কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিএনপির নেতা-কর্মীরা এ সমাবেশে অংশ নেবেন।
Published : 25 Nov 2022, 09:22 PM
কুমিল্লায় বিএনপির সমাবেশের আগের দিনই নগরীর টাউন হল মাঠ নেতা-কর্মীতে পূর্ণ হয়ে গেছে। মুহুর্মুহু শ্লোগানে মুখর করে রেখেছেন নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই মাঠ।
শনিবার এই মাঠে আয়োজন করা হচ্ছে বিএনপির কুমিল্লা সাংগঠনিক বিভাগীয় গণসমাবেশ।
এতে অংশ নেবেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা, কুমিল্লা উত্তর জেলা, কুমিল্লা মহানগর এবং চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিভিন্ন জেলা এবং উপজেলা থেকে আসা নেতা-কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শ্লোগান দিতে দিতে টাউন হল মাঠে প্রবেশ করেন। বিকাল ৪টার পর পুরো সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
কুমিল্লায় হচ্ছে বিএনপির সাংগঠনিক বিভাগীয় অষ্টম সমাবেশ। এর আগে হয়েছে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, ফরিদপুর [সাংগঠনিক বিভাগ] ও সিলেটে।
ময়মনসিংহ ছাড়া প্রতিটি সমাবেশ ঘিরেই পরিবহন ধর্মঘট হয়েছে। ময়মনসিংহে সমাবেশ না হলেও গাড়ি চলেনি। ধর্মঘটের কারণে দলটির নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।
দলের নেতারা জানান, সাম্প্রতিককালে দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে তাদের গণসমাবেশের সময় হঠাৎ পরিবহন ধর্মঘটের ঘটনা ঘটায় আগাম প্রস্তুতি হিসেবে দুদিন আগ থেকেই কুমিল্লা নগরীতে আসতে শুরু করেন দলের অন্য জেলার এবং দূরের নেতা-কর্মীরা।
তবে শেষ পর্যন্ত পরিবহন ধর্মঘট না হওয়ায় তারা স্বস্তিতে রয়েছেন বলে জানান।
সমাবেশের একদিন আগেই কুমিল্লা নগরীতে লক্ষাধিক নেতা-কর্মী চলে এসেছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে নগরীর একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিভাগীয় সমাবেশকে উপলক্ষ করে গোটা কুমিল্লা উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে।
“আমাদের ধারণা ছিল অতীতের মতো কুমিল্লার সমাবেশেও সরকার পরিবহন ধর্মঘট করাবে। এ জন্য আমাদের দূরের নেতা-কর্মীরা দুই দিন আগেই কুমিল্লা চলে আসা শুরু করেন। সমাবেশের এখনও একদিন বাকি। তবে এরইমধ্যে কুমিল্লা নগরীতে লক্ষাধিক নেতাকর্মী চলে এসেছেন সমাবেশ সফল করতে। শনিবার হবে স্মরণকালের সেরা সমাবেশ; যাতে অংশ নেবে কয়েক লাখ মানুষ।”
শুক্রবার বিকালে সমাবেশস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে ভরে গেছে পুরো টাউন হল মাঠ; যেন সেখানে পা ফেলার জো নেই। মাঠের পশ্চিম-উত্তর কোণে মঞ্চ তৈরির কাজও এগিয়েছে অনেকদূর। শুক্রবার রাতের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার প্রত্যাশা মঞ্চ তৈরিতে নিয়োজিত কর্মীদের। ৭০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রস্থের মঞ্চ করা হচ্ছে মাঠে।
সন্ধ্যায় নগরীতে একের পর এক মিছিল করেন নেতা-কর্মীরা। মিছিলের শ্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে গোটা নগরী। সমাবেশস্থল এলাকা ছেড়ে গেছে দলের নেতা-কর্মীদের পোস্টার, ব্যানার আর ফেস্টুন। সমাবেশস্থল ও এর আশপাশে ব্যানার-ফেস্টুন লাগানোর জন্য কোনো জায়গা ফাঁকা দেখা যায়নি।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব জসীম উদ্দিন ও মহানগর বিএনপির আহবায়ক উৎবাতুল বারী আবু জানান, সমাবেশের আগের দিনই গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। এই জাগরণের তোপে সরকার ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হবেন। পরিবহন ধর্মঘটের আশঙ্কায় আগাম প্রস্তুতি হিসেবে বুধবার রাত থেকেই চলে এসেছেন নেতা-কর্মীরা।
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি এবং নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা ঘটনায় বিএনপির চলমান সাংগঠনিক বিভাগীয় গণসমাবেশের ধারাবাহিকতায় শনিবার কুমিল্লায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গণসমাবেশ।
কুমিল্লার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুর রশীদ ইয়াছিন জানান, শনিবার সকাল ১০টার পরই সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হবে; শেষ হবে বিকাল ৪টার মধ্যে। আগে চলে আসা নেতা-কর্মীদের থাকা-খাওয়াসহ যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে, গত আগে চলে আসা নেতা-কর্মীদের জন্য কুমিল্লায় বিবদমান দুই গ্রুপ, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর, পৃথকভাবে ভুরিভোজের ব্যবস্থা করেছে। এ দুই পক্ষের মধ্যে মাঠে রয়েছেন এক পক্ষের নেতৃত্ব দেওয়া দক্ষিণ জেলা আহ্বায়ক এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক আমিন উর রশিদ ইয়াছিন।
আরেক পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক দুইবারের মেয়র দল থেকে বহিষ্কৃত মনিরুল হক সাক্কু। গত ১৫ জুনের সিটি নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে অংশগ্রহণ করায় বিএনপি থেকে তাকে আজীবনের জন্য বহিস্কার করা হয়।
ইয়াছিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উৎবাতুল বারী আবু বলেন, এরই মধ্যে ১০টি গরু জবাই করা হয়েছে। নেতা-কর্মীরা অনেকে শহরে এসে পৌঁছে গেছেন। তাদের জন্য বিভিন্ন ওয়ার্ডে ক্যাম্প করা হয়েছে। আগে আসা নেতা-কর্মীদের জন্যই ভুরিভোজের এই আয়োজন। সম্মেলন পর্যন্ত এই আয়োজন অব্যাহত থাকবে। আরো যা লাগে গরু জবাই হবে। কুমিল্লায় হবে স্মরণকালের সেরা সমাবেশ।”
এদিকে, নগরীর নানুয়ার দিঘির পাড়ে অবস্থিত সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর বাসভবন এলাকায় ভিড় করেছেন দলের নেতা-কর্মীদের একটি অংশ।
বুধবার রাত থেকেই নেতা-কর্মীদের থাকা ও ভুরিভোজের আয়োজন করেছেন বহিষ্কৃত এই নেতা।
শুক্রবার সকাল ৯টায় কুমিল্লা টাউন হল মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মনিরুল হক সাক্কু মাঠের পূর্বপাশে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম মুক্তমঞ্চে নিজের অনুসারীদের নিয়ে অবস্থান করছেন। সেখানে সকালের নাস্তা হিসেবে খিচুড়ির প্যাকেট বিলি করছিলেন তিনি।
সাক্কু বলেন, “তিন হাজার প্যাকেট খিচুড়ি সকালে বিলি করেছি। জুমার নামাজের পরও এই মাঠে খাবার দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার রাত ৩টা পর্যন্ত এখানে ব্রাজিল ও সার্বিয়ার বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখেছি মাঠে। ইতোমধ্যে ২৫ হাজার নেতা-কর্মীর খাবারের ব্যবস্থা করেছি। যত নেতাকর্মী আসবে সবার ব্যবস্থা করা হবে। এনিয়ে কোনো চিন্তা নেই আমার। আমার কয়েক দফা রান্নার লোক আছে। সারাক্ষণ রান্না চলতেছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা যেন কোনো সমস্যায় না থাকে তার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিএনপি আমার প্রাণ।”
সাক্কু আরও বলেন, কুমিল্লায় সমাবেশের আগে ধর্মঘটে বন্ধ হয়ে যেতে পারে পরিবহন। এই আশঙ্কায় দলীয় নেতা-কর্মীরা যারা আগে আসবেন, তাদের থাকার জন্য নির্মাণাধীন ও নির্মিত ভবনে মোট ৭৮টি ফ্ল্যাট প্রস্তুত করেছিলেন তিনি।
“সেখানে বর্তমানে ৫ হাজারের বেশি নেতাকর্মী থাকছেন। আমার টার্গেট ৪০ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে সমাবেশস্থলে প্রবেশ করা।”
বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া বলেন, কুমিল্লায় স্মরণকালের সেরা সমাবেশ হতে যাচ্ছে। দাবিগুলো এখন আর বিএনপির দাবি নয়, দাবিগুলো গণমানুষের। এরই মধ্যে নেতা-কর্মীদের যে ঢল নেমেছে তাতে ইতোমধ্যেই টাউন হল মাঠ কানায় কানায় ভরে গেছে। জায়গা না পেয়ে অনেকে শহরের বিভিন্ন অলি-গলিতে অবস্থান নিয়েছেন। আগামীকাল শনিবার এই জনস্রোত আরও বৃদ্ধি পাবে।