গেছে সেলফির পাশাপাশি টিকটক করতে। আর স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব থাকা অনেককে আবার তাদের পছন্দের লোকদের মঞ্চে তুলে নেতাদের সঙ্গে ছবি তোলার সুযোগ করে দিতে দেখা গেছে। 

দুপুর ১টার দিকে দেখা গেছে, মঞ্চে উঠে নির্ধারিত আসনে বসে সমাবেশে আসা নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে হাত নেড়ে অভিবাদন জানান সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা। এ সময় স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা একে একে মঞ্চে এসে বক্তব্য দিচ্ছেলেন। মঞ্চের সামনে রুমিন ফারহানাসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের জন্য আসন রাখা হয়। তখন প্রখর রোদ ছিল। তাই ছায়ায় বসতে সামনের আসন থেকে পেছনে আসেন রুমিন। এ সময় ওই উৎসাহী কর্মীরা তাকে ঘিরে ধরেন ছবি ও সেলফি তোলার জন্য। এতে চরম বিরক্তি প্রকাশ করেন রুমিন। তিনি যতই বিরক্ত হচ্ছেন, কর্মীরা তার সঙ্গে ছবি তুলতে ততই ভিড় করতে থাকেন। 

এ সময় দলটির মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের অন্তত ২০ জন নেতা-কর্মী আসেন রুমিনের সঙ্গে ছবি তুলতে। পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে রুমিন মঞ্চের পেছনের চেয়ার ছেড়ে ফের তার জন্য রাখা নির্ধারিত আসনে গিয়ে বসেন। 

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিন উর রশিদ ইয়াছিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনে, মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা সাংগঠনিক বিভাগ) মোস্তাক মিয়াসহ দলের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। 

শনিবার সকাল ৯টা থেকেই একের পর এক মিছিল নিয়ে টাউন হল মাঠে প্রবেশ শুরু করেন দলের নেতা-কর্মীরা। মিছিলে মিছিলে যেন জনস্রোত নামতে শুরু করেছে টাউন হলের দিকে। সকাল ১০টার দিকে টাউন হল মাঠ এরই মধ্যে দলের নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় ভরে যায়। এরপর সড়কগুলোতে অবস্থান নিতে শুরু করে দলটির নেতা-কর্মীরা।  

কুমিল্লা জেলার (কুমিল্লা দক্ষিণ, কুমিল্লা উত্তর ও মহানগর শাখা), চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা – এই পাঁচটি শাখা বিএনপির উদ্যোগে এ বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি বিএনপির অষ্টম বিভাগীয় গণসমাবেশ। 

আরও পড়ুন:

Also Read: বিভাগের নাম ‘কুমিল্লা’ই করা হবে: বিএনপি

Also Read: কুমিল্লায় বিএনপির সমাবেশে কর্মীদের কাতারে সাককু

Also Read: কুমিল্লায় বিএনপির সমাবেশস্থল থেকে নেতা-কর্মীদের মোবাইল ফোন ‘চুরি’

Also Read: কুমিল্লায় বিএনপির সমাবেশের আশপাশে ইন্টারনেটে ধীর গতি

Also Read: মিছিলের স্রোত কুমিল্লা টাউন হল মাঠমুখী

Also Read: টাউন হল মাঠে আড্ডা-গানে রাত কাটলো বিএনপি নেতা-কর্মীদের

Also Read: সমাবেশে এসে যুবদলকর্মী খুইয়েছেন মোবাইল-মানিব্যাগ

Also Read: কুমিল্লার সমাবেশের আগের দিনই পূর্ণ টাউন হল মাঠ

Also Read: কুমিল্লার সমাবেশে আসার পথে বাধার অভিযোগ বিএনপির

Also Read: কুমিল্লার সমাবেশ: পরিবহন ধর্মঘট নিয়ে ‘চিন্তামুক্ত’ বিএনপি