কুমিল্লায় বিএনপির সমাবেশ: মাঠে থাকবেন বহিষ্কৃত সাককুও

দল থেকে আজীবন বহিষ্কার হওয়ার সময় সাক্কু কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন।

আবদুর রহমান, কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2022, 03:42 PM
Updated : 23 Nov 2022, 03:42 PM

দীর্ঘদিন ধরে অনেকটাই ‘ঝিমিয়ে’ সাংগঠনিক কার্যক্রম চললেও বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন কুমিল্লার বিএনপির নেতাকর্মীরা। নগরী থেকে শুরু করে প্রতিটি উপজেলার তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যেও বিরাজ করছে প্রাণচাঞ্চল্য।

সমাবেশে দলের বহিষ্কৃত নেতা মনিরুল হক সাক্কুও উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন।

আগামী শনিবার [২৬ নভেম্বর] কুমিল্লা নগরীর টাউন হল মাঠে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিএনপির কুমিল্লা সাংগঠনিক বিভাগীয় সমাবেশ। এতে অংশ নেবেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা, উত্তর জেলা, মহানগর, চাঁদপুর জেলা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি।

এরই মধ্যে এই পাঁচ ইউনিটের নেতা-কর্মীরা দিনরাত প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর বিএনপির দলীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে সমাবেশস্থল এবং পুরো নগরী ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান আর ভবনের দেয়ালে লাগানো হচ্ছে পোস্টার-ব্যানার।

পোস্টারে দলটির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হচ্ছে। এছাড়া দলের শীর্ষ নেতাদের স্বাগত জানিয়েও ব্যানার-ফেস্টুন টানানো হয়েছে।

এদিকে, সমাবেশকে কেন্দ্র করে কুমিল্লায় বিএনপির রাজনীতিতে ‘বিভক্ত’ দুটি পক্ষের নেতা-কর্মীরা চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা সমাবেশকে সফল করতে পৃথকভাবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

সমাবেশ সফলের লিফলেট বিতরণসহ পৃথকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।

সমাবেশকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত দুই গ্রুপের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কোনো প্রকাশ্য বিরোধ দেখা যায়নি। তারা নিজেদের মতো করেই সম্মেলন সফল করতে মাঠে রয়েছেন। 

দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর বিএনপি দুটি ধারায় বিভক্ত। বর্তমানে এই দুই ইউনিটে বিএনপির মূলধারার নিয়ন্ত্রক হিসেবে মাঠে রয়েছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক আমিন উর রশিদ ইয়াছিন।

আরেক পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) সাবেক দুইবারের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। গত ১৫ জুনের সিটি নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে অংশগ্রহণ করে বিএনপি থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার হয়েছেন সাক্কু। আজীবন বহিষ্কার হওয়ার সময় সাক্কু সবশেষ কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদে ছিলেন। এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ না নেওয়ার অভিযোগে সাক্কুকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার [২২ নভেম্বর] কুমিল্লা টাউন হল মাঠের সমাবেশস্থল ঘুরে এবং নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গণসমাবেশকে সামনে রেখে সোমবার থেকেই শুরু হয়েছে মঞ্চ তৈরির কাজ। প্রথমে কুমিল্লা টাউন হলের দোতলার বেলকনি জুড়ে মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু করলেও পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষ ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ বলায় সেখানে মঞ্চ না করে মাঠের পশ্চিম-উত্তর কোণে মঞ্চ তৈরির যাবতীয় সরঞ্জাম রাখা হয়েছে। মাঠের পূর্ব পাশে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত বইমেলার থাকলেও মঞ্চ তৈরির কাজে এতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

সমাবেশ সম্পর্কে আমিন উর রশিদ ইয়াছিন বলেন, গণসমাবেশে অংশগ্রহণ করবে তাদের পাঁচটি ইউনিট। কেন্দ্রীয় নেতারা এরই মধ্যে কুমিল্লায় এসে বেশ কয়েকটি প্রস্তুতি সভা করেছেন। আরও কয়েকটি প্রস্তুতি সভা হবে।

“আমরা এই সমাবেশটাকে সফল করতে মুখিয়ে আছি। দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখতে পাচ্ছি। পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি।”

সাক্কুর পৃথক প্রস্তুতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইয়াছিন বলেন, “সমাবেশে কে আসবে আর কে আসবে না, সেটা যার যার নিজস্ব ব্যাপার। আমরা এ নিয়ে এখন কথা বলতে চাই না। সমাবেশ ও বিএনপির চলমান আন্দোলনকে সফল করতে আমরা দিনরাত রাজপথে কাজ করে যাচ্ছি।”

সমাবেশ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মনিরুল হক সাক্কু বলেন, “২৬ তারিখের সমাবেশ সফল করতে আমি দিনরাত মাঠে কাজ করছি। সমাবেশের আগে আমার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না করা হলেও আমিও নেতাকর্মীদের নিয়ে সমাবেশে যাব। সেখানে গেলেই যে মঞ্চে বসতে হবে, এমন চিন্তা করি না। প্রয়োজনে কর্মীদের সঙ্গে মাঠে থাকব। কারণ আমি বিএনপিতে ছিলাম, আছি এবং আমরণ থাকব।”

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা) মোস্তাক মিয়া বলেন, সমাবেশ সফল করতে সকল প্রকার প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। নগরীর প্রতিটি পয়েন্টে মাইক থাকবে। এছাড়া অন্তত আটটি স্থানে বড় পর্দায় সরাসরি সমাবেশের কার্যক্রম দেখা ও বক্তব্য শোনার ব্যবস্থা রাখা হবে।

এর আগে চট্টগ্রাম, খুলনা, ময়মনসিংহ, রংপুর, বরিশাল, ফরিদপুর [সাংগঠনিক বিভাগ] ও সিলেটে বিএনপির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাকি আছে কুমিল্লা [সাংগঠিনিক বিভাগ], রাজশাহী ও ঢাকার সমাবেশ।