ঝড়ে জেলা জুড়ে আনুমানিক ৫৫৭টি ঘরবাড়ি কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
Published : 07 May 2024, 10:35 PM
ফেনীতে কালবৈশাখীর তাণ্ডবে গাছ উপড়ে বৈদ্যুতিক তারের উপর পড়ায়, খুঁটি ভেঙে এবং ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে বিদ্যুৎহীন হয়ে আছেন প্রায় তিন লাখ গ্রাহক।
ঝড়ের পর প্রায় দেড় দিন অতিবাহিত হলেও মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলার অধিকাংশ উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়নি।
ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার ফজলুর রহমান বলেন, সোমবারের কালবৈশাখীতে জেলার ছয় উপজেলায় বিদ্যুতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন ইউনিটের প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ঝড়ে ১১৭টি খুঁটি ভেঙে গেছে, ৮৩৯টি স্থানে তার ছিঁড়ে গেছে, ৯৭৬টি গাছ তারের উপর পড়েছে এবং ৫৮টি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে গেছে। পাশাপাশি অনেক সরঞ্জাম নষ্ট হয়েছে।
মঙ্গলবার ফেনী সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার উপর পড়ে আছে বিদ্যুতের খুঁটি। কোথাও কোথাও ভাঙ্গা খুঁটি অপসারণের কাজ চললেও বেশিরভাগ জায়গায় মেরামতের কাজ শুরু হয়নি।
সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের বিরলী গ্রামের বাসিন্দা মাদ্রাসা শিক্ষক শাহজালাল ভূঁইয়া বলেন, কালবৈশাখীঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকরা দুইদিন যাবত বিদ্যুৎহীন অবস্থায় চরম ভোগান্তিতে রয়েছে। এরমধ্যে পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের বিরলী, রাজাপুর, সিন্দুরপুরে কখন বিদ্যুৎ পাবে তাও জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
দাগনভূঞা উপজেলার জায়লস্কার ইউনিয়নের পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়নের শিক্ষক এস এম ইউসুফ আলী বলেন, মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ সচল না হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে গ্রামবাসী। পাশাপাশি মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল না হওয়াতে মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে।
সদরের কালিদহ ইউনিয়নের আলোকদিয়া গ্রামের বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, “দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্রিজে রাখা খাদ্যসামগ্রী নষ্ট হতে শুরু করেছে। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হিমশিম খাচ্ছে।
“দফায় দফায় যোগাযোগ করেও কবে নাগাদ বিদ্যুৎ সচল হবে তা জানাতে পারেননি পল্লী বিদ্যুতের লোকজন।”
ছাগলনাইয়া উপজেলার বাসিন্দা সোলায়মান হাজারী বলেন, “হঠাৎ কালবৈশাখীঝড়ে গাছপালা পড়ে মহাসড়কের যান চলাচল বন্ধ ছিল। ভেঙে যায় এলাকার বহু ঘরবাড়ি, ঝড়ো হাওয়ার ফলে নুয়ে পড়েছে ফসলি জমির ধান। বিদ্যুৎ না থাকাতে ব্যবসায়ীরাও লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন।”
ফেনী পল্লী বিদ্যুতের জিএম ফজলুর রহমান বলেন, ঝড় কবলিত এলাকায় প্রায় তিন লাখ গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত খুঁটিগুলোর সংস্কার কাজ চলছে। ঠিকাদারদের ১০টি টিম বিভিন্ন স্থানে কাজ করছে। আমাদের নিজস্ব স্টাফরা নতুন ট্রান্সফরমার লাগাতে কাজ করছে।
“বিষয়গুলো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। যার ফলে এখনি বলা যাচ্ছে না কখন নাগাদ বিদ্যুৎ স্বাভাবিক হবে।”
তবে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সকল লাইন চালুর ব্যাপারে আশাবাদ জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
এদিকে ফেনী আবহাওয়া অফিসের উচ্চমান পর্যবেক্ষক মুজিবুর রহমান বলেন, সোমবার দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত জেলায় ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চলতি মৌসুমের মধ্যে যা সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।
অপরদিকে জেলা প্রশাসক মোসাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, “ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন ছয়টি উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে ঝড়ে প্রায় এক হেক্টর জমির সবজি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আনুমানিক ১৫০০ হেক্টর জমির ধান এবং ২৫ কিলোমিটার রাস্তার গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়া জেলা জুড়ে আনুমানিক ৫৫৭টি ঘরবাড়ি কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।