২০০৮ সালে তিনি বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ৭১ লাখ টাকার কিছু বেশি। এবার তা দেখিয়েছেন সোয়া আট কোটি টাকারও বেশি।
Published : 08 Dec 2023, 09:32 PM
মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের আয় গত ১৫ বছরে বেড়েছে ১১ গুণেরও বেশি।
২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে তার বার্ষিক আয় ছিল ৭০ লাখ টাকার কিছু বেশি। সেই আয় বেড়ে হয়েছে সোয়া আট কোটি টাকা।
আয়ের মতো একই হারে বেড়েছে অস্থাবর সম্পদও। তবে জায়গা জমির মতো স্থাবর সম্পদ একই আছে।
মানিকগঞ্জ-৩ (সদর) আসনে নৌকা নিয়ে এবার জাহিদ মালেকের পঞ্চম নির্বাচন। ২০০১ সালে তিনি হারলেও জিতেছেন পরের তিনবার।
তবে প্রথমবার যখন ভোট করেন, তখন নির্বাচন কমিশনে সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল না। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় থেকেই আটটি তথ্য দেওয়ার বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়।
এসব তথ্যের মধ্যে আছে শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা, নিজের ও স্বামী বা স্ত্রী এবং পরিবারের ওপর নির্ভরশীলের আয় ও সম্পদের হিসাব, ফৌজদারী মামলার তথ্য, অতীতে সাজা হয়েছিল কি না, ইত্যাদি।
যারা একাধিকবার নির্বাচন করেন, তাদের ক্ষেত্রে সম্পদের হিসাব তুলনার সুযোগও তৈরি হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। ২০০৮ সালে তিনি জমা দেওয়া হলফনামায় পেশা হিসেবে ‘ব্যবসা’ এবং সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ও বাংলাদেশ থাই অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেড এই দুটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান উল্লেখ করেছিলেন।
তবে সম্প্রতি তিনি সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি বিক্রি করে দিয়েছেন।
আয় বেড়ে কত
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট বা দোকান বা অন্যান্য ভাড়া, ব্যবসা, প্লট, কৃষি খামার শেয়ার, সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক আমানত, ডিভিডেন্ড এবং অন্যান্য (সংসদ সদস্যের সম্মানি ভাতা) বাবদ মন্ত্রীর বার্ষিক আয় বর্তমানে আট কোটি ২৯ লাখ ৯৭ হাজার ২৫ টাকা।
২০০৮ সালের নির্বাচনের হলফনামায় এই আয় দেখানো হয় ৭১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৯১ টাকা।
এই হিসেবে গত ১৫ বছরে তার বাৎসরিক আয় ১১ দশমিক ৬৩ গুণ বেড়ে হয়েছে ৭ কোটি ৫৮ লাখ ৬২ হাজার ৩৩৪ টাকা।
অস্থাবর সম্পদও বেড়েছে ১০ গুণ
অস্থাবর সম্পদও বেড়েছে আয়ের প্রায় সমান হারে।
এবারের হলফনামায় নগদ ৬৪ লাখ ১১ হাজার ৮৩৫ টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা ৬৭ হাজার ৯৯৬.৬২ (ইউএস ডলার) রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার জমা ১৫ কোটি ৫৭ লাখ ৯৯ হাজার ৪৬৮ টাকা। বন্ড ও ঋণপত্র, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার ও ব্যবসার মূলধন, ব্যক্তিগত ব্যবসার মূলধনসহ তার বিনিয়োগের পরিমাণ মোট ৪৯ কোটি ৪৭ লাখ ৭২ হাজার ৫৬ টাকা।
দুই কোটি ২৪ লাখ ৮৬ হাজার ৪৭৭ টাকার গাড়ি এবং অন্যান্য এক কোটি ৬৩ লাখ ১৩ হাজার ৪৭৮ টাকা মিলিয়ে হলফনামায় অস্থাবর সম্পদের মোট আর্থিক মূল্য দেখানো হয়েছে ৭০ কোটি ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬১ টাকা।
২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে জমা দেওয়া হলফনামায় অস্থাবর সম্পদ দেখানো হয় ৬ কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার ৫৭ টাকা।
এই হিসাবে গত ১৫ বছরে সম্পদের আর্থিক মূল্য বেড়েছে ৬৩ কোটি ৫৫ লাখ ১৩ হাজার ৬০৪ টাকা বা ১০ দশমিক ৩৭ গুণ।
স্থাবর সম্পদ বাড়েনি
২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামার তথ্য অনুযায়ী জাহিদ মালেকের নামে অকৃষি জমির পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৫ কাঠা এবং তার স্ত্রী সাবানা মালেকের নামে ২ দশমিক ৫ কাঠা জমির একটি প্লট ছিল।
এ ছাড়া ৫৩ দশমিক ৪ শতক জমিতে ১১ তলা আবাসিক বা বাণিজ্যিক ভবন এবং বাড়ি ছিল স্বাস্থ্যমন্ত্রীর, যার আর্থিক মূল্য ছিল তিন কোটি ৬১ লাখ ৬ হাজার ২২ টাকা।
এ ছাড়া যৌথ মালিকানায় ৪০ বিঘা কৃষি জমি ছিল।
এবারের হলফনামাতেও সম্পদের পরিমাণ একই দেখানো হয়েছে।
তবে স্ত্রীর নামে দুই দশমিক ৫ কাঠার ওই জমি এবার নির্ভরশীলদের নামে স্থানান্তর করা হয়েছে। যৌথ মালিকানার ৪০ বিঘা কৃষিজমিও এবার নির্ভরশীলদের নামে রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।
সম্পদ কমেছে স্ত্রীর
২০০৮ সালে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর স্ত্রী সাবানা মালেকের নামে ৩৯ লাখ ৮৬ হাজার ৩০০ টাকার বন্ড বা ঋণপত্র ছিল। এবারের হলফনামায় তা উল্লেখ নেই।
এই ১৫ বছরে সাবানার ৫ ভরি স্বর্ণ বেড়েছে।
২০০৮ সালে জাহিদ মালেকের ওপর নির্ভরশীলদের ২৫ ভরি স্বর্ণ থাকলেও এবারের হলফনামা তা উল্লেখ নেই। অর্থাৎ নির্ভরশীলদের ওই পরিমাণ স্বর্ণ কমেছে।
ঋণ বেড়েছে
এবারের হলফনামায় মার্কেন্টাইল এবং সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক থেকে সর্বমোট ১ কোটি ৭৩ লাখ ৭৭ হাজার ৭৯ টাকা ঋণের তথ্য উল্লেখ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামায় ঋণের পরিমাণ ছিল ২৩ লাখ ৫৩ হাজার ২৮০ টাকা।
অর্থাৎ গত ১৫ বছরে তার ঋণ বেড়েছে এক কোটি ৫০ লাখ ২৩ হাজার ৭৯৯ টাকার।