ডনাল্ড লুর দুই দিনের কর্মকাণ্ড দেখে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক এম হুমায়ুন কবিরের ভাষ্য: যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকারের পরিবর্তন হয়েছে, অবস্থানের নয়।
Published : 16 May 2024, 12:25 AM
প্রথমে মানবাধিকার প্রশ্নে এলিট ফোর্স র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, এরপর বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভিন্নমুখী অবস্থান ঘিরে টানাপড়েন পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলছে দুই দেশ।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লুর ঢাকা সফরের দ্বিতীয় দিন বুধবার দুদেশের তরফেই এমন ইতিবাচক বক্তব্য এসেছে।
সরকারি পর্যায়ে দুটি আলোচনায় যোগ দেওয়ার পর ডনাল্ড লু বলেছেন, নির্বাচন সামনে রেখে দুদেশের সম্পর্কে যে ‘উত্তেজনা’ তৈরি হয়েছিল, তা মিটিয়ে ‘আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠায়’ এই সফরে এসেছেন তিনি।
অন্যদিকে, নির্বাচন ঘিরে টানাপড়েনকে ‘তিক্ততা’ হিসেবে স্বীকার না করেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, “আমরা সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা করেছি।
“তবে আমরা উভয়পক্ষ আলোচনা করেছি যে, অতীতে কী ঘটেছে সেগুলো আমরা দেখতে চাই না। আমরা ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে চাই। এবং ভবিষ্যতে সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করতে চাই।”
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর প্রথম সফরে মঙ্গলবার ঢাকায় এসেছেন এ অঞ্চলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তা ডনাল্ড লু।
সফরের প্রথম দিন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক এবং আমেরিকান ক্লাবে তারকা শেফ রহিমা সুলতানার সঙ্গে মিলে ফুচকা-ঝালমুড়ি বানিয়ে খেয়ে সংবাদের শিরোনাম হন লু এবং ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
এরপর রাতে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বাসায় নৈশভোজে অংশ নেয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল। সরকারের তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীও সেখানে যোগ দেন।
তিন দিনের এ সফরের দ্বিতীয় দিন সকালে সচিবালয়ে পরিবেশ, বন ও জ্বালানি পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেন লু।
দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যোগ দেয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল। এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আসেন তারা।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে ‘অবাধ, নিরপেক্ষ ও সহিংসতাহীন’ করার আহ্বান জানিয়ে বেশ তৎপরতা দেখিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচন সামনে রেখে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ছিল চোখে পড়ার মত।
এর মধ্যে গত বছর মে মাসে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র বলে, বাংলাদেশে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার ক্ষেত্রে যারা বাধা হবে, ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হবে তাদের। এরপর সেপ্টেম্বরে সেই নীতির প্রয়োগ শুরু হয়।
খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের এমন তৎপরতার সমালোচনা করে আসছিলেন। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাও রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য দিচ্ছিলেন।
বিএনপিসহ বেশ কিছু বিরোধী দলের বর্জনের মধ্যে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করল, তখনও ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে বক্তব্য দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এক বিবৃতিতে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলের হাজারো সদস্যদের গ্রেপ্তার ও নির্বাচনের অনিয়মের খবরে উদ্বিগ্ন। অন্যান্য পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র একমত যে, এই নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি এবং সব দল এতে অংশ না নেওয়ায় আমরা হতাশ।”
