টেসলা গাড়ি কোম্পানি নিয়ে ট্রাম্পের শীর্ষ বাণিজ্য উপদেষ্টার এক মন্তব্যর জবাবে তাকে 'মূর্খ' ও ‘নির্বোধ’ বলে কটাক্ষ করেছেন ইলন মাস্ক।
Published : 09 Apr 2025, 09:12 PM
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের আগ্রাসী শুল্কনীতি নিয়ে তার শীর্ষ এক বাণিজ্য উপদষ্টার সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও মার্কিন সরকারি কর্মদক্ষতা বিভাগ (ডিওজিই) প্রধান ইলন মাস্ক।
ট্রাম্পের শীর্ষ বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারোকে 'মূর্খ' ও ‘নির্বোধ’ বলে কটাক্ষ করেছেন মাস্ক। স্যোশাল মিডিয়া প্লাটফর্ম এক্সে এক পোস্টে নাভারোর বুদ্ধিমত্তা এক বস্তা ইটের সঙ্গেও তুলনার যোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এর আগে সোমবার সিএনবিসি-তে এক সাক্ষাৎকারে ইলন মাস্ককে এক হাত নিয়েছিলেন নাভারো। তিনি বলেছিলেন, টেসলা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী মাস্ক কোনও গাড়ি উৎপাদনকারী নন, বরং তিনি অনেক ক্ষেত্রেই যন্ত্রাংশ জোগাড় করে সেগুলো জুড়ে দিয়ে (অ্যাসেম্বল) গাড়ি বানান।
টেক্সাস রাজ্যে মাস্কের টেসলা গাড়ি কারখানায় কিছু বৈদ্যুতিক গাড়ির ইঞ্জিনে জাপান ও চীন থেকে আসা ব্যাটারি এবং তাইওয়ান থেকে আমদানি করা অন্যান্য যন্ত্রাংশ জুড়ে দেওয়া হয় বলে জানান নাভারো।
ট্রাম্পের ঢালাও শুল্ক নীতির পরিপ্রেক্ষিতে নাভারোর ওই সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। সেখানেই তিনি একথা জানিয়ে বলেছিলেন, বিদেশ থেকে যন্ত্রাংশ কেনা অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তায় হুমকিস্বরুপ। ইলন মাস্ক সস্তায় বিদেশি যন্ত্রাংশ চাইলেও তারা চান সেগুলো দেশ থেকেই কেনা হোক।
গাড়ির যন্ত্রাংশ ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি হবে- এমনটি দেখতে চান বলেও নাভারো মন্তব্য করেছিলেন।
নাভারোর সেইসব কথার প্রতিক্রিয়া জানিয়েই মাস্ক এবার পাল্টা কটাক্ষ করলেন। এক্সের পোস্টে মাস্ক বলেন, “তিনি (নাভারো) টেসলা নিয়ে যা বলেছেন, তা একেবারেই মিথ্যা।”
মাস্ক জানান, অন্য যে কোনও প্রতিষ্ঠানের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে টেসলা নির্মিত গাড়ির সংখ্যা বেশি। তাছাড়া, টেসলার বেশিরভাগ যন্ত্রাংশও যে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি হয়, সেটির প্রমাণস্বরূপ একটি লিংকও পোস্ট করেন তিনি। এক্সে আরেক পোস্টে মাস্ক বলেন, “নাভারো এক বস্তা ইটের চেয়েও বেশি নির্বোধ।”
ইলন মাস্ক নিজেও জড়িয়ে আছেন ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে। সরকারের খরচ কমানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করছেন তিনি। সেই মাস্কের সঙ্গে ট্রাম্পের বাণিজ্য শিবিরের মতবিরোধের এটাই সবচেয়ে প্রকাশ্য লক্ষণ।
নাভারো ও মাস্কের এই বিবাদকে মঙ্গলবার হালকা করার চেষ্টা করেছেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “স্পষ্টতই দুইজন দুই আলাদা মানুষ এবং বাণিজ্য ও শুল্ক নিয়ে দুইজনের মতও ভিন্ন। ছেলেরা ছেলেদের মতোই আচরণ করবে। আর তাদের (মাস্ক-নাভারো) এই বিবাদে আমরা বাধ সাধব না।”
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের পণ্যে শুল্ক আরোপকে মার্কিন পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও এই খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির একটি উপায় হিসেবেই দেখছেন। ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা নাভারো সিএনবিসি’র সঙ্গে সাক্ষাৎকারে শুল্কের পক্ষে এই যুক্তিই দিয়েছেন।
কিন্তু ট্রাম্পের পারস্পরিক শুল্কারোপ নীতি নিয়ে অনেক আগে থেকেই উদ্বিগ্ন ইলন মাস্কের কোম্পানি টেসলা। কারণ এই শুল্ক নীতির জেরে বিশ্বের বৃহত্তম এই অটোমোবাইল কোম্পানি ক্ষতির ঝুঁকিতে আছে।
ট্রাম্পের অন্য সব নীতিতে সমর্থন জানালেও, শুল্ক-যুদ্ধ নিয়ে মাস্ক তার আপত্তির কথা এরই মধ্যে প্রকাশ করেছেন। বিবিসি জানায়, গত ২৭ মার্চ এক্সে এক পোস্টে মাস্ক লিখেছিলেন,শুল্কের বিঘ্ন থেকে তার কোম্পানিও রেহাই পাবে না।
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বন্ধুরাষ্ট্রের সঙ্গেও শুল্ক যুদ্ধে নেমেছেন। একের পর এক বিদেশি পণ্য়ের উপর মোটা শুল্ক চাপিয়ে গোটা বিশ্বে অর্থনীতি তোলপাড় করছেন তিনি।
ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত আমদানি শুল্ক বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাজারে ধস নামিয়েছে। এতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে মার্কিনিদেরও।