বগুড়ায় বাড়ছে সরিষার আবাদ, লক্ষ্য ভোজ্যতেলের আমদানি কমানো

কৃষক জানায়, সরিষা ও ভুট্টার চাষ বাড়ায় জেলায় আলুর আবাদ কমছে।

জিয়া শাহীনবগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Dec 2022, 10:36 AM
Updated : 5 Dec 2022, 10:36 AM

এ বছর বগুড়া জেলায় গত বছরের চেয়ে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে তৈল ফসল সরিষার আবাদ করেছেন চাষিরা; এজন্য তারা সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনা পেয়েছেন। 

কৃষি বিভাগ বলছে, সরিষার পাশাপাশি ভুট্টার আবাদও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে উত্তরের এই জেলায়।  

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গত বছর জেলায় সরিষার চাষ হয়েছিল ২৬ হাজার ৬১৭ হেক্টর জমিতে। এবার ৩৫ হাজারের বেশি হেক্টর জমিতে এরই মধ্যে চাষ হয়েছে। মৌসুমের আগামী দিনগুলোতে হয়তো আরও বাড়বে।  

ভোজ্যতেলের আমদানি কমানোর লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবেই দেশে সরিষার আবাদ বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। 

চলতি বছরের মধ্য অক্টোবরে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছিলেন, দেশের মোট ভোজ্যতেলের চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ এখন দেশে উৎপাদিত হয়। বাকি ৯০ শতাংশই আমদানি করা হয়। আমদানিতে ২ থেকে আড়াই বিলিয়ন ডলার খরচ হয়। 

এমন প্রেক্ষাপটে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আগামী তিন বছরে মোট চাহিদার ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ স্থানীয়ভাবে পূরণ করার লক্ষ্য নেওয়ার কথা জানান তিনি। 

কৃষি বিজ্ঞানীরা জানান, তুলনামূলক কম আয়ুষ্কালের ধানকে বেছে নিয়ে দুই ফসলের মাঝে তৈল ফসলের চাষ করা হবে। এজন্য এক ফসলি জমি, দুই ফসলি জমি ও লবণাক্ত এলাকার জমি বেছে নেওয়া হচ্ছে। তৈল ফসল হিসেবে সরিষা, তিল, বাদাম, সয়াবিন ও সূর্যমুখীকে বেছে নেওয়া হয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় বগুড়াতেও সরিষা চাষ বাড়ানোর দিকে নজর দিয়েছে কৃষি বিভাগ। 

এ ছাড়া গত বছর জেলায় ভুট্টার আবাদ হয়েছিল আট হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে। এ বছর নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত ১২ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। জানুয়ারি পর্যন্ত ভুট্টা চাষ চলবে। 

সরজমিনে ধুনট উপজেলার চিথুলিয়া এবং সারিয়াকান্দী উপজেলার বোহাইল গ্রামে দেখা যায়, মাঠে মাঠে এখন হলুদ-সবুজের আলপনা। কৃষক হলুদ সরিষা আর সবুজ ভুট্টার চাষ করেছেন পাশাপাশি। সরিষার ক্ষেতে বেড়েছে মৌমাছির আনাগোনা। 

ধুনট উপজেলার চিথুলিয়া গ্রামের কৃষক বাদশা মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত বছর তিনি এক বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছিলেন, এবার দুই বিঘা জমিতে চাষ করেছেন। সেচ, নিড়ানী ছাড়া সহজেই সরিষা চাষ করা যায়। বাজারে দামও বেশি। 

সরকার থেকে বীজ ও সার পেয়েছেন জানিয়ে এই কৃষক বলেন, “প্রতি মণ সরিষা তিন হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতি বিঘায় ছয় মণ পর্যন্ত সরিষা উৎপাদন হয়ে থাকে। তাই সরিষার চাষ বেশি করেছি।” 

সারিয়াকান্দী উপজেলার বোহাইল গ্রামের আজাদ মিয়া গত বছরের চেয়ে এবার বেশি জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন। 

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৫০ মণ পর্যন্ত ভুট্টা চাষ হয়। এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা মণপ্রতি বিক্রি করা যায়। চাহিদাও বেশি। জমি থেকেই পাইকাররা ভুট্টা কিনে নিয়ে যায়। তাই প্রতি বছর ভুট্টার চাষ বাড়ছে।” 

তিনি জানান, গত বছর তিন বিঘা জমিতে চাষ করলেও এবার সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন।  

কৃষকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, সরিষা ও ভুট্টার চাষ বাড়ায় জেলায় আলুর চাষ কমছে। তবে সরিষা চাষ বাড়ায় মধু সংগ্রহের পরিমাণ বেড়েছে; যাতে লাভবান হচ্ছে মধু ব্যবসায়ীরা।   

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. এনামুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরিষা এবং ভুট্টা দুটোর চাষই গতবারের দ্বিগুণ হবে বলে আশা করছি। সরকার পরিকল্পনা নিয়েছে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ভোজ্যতেলের আমদানি কমিয়ে আনবে। তেলের ক্ষেত্রে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার অংশ হিসেবেই সরিষার চাষ বাড়ানো হচ্ছে।  

“বিদেশ থেকে যেন ভোজ্যতেল আমদানি করতে না হয়। সে কারণে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সার, বীজ প্রণোদনা হিসেবে দিয়ে উৎসাহিত করা হয়েছে। কৃষকরাও কম খরচে অধিক লাভের সরিষা চাষে উৎসাহিত হচ্ছে।” 

এই কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, “আমদানিকৃত ভোজ্যতেল স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকারক। সরিষার তেল স্বাস্থ্যসম্মত। আগে তো দেশের মানুষ সরিষার তেলই ব্যবহার করতো। তখন এত অসুখ হয়নি।” 

ভুট্টা চাষ বাড়ানোর সরকারি পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে এনামুল হক আরও বলেন, “ভুট্টা এখন গমের বিকল্প। গমের চেয়ে ভুট্টা আরও পুষ্টিকর। এখন বাজারে যে আটা পাওয়া যাচ্ছে তার ৬০ শতাংশই ভুট্টার। আর বেকারির বিস্কুট, রুটি সবই হয় ভুট্টা থেকে।” 

“এ ছাড়া মাছ, মুরগির খাবার তৈরিতে ভুট্টা প্রয়োজন। তাই লাভজনক। কৃষকরা এ কারণে ভুট্টা চাষেও ঝুঁকছেন।” 

কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, “এবার ভুট্টা এবং সরিষার চাষের জন্য আলুর চাষ কমেছে। কারণ, আলুতে লাভ সরিষা এবং ভুট্টার চেয়ে কম।”