“এখন যদি কেউ আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করে সেইটা তার বা তাদের ব্যাপার, এই ব্যাপারে আমি কোন মন্তব্য করবো না।”
Published : 04 Apr 2024, 10:02 PM
নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় শহীদ জিয়া হল মিলনায়তনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল রাতের আঁধারে ভেঙে ফেলা হয়েছে।
বুধবার গভীর রাতে ম্যুরালটি ভেঙে ফেলা হয় বলে মিলনায়তনটির তদারকির দায়িত্বে থাকা আরিফুর রহমান জানান।
এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানকে দুষছেন বিএনপির নেতারা। যদিও, এই অভিযোগকে পাত্তা দিচ্ছেন না এ সংসদ সদস্য।
ম্যুরালটি ভেঙে ফেলার খবরে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে যান মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান, সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার প্রধানসহ কয়েকজন নেতা।
সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সম্মানে ১৯৮১ সালে এই মিলনায়তনটিকে শহীদ জিয়া হল হিসেবে নামকরণ করা হয়। তার ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়েছে। মিলনায়তনটি জেলা প্রশাসনের অধীনে থাকায় প্রথমে আমরা ডিসির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি; তারা বলেছেন ম্যুরাল ভাঙার বিষয়ে তাদের কোনো নির্দেশনা নেই।
“সম্প্রতি জিয়া হল ভেঙে আরেকটি ভবন করার প্রস্তাব দিয়ে সংসদে বক্তব্য রেখেছিলেন শামীম ওসমান। আজকের এ ঘটনার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, এটা সরকারি দলের নীল নকশার মাধ্যমে শহীদ জিয়ার এ ম্যুরাল ভেঙে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা।’
ম্যুরাল ভাঙার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পুনরায় ম্যুরালটি স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।অন্যথায় আন্দোলনের দিকে এগোবেন বলে হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন সাখাওয়াত।
সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান বলছেন, “আমরা দেখেছি
সংসদে দাঁড়িয়ে শামীম ওসমান জিয়া হল ভাঙার কথা বলেছেন। রাতের অন্ধকারে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে এ ম্যুরাল ভেঙে প্রমাণ করেছেন তিনি আসলে প্রতিহিংসাপরায়ণ একজন রাজনীতিবিদ।
“তিনি শান্তিপূর্ণ কাজ করতে পারেন না। নারায়ণগঞ্জে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করতে এই কাজটি করেছেন তিনি।”
দিনের বেলায় জিয়া হল মিলনায়তনের চাবি থাকে ফলবিক্রেতা আরিফুর রহমানের কাছে।তার বাবা লুৎফর রহমান এই হলের দেখভাল করতেন। সাতমাস আগে তার মৃত্যুর পর থেকে আরিফুরই তদারকি করছেন।
আরিফুর বলেন, “বুধবার রাতে বাসায় যাওয়ার সময়ও বিল্ডিংয়ের উপরে ম্যুরালটি দেখেছি। সকালে এসে দেখি নেই। চাবি খুলে উপরে গিয়ে দেখি ম্যুরালটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভাঙা অবস্থায় সেটি ছাদের ওপর পড়ে আছে।”
ভবনটি জরাজীর্ণ ছিল জানিয়ে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, “এটি ভেঙে ফেলার পরিকল্পনাও ছিল।তবে এখনও এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কে বা কারা ম্যুরালটি ভেঙে ফেলেছে, তা তদন্তের জন্য পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।“
বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা ঘোষণার সঙ্গে স্মৃতিবিজড়িত নারায়ণগঞ্জের জিয়া হলের জায়গায় নতুন ভবন নির্মাণ করে সেটিকে ‘৬ দফা ভবন’ করার দাবি জানিয়েছেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান।
চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদের অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে এক সম্পূরক প্রশ্নে শামীম ওসমান এই দাবি জানান। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
ম্যুরালটি ভাঙার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, “আমি শুনেছি। ম্যুরালটি ভাঙা হয়েছে কিংবা ভেঙে পড়েছে-দুইটার একটা হতে পারে। কেননা ২০১৪ সালে ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল।
“এখন যদি কেউ আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করে সেইটা তার বা তাদের ব্যাপার, এই ব্যাপারে আমি কোন মন্তব্য করবো না।”
তিনি বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, জিয়াউর রহমানের শাসনামল অবৈধ। আইন অনুযায়ী তো, তার ম্যুরাল বাংলাদেশের কোথাও থাকার কথা না। যদিও এইটা সরকারি ব্যাপার।”