মুন্সীগঞ্জে ড্রেজারের পানিতে ডুবল ৭ একর ফসলি জমি

কৃষকরা জানান, জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা না হলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা।

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2023, 04:33 PM
Updated : 23 March 2023, 04:33 PM

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় ড্রেজারের পানিতে তলিয়ে গেছে ৭ একর জমির ফসল। নির্মাণাধীন বিসিক ক্যামিকেল শিল্প পার্কে ফেলা বালুর সঙ্গে পানি এসে ওই জমির ফসল ডুবে যায় বলে এলাকাবাসী জানায়।

এতে চাষ করা ইরি-বোরো ধানের চারা, তিল, রসুন, সরিষা, পাটসহ বেশ কিছু ফসলের ক্ষতির মুখে পড়েছে। জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা না হলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বেন কৃষকরা।

এলাকাবাসী জানায়, ঢাকা-নবাবগঞ্জ সড়কের পাশে তুলসিখালীতে ৩০৮ দশমিক ৩৩ একর জমিতে `বিসিক ক্যামিকেল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক’ নির্মাণ করা হচ্ছে। এ জন্য প্রতি রাতে ড্রেজারের মাধ্যমে জমিতে বালু ভরাট করা হচ্ছে।

ড্রেজারের পাইপ দিয়ে বালুর সঙ্গে প্রচুর পানি আসে। রাস্তার পশ্চিম পাশের কামারখান্দা ও গোয়াল খালী মৌজায় একটি বক্স কালভার্টের নিচ দিয়ে সেই পানি ফসলী জামিতে গিয়ে জমছে।

পানি জমে থাকার বিষয়টি নিয়ে কৃষকরা বার বার পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো প্রতিকার না পাওয়ার অভিযোগ করেন তারা।

শেষে বক্স কালভার্টের নিচে একটি বাঁধ দিয়ে পানি আসা বন্ধ করে দেয় কৃষকরা।

এদিকে, বুধবার রাতে ড্রেজারের বালুর সঙ্গে প্রচুর পানি আসায় সেই বাঁধ ভেঙে পার্কের পশ্চিম পাশের ফসলি জমি তলিয়ে যায় বলে জানান অনেক কৃষক।

কৃষক বিনয় কুমার মণ্ডল জানান, তিনি ২ একর জমিতে ইরি ধানের চাষ করেছেন। গাছ কেবল বেড়ে উঠছিল। কিন্তু বুধবার রাতে বিসিকের ড্রেজারের পানিতে বাঁধ ভেঙে তার জমিসহ ৭ একর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বারবার বলছেন, এক খণ্ড জমিও খালি রাখা যাবে না। অথচ হাজার হাজার টাকা খরচ করে ধান চাষ করা জমিগুলো এভাবে পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ দিয়ে পানি নিষ্কাশন না করলে পুরো ফসল নষ্ট হয়ে যাবে।“

পার্ক কর্তৃপক্ষকে বার বার বলার পরও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে জানান বিনয় কুমার মণ্ডল।

বর্গাচাষী মো. আজাহার মিয়া বলেন, “২ একর জমি বর্গা নিয়ে ইরি, পাট, তিল ও রসুন চাষ করেছি। কিন্তু আজ সবই পানির নিচে। যদি ফসল নষ্ট হয়ে যায়; লাভ তো দূরের কথা, মহাজনের টাকাও দিতে পারব না?”

বিসিক ক্যামিকেল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের উপ সহকার প্রকৌশলী (প্রজেক্ট) কপিল চন্দ্র বাঢ়ৈ বলেন, “আমরা মাগুরা গ্রুপকে বালু ভরাটের দায়িত্ব দিয়েছি। তাদের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে, আশপাশের কোনো জমির যাতে ক্ষতি না হয়।

“বাঁধ ভাঙার বিষয়টি এরই মধ্যে আমাদের নজরে এসেছে; আমরা তাদের বলেছি, রাতের মধ্যে বাঁধ দিয়ে জমির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।”

পানির চাপে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কথা জানিয়ে মাগুরা গ্রুপের সাইড ইঞ্জিনিয়ার মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, “কিছু জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। আমরা তাদের বলেছি, টাকা দিয়ে দিবো; আপনারা বাঁধটি ঠিক করে নেন। কিন্তু তারা করেন নাই।

“এখন দ্রুত বাঁধ মেরামত করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে বলে জানান শরিফুল ইসলাম।