তবে, সরকার গঠনের পর ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা চিঠিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহের কথা বলেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বর র্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সাড়া মেলেনি। যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বলে আসছে, নিষেধাজ্ঞা ওঠানোর প্রক্রিয়া বেশ ‘জটিল’।
অতীত ভুলে সামনে তাকানোর মন্ত্রে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে যখন ডনাল্ড লু ঢাকা সফর করছেন, তার চারদিন আগে ঢাকা মিশনে নতুন রাষ্ট্রদূত পাঠানোর ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
২০২১ সালের জুলাই থেকে ঢাকায় দায়িত্ব পালন করে আসছেন পিটার হাস। তার উত্তরসূরি হিসাবে ডেভিড স্লেটন মিলকে মনোনয়ন দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। বর্তমানে চীনে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের উপপ্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন এই কূটনীতিক।
ডনাল্ড লুর সফরের আলোচনাগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অগ্রাধিকারের পরিবর্তন’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক এম হুমায়ুন কবির।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, “সামনের এগিয়ে যাওয়ার কথা বলা মানে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের পরিবর্তন হয়েছে তা কিন্তু নয়। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, শ্রম সংস্কার প্রভৃতি তারা বাদ দেয়নি; আজকেও বলেছে।
“তবে, তাদের অগ্রাধিকারের পরিবর্তন হয়েছে। অর্থনীতিকে তারা অগ্রাধিকার দিচ্ছে। অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। সেটা তারা অতীতে বলেছে, এখনও বলছে এবং ভবিষ্যতেও বলবে।”
ডনাল্ড লু ‘সামনে’ তাকাতে চান, পেছনে নয়’
নির্বাচন ঘিরে যে ‘উত্তেজনা’, সেটাকে পেছনে ফেলে দুই দেশের জনগণের মধ্যে ‘আস্থা পুনর্নির্মাণের’ চেষ্টা করাকে এবারের বাংলাদেশ সফরের উদ্দেশ্য হিসাবে বর্ণনা করেছেন ডনাল্ড লু।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে কয়েকবার ঢাকা সফরে এসেছিলেন তিনি; ‘অবাধ, নিরপেক্ষ ও সহিংসতাহীন’ ভোটের জন্য সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠিও পাঠিয়েছিলেন।
নির্বাচনের সময়ের টানাপোড়েনের বিষয় তুলে ধরে বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডনাল্ড লু বলেন, “সবাই জানেন, গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে অনেক উত্তেজনা ছিল। এখানে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সহিংসতাহীন নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র কঠোর পরিশ্রম করে। এর ফলে কিছু উত্তেজনা তৈরি হয়।”
এ উত্তেজনাকে সম্পর্কের (কূটনীতি) সাধারণ বিষয় হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, “আমরা সামনে তাকাতে চাই, পেছনে নয়।
“আমাদের সম্পর্ককে শক্তিশালী করার উপায় খুঁজতে চাই। আমাদের সম্পর্কের মধ্যে যেসব কঠিন বিষয় রয়েছে, সেগুলো নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে মন্ত্রীর (হাছান মাহমুদ) সঙ্গে কথা বলেছি।”
কঠিন বিষয় বলতে ‘র্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং শ্রম সংস্কার, মানবাধিকার ও ব্যবসায় পরিবেশের সংস্কার’ এর কথা বলেছেন এই মার্কিন সহকারী মন্ত্রী।
এসব ‘কঠিন বিষয়ে’ কাজ করার জন্য ইতিবাচক সহযোগিতার যেসব বিষয় রয়েছে, সেগুলো নিয়ে এগোতে চান তিনি।
লু বলেন, “নতুন বিনিয়োগ, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা এবং ক্লিন এনার্জির মতো ইস্যুতে সহযোগিতার বিষয়ে আমাদের আলোচনা এগিয়ে যাচ্ছে।”
দুর্নীতির বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে লু বলেন, “সরকারকে স্বচ্ছতা বজায় রেখে চলতে এবং দুর্নীতিতে জড়িত কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার ক্ষেত্র বাড়াতে আমাদের অনেক কিছু করার আছে।”
