একরাম হত্যা: পেপার বুক না হওয়ায় ৫ বছর আটকা আপিল শুনানি

২০১৪ সালের ২০ মে ফেনীতে গাড়িতে থাকা একরামকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে, কুপিয়ে, গুলি করে হত্যা করে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

নাজমুল হক শামীমফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 May 2023, 12:39 PM
Updated : 20 May 2023, 12:39 PM

পাঁচ বছরেও তৈরি হয়নি পেপার বুক। এ কারণে ফেনীর আলোচিত একরামুল হক একরাম হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায় অনুমোদন ও এর বিরুদ্ধে আসামিদের আপিলের শুনানি করা যাচ্ছে না।

এই মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ১৬ আসামি এখনও গ্রেপ্তার এড়িয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এদের কয়েকজন বিদেশে চলে গেছেন বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

সারা দেশে ভীতি জাগানিয়া এই হত্যার ৯ বছর পূর্ণ হলো শনিবার। দণ্ড কার্যকরের দাবি জানিয়ে এদিনও হচ্ছে নানা কর্মসূচি।

২০১৪ সালের ২০ মে সকালে ফেনী শহরের একাডেমি এলাকায় গাড়িতে থাকা ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একরামকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে, কুপিয়ে, গুলি করা হয়। পরে তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনার ভিডিও সে সময় ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

একরামের বড় ভাই জসিম উদ্দিন ৩৩ জনকে আসামি করে মামলা করলে চার বছর পর ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ ৩৯ জনকে ফাঁসির আদেশ দেন ফেনীর জেলা ও দায়রা জজ।

এই মামলার আসামি ফুলগাজীর বিএনপি নেতা ও উপজেলা নির্বাচনে একরামের প্রতিদ্বন্দ্বী মাহতাব উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী মিনারসহ খালাস পান ১৬ জন।

মামলা চলাকালে এক আসামি র‌্যাবের সঙ্গে 'কথিত বন্দুকযুদ্ধে' মারা যান।

ফাঁসির দণ্ড পাওয়া আসামিদের মধ্যে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির, ফেনী পৌরসভার তৎকালীন কাউন্সিলর আবদুল্লাহ হিল মাহমুদ। বাকিরা স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী।

পলাতক আসামিদের মধ্যে আছেন ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর মামাত ভাই আবিদুল ইসলাম আবিদ।

ফেনী আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হাফেজ আহম্মদ রায়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্থানীয় নির্বাচন থেকে আসামিদের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধের কারণে একরামকে হত্যা করা হয়েছে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেছেন।” 

কেন উচ্চ আদলতে শুনানি আটকা

বিচারিক আদালত মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিলে তা উচ্চ আদালতে অনুমোদন করতে হয়। একে বলে ডেথ রেফারেন্স শুনানি। আসামিপক্ষও রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারে। দুটি শুনানিই একসঙ্গে চলে।

জেলা জজ আদালতে রায় ঘোষণার পর উচ্চ আদালতে আপিল করেন দণ্ডপ্রাপ্তরা। পাঁচ বছরেও সেই আপিলের শুনানি হয়নি।

আসামিদের আইনজীবী আহসান কবীর বেঙ্গল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এই তথ্য জানিয়েছেন। ফেনী আদালতে সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হাফেজ আহম্মদ তা নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, “মামলার এজাহার, অভিযোগপত্র, জব্দ তালিকা, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন, সাক্ষীদের জবানবন্দি, জেরা ও নিম্ন আদালতের রায় পর্যায়ক্রমে পেপারবুকে সাজানো থাকে। পেপারবুক প্রস্তুত না হওয়ায় আসামিদের আপিলের শুনানি শুরু হয়নি।”

উচ্চ আদালতে বিচার আটকে যাওয়ায় অসন্তুষ্ট একরামের ছোট ভাই মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, “রায় কার্যকরে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রায় যাতে দ্রুত কার্যকর হয়, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।”

নানা কর্মসূচি

একরামের মৃত্যুবার্ষিকীতে দলীয় একাধিক কর্মসূচি পালিত হয়েছে ফেনীতে।

দুপুরে প্রয়াত নেতার সমাধিতে ফুল দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী। পরে তিনিসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা কবর জিয়ারত করেন।

বিকেল ৪টায় ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলীয় কার্যালয়ে স্মরণসভা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয় বলে জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন মজুমদার।

কারাগারে যারা

মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে কনডেম সেলে বন্দিদের মধ্যে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির আদেল, যাকে রায়ে হত্যার পরিকল্পনাকারী বলা হয়েছে।

ফেনী পৌরসভার কাউন্সিলর আবদুল্লাহিল মাহমুদ শিবলু, সাজ্জাদুল ইসলাম পাটোয়ারী ওরফে সিফাত, আবু বক্কার সিদ্দিক ওরফে বক্কর, আজমির হোসেন রায়হান, শাহজালাল উদ্দিন শিপন, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ওরফে আজাদ, কাজী শানান মাহমুদ, মীর হোসেন আরিফ, আরিফ ওরফে পাঙ্কু আরিফ, রাশেদুল ইসলাম রাজুও বন্দি।

অন্যরা হলেন সোহান চৌধুরী, জসিম উদ্দিন নয়ন, নিজাম উদ্দিন আবু, আবদুল কাইউম, নুর উদ্দিন মিয়া, তোতা মানিক, জিয়াউর রহমান বাপ্পি, মো. সজিব, মামুন, রুবেল, হুমায়ুন ও টিপু।

এদের মধ্যে জিয়াউর রহমান বাপ্পিকে ২০২১ সালের ১২ নভেম্বর গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পলাতক যারা

মৃত্যুদণ্ডের সাজা নিয়ে আত্মগোপনে আছেন জাহিদ হোসেন, আবিদুল ইসলাম, চৌধুরী মো. নাফিজ উদ্দিন, আরমান হোসেন, জাহেদুল হাসেম, জসিম উদ্দিন, এমরান হোসেন, রাহাত মো. এরফান, একরাম হোসেন ওরফে আকরাম, শফিকুর রহমান, কফিল উদ্দিন মাহমুদ, মোসলে উদ্দিন, ইসমাইল হোসেন, মহিউদ্দিন আনিছ, মো. বাবলু ও টিটু।

এদের মধ্যে আটজন বিচার চলার সময় জামিনে মুক্ত হয়ে পালিয়ে যান।

ফেনী মডেল থানার ওসি নিজাম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তাদের হদিস পেলেই গ্রেপ্তার করা হবে। তবে শুনেছি বেশ কয়েকজন আসামি বিদেশে পালিয়ে রয়েছে।”

Also Read: একরাম হত্যা: চার বছরেও অধরা দণ্ডিত ১৭ আসামি

Also Read: একরাম হত্যা: ৪ বছরেও রায় কার্যকর না হওয়ায় পরিবারের শঙ্কা