টানা ৩২ দিন ধরে চলা এই দাবদাহ আরো কয়েক দিন কিছু এলাকায় স্থায়ী হলেও বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টির আভাস দিয়ে রেখেছে আবহাওয়া অফিস।
Published : 01 May 2024, 05:15 PM
দেশজুড়ে টানা তাপপ্রবাহের মধ্যে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সামান্য কমেছে; বৃষ্টির পূর্বাভাসের পাশাপাশিআগামী দুই দিনে তা আরও কমার সুসংবাদ দিচ্ছে আবহাওয়া অফিস।
তপ্তবৈশাখে দাবদাহেররেকর্ডের অবসান ঘটিয়ে বৃষ্টি আসবে এমন আভাস আগে থেকে জানান দিচ্ছিল আবহাওয়া অফিস। বুধবার দিনের সবশেষ বুলেটিনে সেই আভাসআরও জোরালা হয়েছে।
সন্ধ্যা৬টা থেকেপরবর্তী ২৪ ঘন্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে।
এতে বলা হয়, যশোর, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা ও রাজশাহীর উপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও খুলনা বিভাগের বাকি অংশের উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।আর দেশের অন্যান্য এলাকায় মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বইছে। কিছু জায়গা থেকে তা প্রশমিত হতে পারে।
দেশের পশ্চিমাঞ্চলের দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং অন্যান্য এলাকায় ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমতে পারে। তবে সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরের দিন শুক্রবারেও তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি কমতে পারে বলে বুলেটিনে বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বুধবার যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছে। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি।
টানা দাবদাহের মধ্যে মঙ্গলবার দেশের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় যশোরে। চুয়াডাঙ্গায় থার্মোমিটারের পারদ ওঠে ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলিসিয়াসে।
এর আগে ১৯৮৯ সালের ২১ এপ্রিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল বগুড়ায়।আর স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল, যা বাংলাদেশের নথিভুক্ত ইতিহাসের সর্বোচ্চ।
চলতি মৌসুমে ৩১ মার্চ থেকে তাপপ্রবাহ শুরু হয়। টানা ৩২ দিন ধরে চলা এই দাবদাহ আরো কয়েক দিন কিছু এলাকায় স্থায়ী হলেও বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টির আভাস দিয়ে রেখেছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান খান বুধবার অধিদপ্তরে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, "বৃহস্পতিবার থেকে অনেক জায়গার তাপমাত্রা কমে আসার সম্ভাবনা আছে৷ ময়মনসিংহ বিভাগ, সিলেট বিভাগ, ঢাকা বিভাগ এবং কুমিল্লা অঞ্চলে বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টি শুরু হবে বৃহস্পতিবার৷ তবে দেশের উত্তর-পশ্চিম ও পশ্চিমের জেলাগুলোর তাপমাত্রা শুক্রবার পর্যন্ত আগের মতই থাকবে।
"যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী এসব এলাকায় আরও দুয়েকদিন পর বৃষ্টি হবে৷ ৩/৪ তারিখের পর সারাদেশেই বৃষ্টি হবে৷ তবে জলীয়বাষ্পের কারণে অস্বস্তি ভাবটা থেকে যাবে। তারপরও সহনশীলতায় চলে আসবে৷"
৫/৬ দিনের বৃষ্টিপাতের পর দেশের তাপমাত্রা আবার বাড়তির দিকে যাবে বলে জানান এই আবহাওয়াবিদ।
বাতাসে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে বলা হয় মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। আর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির উপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এর আগে ২০১৪ সালে ৫ থেকে ৩০ এপ্রিল টানা ২৬ দিন তাপপ্রবাহ ছিল। ২০১৬ সালে ৬-৩০ এপ্রিল টানা ২৫ দিন তাপপ্রবাহ ছিল। ২০২৩ সালে ১৩ এপ্রিল থেকে ৫ মে টানা ২৩ দিন তাপপ্রবাহ বয়ে যায়।
এবার তাপপ্রবাহের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
এর কারণ জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সবসময়ই এসব এলাকায় তাপমাত্রা বেশি আসে, বহু আগে থেকেই হয়ে আসছে। কারণ এই এলাকাগুলো ভারতের বিহার, পশ্চিমবঙ্গের পাশে। ওইসব এলাকায় ৪৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা উঠেছে গতকাল, সেটার আঁচ এসেই পড়ে এখানে।”
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, শেষ তিন দশকে বাংলাদেশের আবহাওয়া আগের তুলনায় উষ্ণ হয়ে উঠেছে। বৃষ্টিপাত ও শীতের দিন কমছে, বছরের বড় অংশজুড়ে গরমের বিস্তার বাড়ছে। গড় তাপমাত্রা বেড়ে এপ্রিল মাস আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, এসময় জলীয়বাষ্প পুঞ্জীভূত না হয়ে অন্যদিকে চলে যাওয়ার ফলে দেশে গরম বেশি পড়ছে।
“বৃষ্টি হতে হলে জলীয়বাষ্পটা থাকতে হবে, সেটা বাংলাদেশের উপর ছিল না। যে পরিমাণ জলীয়বাষ্প আসছে, সেটা উপরে চলে গেছে, সেটা হিমালয়ের আরও উত্তরে বিশেষ করে চায়না এসব দিকে পূঞ্জীভূত হয়ে বৃষ্টি হয়েছে। সে কারণে এতদিন দেশে বৃষ্টি হয়নি।”
উষ্ণতম মাস এপ্রিল শেষে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে ‘আকস্মিক বন্যার’ আভাস এসেছে।
মঙ্গলবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে বলা হয়, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ ও উজানের মেঘনা অববাহিকায় ২৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে। তাতে দেশে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীগুলোর পানি বাড়তে পারে।
এসময় সিলেট অঞ্চলের সুরমা নদীর কানাইঘাট, লুভাছড়া নদীর লুভাছড়া, সারিগোয়াইন নদীর সারিঘাট ও গোয়াইনঘাট পয়েন্টে অল্প সময়ের জন্য পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।