স্লোভাকিয়ায় বিরল এ রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় আটক এক; বিস্ময় প্রকাশ করে নিন্দা বিশ্ব নেতাদের।
Published : 16 May 2024, 12:36 AM
স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকোকে গুলি করা হয়েছে; গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
বুধবার সরকারি একটি বৈঠকে যোগ দিতে ৫৯ বছর বয়সী ফিকো স্লোভাকিয়ার মধ্যাঞ্চলের নগরী হ্যান্ডলোভা গেলে সেখানে এ ঘটনা ঘটে বলে দেশটির সরকারি কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে।
অজ্ঞাত বন্দুকধারী তাকে পাঁচবার গুলি করে। তার পেটে, হাতে ও পায়ে গুলি লেগেছে বলে বিবিসি জানায়।
গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে নগরীর একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখান থেকে জরুরি চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে করে বানস্কা বাইস্ত্রিকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট কালিঙ্কের বরাতে বিবিসি বলছে, সাড়ে তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অস্ত্রোপচার চলেছে প্রধানমন্ত্রীর। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এদিকে স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা। হামলার পরই ঘটনাস্থল থেকেই আততায়ী সন্দেহে একজন আটক হয়েছে। হামলার উদ্দেশ্য কী তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট জানা যায়নি।
প্রধানমন্ত্রী গুলিবিদ্ধ হওয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য পার্লামেন্টের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
নেটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যদেশ স্লোভাকিয়ায় রাজনৈতিক সহিংসতার ইতিহাস কম। সেখানে এমন হামলার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে এর নিন্দা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ ইইউ এর দেশগুলোর নেতারাও।
বাইডেন এ হামলাকে ‘ভয়াবহ সহিংস কাণ্ড’ বলে নিন্দা করেছেন। মার্কিন দূতাবাস স্লোভাকিয়া সরকারের পাশে আছে এবং সহায়তা করতে প্রস্তুত বলে জানান তিনি।
ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মাইকেল বলেছেন, এ ধরনের হামলা কিংবা সহিংসতার কোনও যৌক্তিকতা নেই।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ এক্সে এক পোস্টে হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে রবার্ট ফিকোর পরিবার এবং স্লোভাকিয়ার জনগণের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন, এই কাপুরুষোচিত হামলায় তিনি অত্যন্ত মর্মাহত। তিনি সব ধরনের সহিংসতা এবং গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার ওপর আক্রমণের কড়া নিন্দা জানান।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন এ হামলাকে ‘দানবীয় এক অপরাধ’ আখ্যা দিয়েছেন। ওদিকে, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসও স্লোভাক প্রধানমন্ত্রীর ওপর বুধবারের হামলার কড়া নিন্দা করেছেন বলে জানিয়েছেন তার মুখপাত্র।
বুধবার স্লোভাকিয়ার হ্যান্ডলোভা শহরে একটি সাংস্কৃতিক কমিউনিটি সেন্টারের সামনে প্রধানমন্ত্রী ফিকোর ওপর এ হামলা হয়। সেখানে সরকারি এক বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সেখান তাকে দেখার জন্য তার দলের অসংখ্য নেতাকর্মী একত্রিত হয়েছিলেন।
বৈঠক শেষে ফিকো যখন সমবেতদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়ছিলেন, তখনই তাকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। গুলি লেগেছে তার পেটে,বাহুতে এবং পায়ে। তার শারীরিক অবস্থা সংকটজনক বলে জানানো হয়েছে খবরে।
হামলার পর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের বাইরে বেশ কিছু মানুষ হামলাকারীকে ধরতে ছুটে যাচ্ছে। পুলিশকে এক ব্যক্তিকে মাটিতে চেপে ধরতে দেখার কথা জানান রয়টার্সের এক প্রত্যক্ষদর্শী।
স্লোভাক নিউজ মেডিয়ায় বলা হয়েছে, হামলাকারী একটি শপিংমলের সাবেক এক নিরাপত্তারক্ষী। তিনি স্লোভাক লেখক সোসাইটির একজন সদস্যও। এই ব্যক্তির কাছে লাইসেন্স করা বন্দুক ছিল বলে একটি পত্রিকাকে জানিয়েছেন তার ছেলে।
প্রধানমন্ত্রীর ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জুজানা কাপুতোবা। স্লোভাকিয়ায় মাটিতে এমন সহিংসতার কোনও স্থান নেই বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তিনি। একইসঙ্গে তিনি ফিকোর দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
বিবিসি জানায়, গতবছর অক্টোবরে ফিকো চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ক্ষমতায় ফেরেন। তিনি রুশপন্থি নেতা হিসেবে পরিচিত।
বেশিমাত্রায় রুশপন্থি দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়ার কারণে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিকোর প্রথম কয়েক মাস রাজনৈতিকভাবে খুবই বিতর্কিত ছিল।
তিনি ইউক্রেইনে সামরিক সহায়তা বন্ধ করার পাশাপাশি গত মাসে সরকারি সম্প্রচারকেন্দ্র আরটিভিএস বাতিলেরও পরিকল্পনা করেন।
তার দল নির্বাচনের সময় যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী প্রচার চালিয়েছিল বলেও জানা গেছে। ফিকোর শাসনামলে স্লোভাকিয়ায় পশ্চিমাপন্থি নীতির পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে করেন কোনও কোনও বিশ্লেষক।
ফিকো সরকারের নীতির বিরোধিতা করে স্লোভাকিয়ায় বিক্ষোভ-সমাবেশও হতে দেখা গেছে। দেশটি বেশকিছুদিন থেকেই রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
বুধবারও স্লোভাকিয়ার সবচেয়ে বড় বিরোধীদল প্রগ্রেসিভ স্লোভাকিয়ার একটি বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল। তবে প্রধানমন্ত্রীর ওপর হামলার ঘটনার পর এই কর্মসূচি মুলতবি করা হয়।