শুক্রবার শরীয়তপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
Published : 26 Apr 2024, 09:13 PM
তীব্র দাবদাহে শরীয়তপুরে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। অতিরিক্ত গরমের কারণে দিনের বেলা ধান কাটতে পারছেন না কৃষক; তাই বাধ্য হয়ে রাতে ধান কাটছেন তারা।
শুক্রবার এ জেলায় সর্বোচ্চ ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, তীব্র দাবদাহের কারণে শরীয়তপুরে কৃষি শ্রমিকের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। কয়েকদিন ধরে আগাম জাতের ধানে পাক ধরায় কাটা শুরু করেছে কৃষক।
তবে প্রচণ্ড গরমের কারণে মৌসুমি শ্রমিকরা ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতিতে পাকা ধান তুলতে পারছেন না অনেক কৃষক। তবে আবহাওয়ার পরিস্থিতি বিবেচনায় দ্রুত ধান কেটে ঘরে তোলার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ।
ভেদরগঞ্জ উপজেলার কৃষক মিজানুর রহমান জানান, সারাদেশের মতো শরীয়তপুরেও বইছে তীব্র দাবদাহ। এর মধ্যে অধিকাংশ জমিতে বোরো ধান পাকতে শুরু করেছে। তবে অতিরিক্ত গরমে দিনের বেলা হিটস্ট্রোকসহ বিভিন্ন অসুস্থতার ভয়ে ধান কাটতে পারছেন না চাষিরা।
তাই রাতের বেলায় চাঁদের আলোয় ধান কাটছেন অনেক কৃষক। অতিরিক্ত গরমে শ্রমিক না পেয়ে কৃষক নিজেই ক্ষেতের ধান কাটছেন। যতদিন চাঁদের আলো থাকবে, ততদিন ধান কাটবেন তারা।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার সোনামুখী এলাকার চাষি শাহ আলম চৌকিদার, আলম ফকির জানান, ভোরে মাঠে গিয়ে ধান কাটা শুরু করতে করতে সূর্য উঠে যায়। সূর্যের তাপে শরীর পুড়ে যায়। বেশিক্ষণ মাঠে থাকা সম্ভব হচ্ছে না।
অতিরিক্ত তাপের কারণে ধান গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলন বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। জমিতে পানি জমিয়ে রাখলেও শুকিয়ে যাচ্ছে। তাই শ্রমিক নিয়ে রাতে ধান কাটছেন তারা। রাত ৯টা থেকে শুরু করে ভোর ৫টা পর্যন্ত চলে এই ধান কাটা।
আংগারিয়া এলাকার কৃষক দবির মাল বলেন, “রাতের বেলায় কামলা নিয়ে ৪০ শতাংশ জমির ধান কাটার কাজ শুরু করেছি। দিনের বেলা প্রচণ্ড গরমের কারণে অসুস্থতার ভয়ে অনেকেই ধান কেটে দিতে রাজি হয়নি।
“পরে রাতের বেলা ধান কাটা শুরু করি। রাতের বেলা জমিতে যেমন বাতাস থাকে তেমনি ঠাণ্ডাও থাকে। আমি মনে করি এই সময়ে রাতেই ধান কাটার উপযুক্ত সময়।”
শরীয়তপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে জেলার ছয়টি উপজেলায় ২৫ হাজার ৫২৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় পাঁচ হাজার ৫৮৫ হেক্টর, নড়িয়া উপজেলায় পাঁচ হাজার ৪২০ হেক্টর, জাজিরা উপজেলায় এক হাজার ১৫১ হেক্টর, ভেদরগঞ্জ উপজেলার চার হাজার ৬৫০ হেক্টর, ডামুড্যা উপজেলায় তিন হাজার ৮২১ হেক্টর এবং গোসাইরহাট উপজেলায় চার হাজার ৮৯৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।
গত বছর ২৫ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছিল। আর ধান উৎপাদন হয়েছিল এক লাখ ১৫ হাজার ৯০৬ টন। গত বছরের তুলনায় এ বছর উৎপাদন বেড়েছে ৩৩৬ হেক্টর জমিতে।
চলতি মৌসুমে বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ১৭ হাজার ৬২৭ টন। তবে টানা দাবদাহের কারণে ধানের উৎপাদন কিছুটা ব্যাঘাত ঘটবে বলে ধারণা করছে কৃষি বিভাগ।
শরীয়তপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) মোহাম্মদ রিয়াজুর রহমান বলেন, প্রচণ্ড দাবদাহে কৃষকদের দিনের বেলা ধান কাটা খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতিরিক্ত গরমে কাজ করলে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে।
তাই যারা এই গরমে মাঠে কাজ করবেন তাদের প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করার পাশাপাশি ছায়ায় বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।