সড়ক সরু হয়ে পড়ায় মালেকের বাড়ি, গাজীপুরা, বোর্ড বাজারসহ কয়েকটি পয়েন্টেও যানজটের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
Published : 04 Apr 2024, 09:14 PM
রাজধানী থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের সাতটি ফ্লাইওভার খুলে দেওয়া হলেও এ পথে ঈদযাত্রায় ভোগান্তির শঙ্কা দূর হয়নি। এই প্রকল্পের আওতায় চান্দনা-চৌরাস্তায় নির্মিত ফ্লাইওভারটির নির্মাণ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় এমন শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দৃষ্টিনন্দন ফ্লাইওভারের সিংহভাগ নির্মিত হলেও ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুরসহ উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী যানবাহন চলাচলের অংশের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি।
ফলে গাজীপুর শহর ও ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী এবং ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী গাড়ি চলাচলের জন্য ফ্লাইওভার উপযোগী হলেও; অন্যান্য পথের গাড়িকে নিচের সড়ক ব্যবহার করেই চলতে হচ্ছে। এতে প্রতিনিয়ত সেই চিরচেনা যানজটের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে চালক ও যাত্রীদের।
এখনই মাঝেমধ্যে যানজট চান্দনা-চৌরাস্তা মোড় থেকে উত্তরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সালনা ও পশ্চিমে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের নাওজোর পর্যন্তও বিস্তার লাভ করছে। ঈদযাত্রায় গাড়ির চাপ বাড়লে তা আরও দীর্ঘ হতে পারে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ পথে চলাচলকারী সৌখিন পরিবহন বাস সার্ভিসের মালিক পক্ষের নেতা মো. আবুল হোসেন বলেন, “চান্দনা-চৌরাস্তা ফ্লাইওভারের নিচে নন-বিআরটির অংশটিই হচ্ছে এখন পথের কাঁটা। ফ্লাইওভারের মোটা মোটা খুঁটিগুলো যানজটপ্রবণ এ পথকে আরও সংকুচিত করে দিয়েছে। ফলে ঈদযাত্রায় ভোগান্তিতে পড়ার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।”
এবার তীব্র যানজট হওয়ার আশঙ্কা করছেন জানিয়ে তাকওয়া পরিবহনের মালিকপক্ষের প্রতিনিধি আব্দুল আউয়াল বলেন, “ময়মনসিংহগামী মহাসড়কের যে অংশে ফ্লাইওভার মিশেছে সেই অংশে এবার অসম্ভব রকমের যানজট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
“আগে ফ্লাইওভারের ওই অংশ না থাকায় একাধিক লেইনে গাড়ি চলে যেতে পারত। এখন তা সম্ভব হয় না। এ ছাড়া ঢাকাগামী উত্তরবঙ্গের গাড়িগুলো ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে যাওয়ার পথটি প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হয়ে পড়ায় এই অংশে যানজট বৃদ্ধি পাবে।”
তারপরও প্রায় ৩০০ কর্মী নিয়ে এই অংশের যানজট নিরসনে তারা পুলিশের সঙ্গে কাজ করছেন বলে জানান তিনি।
ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে ২৪ মার্চ রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত সাতটি ফ্লাইওভার খুলে দেওয়া হয়। ফলে এই পথে এখন ঢাকা থেকে অনেকটাই স্বচ্ছন্দে চলাচল করতে পারছেন টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোণা জেলার মানুষ।
তবে ঈদযাত্রায় চান্দনাসহ কয়েকটি পয়েন্টে যানজটের ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা। কারণ, চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকায় ঢাকামুখী ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি। সেটি ব্যবহার করে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলাচলের জন্য কোনো অংশও নির্মাণ করা হয়নি।
আবার চান্দনা-চৌরাস্তার এ অংশ অতিক্রম কিংবা চলাচলের জন্য ফুটপাথ কিংবা ফুটওভারব্রিজ না থাকায় পথচারীরা ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের দুই পাশের লেইন ব্যবহার করছেন, দলবেঁধে রাস্তার এপাশ থেকে ওপাশে পার হচ্ছেন। এতে গাড়ি চলাচল বাধা পাচ্ছে।
