বরিশাল ২ আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহে আলমকে যুদ্ধাপরাধীর সন্তান দাবির বিরোধিতা করে এবার পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছে মুক্তিযোদ্ধাদের আরেকটি অংশ।
রোববার শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মকবুল হোসেন নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা।
আগের দিন গত শনিবার প্রেস ক্লাবেই বানারীপাড়া ও উজিরপুর উপজেলার ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা সংবাদ সম্মেলন করেন।
এতে বরিশাল ২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মো. শাহে আলমকে যুদ্ধাপরাধীর সন্তান দাবি করে তাকে আর নৌকার প্রার্থী হিসেবে দেখতে না চাওয়ার কথা বলেন তারা।
ওই দিনের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে একজন মুক্তিযোদ্ধা অভিযোগ করেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বরিশাল ২ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল তিনি আওয়ামী লীগের তালিকাভুক্ত যুদ্ধাপরাধী ডাক্তার সায়েদউদ্দিন তালুকদারের ছেলে শাহে আলম।
এতে ওই এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা হতবাক হলেও মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক নৌকার সম্মানে তারা শাহে আলমের পক্ষে কাজ করেন বলে মুক্তিযোদ্ধারা দাবি করেন।
অভিযোগের বিষয়ে সংসদ সদস্য মো. শাহে আলম কোনো মন্তব্য করতে রাজি না হলেও একটি মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনছেন বলে শনিবার দাবি করেন তিনি।
এদিকে, রোববার ওই এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের আরেকটি অংশের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মকবুল হোসেন দাবি করেন, “১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সারাদেশের মতো বানারীপাড়ায়ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর যখন অবর্ণনীয় অত্যাচার এবং নির্যাতন নেমে আসে, তখন তরুণ ছাত্রনেতা মো. শাহে আলমের নেতৃত্বে অন্যায়ের প্রতিবাদে আমরা (মুক্তিযোদ্ধারা) রাজপথে নেমেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শ্রেষ্ঠ সন্তান শাহে আলম নিজের যোগ্যতায় বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের প্রাণপুরুষ হয়ে উঠেন দাবি করে বলেন, “তিনি (শাহে আলম) ১৯৯০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসু নির্বাচনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে ভিপি পদে নির্বাচন করেন।
“১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি স্কুল জীবন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পর্যন্ত ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন।”
লিখিত বক্তব্যে মকবুল হোসেন আরও বলেন, “বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠায় অনবদ্য ভূমিকা পালন করায় এমপি শাহ আলম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছে। একাদশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।”
রাজনৈতিক মধ্যস্বত্বভোগীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হলে সংসদ সদস্য শাহে আলমের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয় দাবি করে মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, শাহে আলমের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি বিশেষের প্ররোচনায় করা হয়েছে।
শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে বরিশাল ২ আসনের দলীয় প্রার্থী হতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা থাকার বিষয়টিও এড়িয়ে যাওয়া যায় না বলে লিখিত বক্তব্যে দাবি করা হয়েছে।
এতে আরও দাবি করা হয়, ষড়যন্ত্র করে সংসদ সদস্য শাহে আলমকে বঞ্চিত করা হলে জনপ্রিয়তাহীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনীত হলে পরাজিত সহজ হবে। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরের লুটেরা, লম্পট, ভূমিদস্যুরা পুনরায় দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য ফিরে পাবে।
যেকোনো পরিস্থিতিতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে সংসদ সদস্য শাহে আলম উপযুক্ত প্রার্থী হিসেবে দাবি করেন মুক্তিযোদ্ধারা।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, বাংলাদেশ সরকারের যুদ্ধাপরাধীর তালিকা ভুলও হতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংসদ সদস্য মো. শাহে আলমের বাবা একজন ব্যবসায়ী ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে একেএম ইউসুফ আলী, আবুল বাশার সিকদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হারুন অর রশিদ, জগন্নাথ দে ও আব্দুর রাজ্জাকসহ বানারীপাড়া ও উজিরপুরের অর্ধশত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
যদিও উজিরপুর থেকে আসা বজলুর রহমান, মুনসুর আলী ও ফরিদউদ্দিনসহ একাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধার দাবি, তারা সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে আগে থেকে কিছু জানতেন না। তাদের খবর দিয়ে এনে সংবাদ সম্মেলনে বসানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য প্রার্থী নিয়ে যা হচ্ছে তারা এর কোনো পক্ষে নেই।
আরও পড়ুন: