কুমিল্লার সমাবেশ: পরিবহন ধর্মঘট নিয়ে ‘চিন্তামুক্ত’ বিএনপি

২৬ নভেম্বর নগরীর টাউন হল মাঠে অনুষ্ঠিত হবে কুমিল্লা সাংগঠনিক বিভাগীয় সমাবেশ।

আবদুর রহমান, কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2022, 04:28 PM
Updated : 24 Nov 2022, 04:28 PM

খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি এবং নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা ঘটনায় বিএনপির চলমান সাংগঠনিক বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হলো পরিবহন ধর্মঘট। 

ওইসব সমাবেশের আগে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা হঠাৎ নানা অজুহাতে ধর্মঘট ডেকে বসেন; যা চলমান থেকেছে সমাবেশের দিন পর্যন্ত। সমাবেশ শেষ হলে তার আর থাকে না। 

বিএনপি দেশের আট বিভাগ এবং দুইটি সাংগঠনিক বিভাগে সমাবেশের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। 

এরইমধ্যে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, ফরিদপুর [সাংগঠনিক বিভাগ] ও সিলেটে সমাবেশ করেছে। ময়মনসিংহ ছাড়া প্রতিটি সমাবেশ ঘিরেই পরিবহন ধর্মঘট হয়েছে। ময়মনসিংহে সমাবেশ না হলেও গাড়ি চলেনি। 

ধর্মঘটের কারণে দলটির নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। 

বিএনপির এই কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় আগামী ২৬ নভেম্বর (শনিবার) কুমিল্লা নগরীর টাউন হল মাঠে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কুমিল্লা সাংগঠনিক বিভাগীয় সমাবেশ। 

এতে অংশ নেবে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা, কুমিল্লা উত্তর জেলা, কুমিল্লা মহানগর এবং চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি। বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে এরই মধ্যে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। কুমিল্লা নগরী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও হঠাৎ প্রাণ ফিরে পেয়েছে দীর্ঘদিন ঝিমিয়ে থাকা দলটি। এজন্য সমাবেশ সফল করতে ৫টি ইউনিটের নেতাকর্মীরা দিনরাত প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। 

কুমিল্লা মহানগর ও জেলা বিএনপির একাধিক নেতার ভাষ্য, সাম্প্রতিককালে দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে দলটির গণসমাবেশের সময় হঠাৎ পরিবহন ধর্মঘটের ঘটনা ঘটলেও কুমিল্লায় এমনটা হবে না। কারণ কুমিল্লার ভৌগলিক অবস্থানই তাদের এই চিন্তা থেকে রেহাই দিয়েছে। কারণ দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মধ্যবর্তীস্থান কুমিল্লা। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের মধ্যবর্তী স্থানও কুমিল্লা। কুমিল্লা জেলার বাইরে চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে নেতাকর্মীরা কুমিল্লায় আসতেও খুব একটা সমস্যায় পড়তে হবে না। ট্রেন ও সড়কের বেশ কয়েকটি পথে দুই জেলা থেকে দলটির নেতাকর্মীদের কুমিল্লায় প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। 

এদিকে কুমিল্লার পরিবহন নেতারাও বলছেন, কুমিল্লার বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে অন্যান্য বিভাগগুলোর মতো পরিবহন ধর্মঘটের চিন্তা মাথায়ও আনছেন না তারা।

কুমিল্লা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি কবির আহমেদ বলেন, “আমরা ধর্মঘটে যাব না। বিষয়টি এরই মধ্যে আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আর পরিবহন বন্ধ থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন মালিকরাই।” 

কুমিল্লা মহানগর বিএনপি নেতা কাউসার জামান বাপ্পী বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের নাভি হলো কুমিল্লা। এগুলো দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন। 

“আমার বিশ্বাস সরকার চাইলেই কুমিল্লায় পরিবহন বন্ধ করে দিতে পারবে না। সুতরাং আমরা বিষয়টিকে মাথায়ই আনছি না। তারপরও আমাদের প্রস্তুতি তো রয়েছেই। এছাড়া সরকার এরই মধ্যে বুঝে গেছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের চাপ দিয়ে গাড়ি বন্ধ রেখে বিএনপির নেতাকর্মীদের জনস্রোত আটকে রাখা যায়নি।”

কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিন উর রশিদ ইয়াছিন বলেন, দেশের অন্যান্য বিভাগগুলোর মতো কুমিল্লায় বিএনপির নেতাকর্মীর স্রোত আটকাতে পারবে না কেউই। বরং অন্যান্য জায়গার তুলনায় কুমিল্লায় বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেক বেশি উজ্জীবিত। 

“আমরা ভৌগলিক কারণে বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত না। আশা করছি কুমিল্লায় পরিবহন ধর্মঘটে নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।” 

তবে সমাবেশের ঠিক আগে ধর্মঘট ডেকে বসা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই সেই শঙ্কা মাথায় রেখে দলীয় নেতা-কর্মীরা যারা আগে আসবেন তাদের থাকার জন্য নির্মাণাধীন ও নির্মিত ভবনে মোট ৭৮টি ফ্ল্যাট প্রস্তুত করেছেন বলে জানিয়েছেন বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। 

সাক্কু বলেন, “আমি এরই মধ্যে কুমিল্লা নগরীসহ জেলার ১৭টি উপজেলার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। আসতে বাধা দেওয়ার সমস্যা হলে তারা যেন তিন-চারদিন আগেই এসে খাওয়া-দাওয়া ও থাকার সুযোগ পায় সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা করছি। আমার টার্গেট ৪০ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে সমাবেশস্থলে প্রবেশ করা।” 

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিন উর রশিদ ইয়াছিন বলেন, ২৬ নভেম্বরের গণসমাবেশ উপলক্ষে এরই মধ্যে নেতাকর্মীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে। সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি থাকবেন। সমাবেশকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে পুরো নগরী সেজেছে বিএনপির নেতাদের ব্যানার-ফেস্টুনে। দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও এ গণসমাবেশে আসবেন। পুরো জেলায় সাজ সাজ অবস্থা। শান্তিপূর্ণ এ সমাবেশে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটবে। এরই মধ্যে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেছেন নগরীতে।

Also Read: কুমিল্লায় বিএনপির সমাবেশ: মাঠে থাকবেন বহিষ্কৃত সাককুও