পাশাপাশি ফ্লাইওভার থেকে নেমেই ব্যস্ত রাস্তায় পড়বে গাড়ি। ঈদযাত্রায় যেখানে-সেখানে বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানোয় দেখা দেবে যানজট।
এ ছাড়া কয়েকটি স্থানে বিআরটির স্টেশন করায় নন-বিআরটি সড়ক সরু হয়ে গেছে, ফলে সেসব স্থানে গাড়ির চলাচলে বিঘ্ন হবে। সড়ক সরু হয়ে পড়ায় মালেকের বাড়ি, গাজীপুরা, বোর্ড বাজারসহ কয়েকটি পয়েন্টেও যানজটের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
চালকদের গাফিলতি, মানহীন যানবাহন, স্বল্প গতির থ্রি-হুইলার গাড়িসহ নানা কারণে মহাসড়কে যানজটের কথা স্বীকার করেছে পুলিশ প্রশাসনও।
তবে ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ কমাতে যানজট সৃষ্টির কারণ ও যানজটকারীদের চিহ্নিত করতে ড্রোন, সিসিটিভি ও আইপি ক্যামেরা ব্যবহারসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, পুলিশের টহল টিম, ওয়াচ টাওয়ার, মোবাইল টিমের পাশাপাশি যে কোনো জায়গায় যদি অবৈধ পার্কিং হয় সেগুলোকে সরাতে রেকার কাজ করবে।
“সার্বক্ষণিকভাবে এ কাজগুলো চলবে, যাতে রাস্তায় কোনো গাড়ি অযাচিতভাবে দাঁড়িয়ে না থাকে এবং রাস্তায় যেন কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি না হয়।”
গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. মাহবুব আলম বলেন, প্রতি ঈদের মতো এবারও মহানগর পুলিশের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ, এপিবিএন ও স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন করা হবে। স্থানে স্থানে মাইক দিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর কর্মসূচিও পালন করা হবে।
“যানজট ও সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে ৬০০ মতো পুলিশ কাজ করবে। এ ছাড়া রাস্তায় থাকবে মোটরসাইকেল পেট্রল টিম, আইপি ক্যামেরা, সিসি ক্যামেরা এবং ড্রোন সার্ভিলেন্স টিম। আশা করছি, গতবারের মতো এবারও ঈদে ঘরমুখো মানুষ নির্বিঘ্নে মহানগর এলাকা পার হতে পারবেন।”
এদিকে দেশের সবচেয়ে বড় শিল্পাঞ্চল গাজীপুরে কলকারখানাগুলোয় একসঙ্গে ঈদের ছুটি দিলে এই এলাকার সড়কে প্রচণ্ড চাপ পড়ে। তাই কলকারখানায় ধাপে ধাপে ছুটি দিয়ে যানজট কমানোর পরামর্শ দেন গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২ (গাজীপুর) এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সারওয়ার আলম।
তিনি বলেন, যানজট নিরসনে পর্যায়ক্রমে ছুটি দেওয়ার জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনো পোশাক কারখানা ৫ এপ্রিল থেকে বেতন-বোনাস দিয়ে কর্মীদের ছুটি দিয়েছে। আর কিছু কারখানার ৭, ৮ ও ৯ এপ্রিল ছুটি দেওয়া হবে।
৭ এপ্রিল ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কারখানা, ৮ এপ্রিল ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ এবং বাকি কারখানাগুলো ৯ এপ্রিল শ্রমিকদের ঈদের ছুটি দেবে। এতে যানজট অনেকাংশে হ্রাস পাবে বলে জানান শিল্প পুলিশের এই কর্মকর্তা।
পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও পুলিশ বিভাগগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের নির্বিঘ্ন চলাচলের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ট্রান্সপোর্টেশন ও ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট যাতে সঠিকভাবে হয়, সে বিষয়ে আমাদের পরিপূর্ণ পরিকল্পনা রয়েছে। মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং জেলা পুলিশ সমন্বয়ে ট্রাফিক সিস্টেম যাতে ভালো থাকে তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আমরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের সহযোগিতা নিচ্ছি।
ঈদযাত্রায় যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও মানহীন গাড়ি চলাচল বন্ধে এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।