পানামা সফর করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ চীনের প্রভাব থেকে পানামা খাল ফিরিয়ে আনার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
Published : 09 Apr 2025, 10:17 PM
পানামা খাল চীনের প্রভাবমুক্ত করতে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পানামা সফর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। দেশটির সরকারের সঙ্গে বৈঠকের পরই চীনের প্রভাব থেকে পানামা খাল ফিরিয়ে আনার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি।
কয়েক দশকের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কোনও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এটিই প্রথম পানামা সফর। বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ জলপথে চীনের প্রভাব এবং পানামা খাল নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর পানামার নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা আরও নিবিড় করার অঙ্গীকার করেন হেগসেথ।
তিনি বলেন, ‘‘পানামা খাল চীন তৈরি করেনি। তারা এ খাল পরিচালনাও করে না। চীনকে এই খাল অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না। আমরা একসঙ্গে চীনের প্রভাব থেকে পানামা খাল ফিরিয়ে আনব। আমরা খালটিকে নিরাপদ এবং সব দেশের জন্য সহজলভ্য রাখব।”
বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত জলপথ পানামা খাল দিয়ে বছরে ২৭০ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য পরিবহন হয় যুক্তরাষ্ট্রের, যা খালে দৈনিক চলাচল করা জাহাজের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পরই পানামা খাল দিয়ে চলাচল করা যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজ থেকে অন্যায় ভাবে অর্থ আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। খালটিতে চীন ‘প্রভাব’ বাড়ানোর চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি।
এক শতাব্দীরও বেশি সময় আগে খালটি মূলত খনন করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তাদের হাতেই পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ ছিল। পরে ১৯৯৯ সালে পানামার হাতে পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ তুলে দেয় ওয়াশিংটন। ট্রাম্প বারবারই সেই সিদ্ধান্তকে ‘খারাপ চুক্তি’ বলে সমালোচনা করে আসছেন।
দ্বিতীয় বার যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসার পরই পানামা খাল নিয়ে সরব হয়েছেন ট্রাম্প। তিনি খালটি ফিরিয়ে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কয়েকবার। এমনকি পানামা খাল ফিরিয়ি নিতে সামরিক শক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনাও তিনি নাকচ করেননি।
ট্রাম্পের এই কঠোর অবস্থানের মধ্যেই মঙ্গলবার মার্কিন প্রতিরক্ষাসচিব হেগসেথ পানামা সফর করলেন। একটি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারে করে তিনি খালটির ওপর দিয়ে উড়ে যান এবং পানামার নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে যৌথ মহড়ায় অংশ নেন। মিরাফ্লোরেস লক-এ গিয়েও একটি কনটেইনার জাহাজে থাকা নাবিকদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়েন তিনি।
ট্রাম্পের আগ্রাসী অবস্থানের প্রেক্ষাপটে হেগসেথের ভাষা অবশ্য ছিল কিছুটা পরিমিত—চীনের বিরুদ্ধে কঠোর হলেও পানামাবাসীদের প্রতি কিছুটা আশ্বাসমূলক। ট্রাম্প যেখানে সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা নাকচ করেননি, সেখানে হেগসেথ কূটনৈতিকভাবে চীনা প্রভাব দূর করার ওপর জোর দেন।
এর আগে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে খালের নিরাপত্তায় সামরিক বিকল্পগুলো পর্যালোচনার অনুরোধ করা হয়েছিল। পানামা খালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সামরিক বিকল্প খতিয়ে দেখতে এরই মধ্যে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
যুক্তরাষ্ট্রে পানামা খাল নিয়ে জনমত সবসময় ইতিবাচক না হলেও, পানামার প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনোর সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক মজবুত হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
গত ফেব্রয়ারিতে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল পানামার মুলিনোর সরকার। পাশাপাশি দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আগত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণেও যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করছে পানামা।
চীনের প্রভাবকে হুমকি হিসেবে ব্যাখ্যা করে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ বলেছেন, “বাস্তবেই হোক বা ধারণাগতভাবে, চীন এই খালের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়—আর আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট: এটা আমাদের চোখের সামনে ঘটতে দেওয়া হবে না।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভবিষ্যতে এশিয়ায় কোনও যুদ্ধ হলে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজের জন্য এই খাল হবে কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।