সোমবার দুপুরের পর থেকে সাভার, আশুলিয়ায় বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানা ছুটি দেওয়ায় ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ বেড়ে গেছে কয়েকগুণ।
Published : 08 Apr 2024, 10:55 PM
সাভার শিল্পাঞ্চলের কল-কারখানা ছুটি দেওয়ার পর ঘরে ফেরা মানুষের চাপ বাড়তে শুরু করেছে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক এবং নবীনগর-বাইপাইল সড়কে।
যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, এই পরিস্থিতিতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদেরকে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দুই থেকে তিন গুণ বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে।
সোমবার দুপুরের পর থেকে সাভার, আশুলিয়ায় বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানা ছুটি দেওয়ায় ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। মহাসড়কে থেমে থেমে চলছে যানবাহন।
ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের নির্মাণ কাজের কারণে বাইপাইল থেকে কালিয়াকৈর অভিমুখী সড়ক সরু হয়ে যাওয়ায় থেমে থেমে সেখানেও তৈরি হচ্ছে যানজট।
ঘরমুখো যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে ঢাকা জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ ছাড়াও সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা গেছে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের। বিভিন্ন স্থানে ড্রোন দিয়ে যানজট পর্যবেক্ষণ করতেও দেখা গেছে পুলিশকে।
সাভার ও আশুলিয়া এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কে যাত্রীর চাপ বেশি হওয়ায় যানবাহনের সংকট দেখা দিয়েছে। তবে কোথাও তীব্র যানজট না থাকলেও মহাসড়কে গাড়ির চাপ ছিল চোখে পড়ার মতো।
দুপুরের পর ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সাভারের আমিনবাজার, হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ড, উলাইল বাসস্ট্যান্ড, সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড, রেডিও কলোনি বাসস্ট্যান্ড ও নবীনগর-বাইপাইল সড়কের বাইপাইল, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ইপিজেড, জিরানি, শ্রীপুর ও আশুলিয়া ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
যাত্রীরা জানান, তৈরি পোশাক কারখানাসহ বেসরকারি ও সরকারি অনেক অফিসের শেষ কার্যদিবস ছিল সোমবার। কারখানা ছুটি হওয়ায় ঈদযাত্রায় সড়কে মানুষের ঢল নেমেছে। তবে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে পরিবহন নিয়ে। বাসের তুলনায় যাত্রী বেশি হওয়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের। আবার অতিরিক্ত ভাড়ার চাপ নিয়ে গন্তব্যে ফিরতে হচ্ছে তাদের।
সাভার বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় সেলফি পরিবহনের চালক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, “আজ যাত্রীর চাপ অনেক বেশি। কয়েক দিন যাত্রী তেমন একটা ছিল না।”
তবে ঈদ উপলক্ষে কিছুটা বাড়তি ভাড়া নেওয়ার কথাও স্বীকার করেন এই চালক।
পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের জন্য ফরিদপুর যাওয়ার উদ্দেশে সাভার বাসস্ট্যান্ডে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তৈরি পোশাক শ্রমিক জোসনা বেগম। তিনি বলেন, “আমি বাসের টিকিট কাটতে পারিনি। তাই লোকাল গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু বাস পাচ্ছি না। আবার বাস পেলেও ভাড়া অনেক বেশি চাচ্ছে।”
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নবীনগর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দেখা গেছে, বাসের সারি। এখানেও যাত্রীদের অভিযোগ, নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দুই থেকে তিন গুণ ভাড়া বেশি নিচ্ছে পরিবহনগুলো।
তবে এ কে ট্রাভেলের সুপারভাইজার মামুনুর রশিদ দাবি করেন, তাদের টিকিট কাউন্টার থেকে যাত্রীরা টিকিট কেটে বাসে ওঠেন। সরকারি নির্ধারিত ভাড়ার বেশি তারা নিচ্ছেন না।
সাভারের একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন আমিনুল রহমান। তিনি বলেন, “দুপুরে অফিস ছুটি হওয়ায় গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছি। কিন্তু দেড় ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি, এখনা কোনো বাস পাইনি। পেলেও বাসে দাঁড়ানোর মতো কোনো জায়গা নেই।”
এদিকে সন্ধ্যার পরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, নবীনগর-বাইপাইল ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যাত্রীর ভিড় বাড়তে থাকে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভাড়াও। অনেককে বাস না পেয়ে ট্রাকে করেও গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে যেতে বাইপাইল বাসস্ট্যান্ডে ভিড় করছেন ঘরমুখো যাত্রীরা। তবে যাত্রীর তুলনায় বাস কম থাকায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ রয়েছে পরিবহন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
বাইপাইলে অপেক্ষমাণ সিরাজগঞ্জের এক যাত্রী বলেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়া হওয়ার কথা প্রায় ৩০০ টাকা। তবে বেশ কয়েকটি বাস যাচাই করেও এক হাজার টাকার নিচে কোনো বাস পাননি তিনি। শেষমেশ বাড়তি ভাড়া দিয়েই গন্তব্যে পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সাভার হাইওয়ে থানার এসআই বাবুল হোসেন বলেন, “ঈদকে কেন্দ্র করে মহাসড়কে গাড়ি ও যাত্রীর চাপ বেড়েছে। তবে এখনও যানচলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। কোথাও কোথাও ধীরগতি রয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ পর্যবেক্ষণ করছে।”
তবে ভাড়া বেশি নেওয়ার বিষয়টিও তাদের নজরদারিতে রয়েছে বলে জানান এসআই বাবুল হোসেন।