বাংলাদেশের করের আওতা বাড়ানোর বিষয়ে কাজ করার বিষয়েও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরেন যুক্তরাষ্ট্রের এই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে করের আওতা কীভাবে বাড়ানো যায়, যার ভিত্তিতে সব বাংলাদেশি তার ভাগের দেনাটা পরিশোধ করতে পারে, সে বিষয়ে সহযোগিতার জন্য সম্প্রতি আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মন্ত্রী।”
‘সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ফলপ্রসূ আলোচনা’
বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে এবং সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত করতে ডনাল্ড লুর সঙ্গে ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ আলোচনা হওয়ার কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চমবারের মত সরকার গঠনের পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। তার চিঠিতে দু'দেশের সম্পর্ককে উচ্চতর মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন।
“সেই অভিপ্রায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। এবং সে লক্ষ্যেই আমাদের সমস্ত আলোচনা হয়েছে।”
সম্পর্কের ‘তিক্ততা’ মিটেছে কি-না, এমন প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন, “আপনার ভাষায় হচ্ছে তিক্ততার সম্পর্ক। আমি সেটিকে সেভাবে দেখতে চাই না। কারণ বিভিন্ন দেশের নানা কনসার্ন থাকে, তারা তাদের কনসার্নগুলো ব্যক্ত করেছে। দেশে অত্যন্ত সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, ভোটার অংশগ্রহণ ৪২% ছিল। আওয়ামী লীগের অনেক প্রার্থী পরাজিত হয়েছে। এমনকি মন্ত্রীও পরাজিত হয়েছে।
“সুতরাং সে নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তারা আমাদের সম্পর্ককে বিস্তৃত-গভীর করতে চায়। আমরাও করতে চাই। এবং সে লক্ষ্য নিয়েই এই সফরে তিনি এসেছেন।”
বাণিজ্য-বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গ ধরে হাছান বলেন, “একক দেশ হিসেবে আমাদের রপ্তানির সবচেয়ে বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী দেশও যুক্তরাষ্ট্র।
“বাংলাদেশে নির্মিয়মাণ ৪০টি আইটি ভিলেজে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য ডনাল্ড লু-কে অনুরোধ জানিয়েছি। কিছু বিনিয়োগ এরইমধ্যে আছে, আরও যাতে বাড়ানো হয়। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে যাতে আরও বিনিয়োগ আসে, আমি তাকে সেটার অনুরোধ জানিয়েছি।”
‘সম্পর্কে প্রভাব ফেলেছিল র্যাবের নিষেধাজ্ঞা’
র্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর ২০২১ সালের নিষেধাজ্ঞা দুদেশের সম্পর্কে ‘প্রভাব ফেলেছিল’ বলে বুধবার মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, “সেটা নিয়ে আমাদের ফরেন অফিসের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার প্রক্রিয়াটা লম্বা ছিল, সেটা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়াটা একটু লম্বা।
“তবে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। এ নিয়ে এটুকু আলোচনা হয়েছে যে, নিষেধাজ্ঞা অতীতে আমাদের সম্পর্কে প্রভাব ফেলেছিল, এখন আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। তিনিও একমত হয়েছেন যে ‘আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই’।”
ভিসানীতি নিয়ে প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “ইউএস ভিসা পলিসি ইজ ডরম্যান্ট নাউ। সুতরাং এটা নিয়ে আলোচনা হয়নি।”
বাংলাদেশের পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “জিএসপি সুবিধা আমরা আগে পেতাম, এখন পাই না। সেটা তারা ফিরিয়ে দিতে চায়। সেজন্য আমাদের লেবার পলিসিটা একটু রিভিউ করতে হবে, যেটা আমরা রিভিউ করছি। সেটা নিয়ে গতকাল নৈশভোজের সময় আইনমন্ত্রীর সাথে তার (লু) বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।”
বৈদেশিক রিজার্ভ শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্র ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশন (ডিএফসি) থেকে বাংলাদেশকে অর্থায়ন করতে আগ্রহী বলেও জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রী।
তিনি বলেন, “একই সাথে আমাদের ট্যাক্স সিস্টেমকে আধুনিক করার জন্য আমাদের সহায়তা করতে চায়। আমাদের দেশে ২৫-২৭ লাখ লোক ট্যাক্স দেয়। অথচ ট্যাক্স দেওয়ার মত লোক আছে ১২ কোটির মত, কিন্তু ট্যাক্স দেয় না। কর ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক করা এবং একইসঙ্গে ট্যাক্স ফাঁকি রোধে ট্যাক্স কালেকশনের ক্ষেত্রে তারা আমাদের সহায়তা করতে চায়।”
বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা করার কথা জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, “তারা জানিয়েছেন, বিষয়টি মার্কিন বিচার বিভাগের আওতাভুক্ত। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য বিভাগগুলোর হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।
“কিন্তু তাদের বিচার বিভাগের সাথে বাংলাদেশ দূতাবাসের যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বিচার বিভাগের সম্মতি আনয়নের কাজ এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত আছে।”
ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “গাজায় শান্তি স্থাপন করার বিষয়টি আমরা আলোচনা করেছি। ডনাল্ড লু বলেছেন- 'যুক্তরাষ্ট্র সরকার, সেক্রেটারি অব স্টেট মিস্টার ব্লিঙ্কেন অক্লান্তভাবে কাজ করছেন, যাতে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়'।
“এবং তিনি আমাকে যেটুকু বলেছেন, তারা আশাবাদী। আমরা বলেছি, গাজায় যে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘঠিত হচ্ছে, নিরীহ শিশুদের, নারীদের হত্যা করা হচ্ছে। ৩৫ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, তার মধ্যে ৭০ শতাংশ নারী ও শিশু। এটি আসলে মেনে নেওয়া যায় না।”
হাছান মাহমুদ বলেন, “বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা যাতে আরো ব্যাপকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে যায়, ভালোভাবে পড়াশোনা করতে পারে সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সহায়তা করতে চায়। আমি প্রস্তাব দিয়েছি যে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে যেন তাদের এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম চালু করা হয়।”
কূটনীতির বাইরে
এবারের ঢাকা সফরে কূটনীতির ধরাবাঁধা সূচির সঙ্গে আনন্দঘন বিভিন্ন আয়োজনেও যোগ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী লু এবং তার সফরসঙ্গীরা। তাদের এসব কর্মসূচিকে ফলাও করেছে প্রচার করেছে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস।
সফরের প্রথম দিন মঙ্গলবার তারকা শেফ রহিমা সুলতানার সঙ্গে জোট বেঁধে ফুচকা আর ঝালমুড়ি বানিয়ে খান ডনাল্ড লু।
বুধবার সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তারকাদের সঙ্গে চায়ের আড্ডায় বসেন তিনি। ‘চা উইথ পিটার+ডন’ শীর্ষক এই আয়োজনে তার সঙ্গে ছিলেন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
তাদের ওই আড্ডার ছবি ফেইসবুকে প্রকাশ করে দূতাবাস লিখেছে, “বাংলাদেশের প্রভাবশালী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যক্তিত্ব এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে প্রাণবন্ত আলোচনায় যোগ দিতে পেরে আমরা উচ্ছ্বসিত।
“আপনি কূটনীতিতে যুক্ত হোন বা সামাজিক কাজে, কিংবা কোনো উৎসাহের খোঁজ করছেন- তাহলে ‘চা উইথ পিটার+ডন’ এর এই পর্বগুলো আপনার অবশ্যই দেখা উচিত।”
এরপর বিকালে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটার নাহিদা-নিগারদের সঙ্গে ক্রিকেটময় বিকেল কাটান ডনাল্ড লু এবং পিটার হাস। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশ দলকে শুভকামনা জানিয়ে বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সের ক্রিকেট মাঠে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের বিশেষ আয়োজনে যোগ দেন তারা।
কূটনীতির ধরাবাঁধা রীতির বাইরে এসব কর্মসূচিতে মার্কিন প্রতিনিধিদলের অংশগ্রহণের বিষয়ে এক প্রশ্নে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, “শুধু গুরুগম্ভীর না হয়ে হাসি-আনন্দ নিয়ে কাজ করে থাকে তারা। মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় নানাভাবে।
“অর্থনীতির বিচারে অত বড় না হলেও জনসংখ্যার হিসাবে বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চতুর্থ অবস্থানে, আবার ভৌগোলিক অবস্থানও কৌশলগত। সেজন্য বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গেও তাদের এমন নানান সম্পৃক্ততা রয়েছে।”