একরাম হত্যা: চার বছরেও অধরা দণ্ডিত ১৭ আসামি

চার বছর পেরিয়ে গেলেও ফেনীর ফুলগাজীর উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক একরাম হত্যা মামলার দণ্ডিত ১৭ আসামিকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

নাজমুল হক শামীম ফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 May 2018, 04:50 AM
Updated : 20 May 2018, 06:15 AM

অন্যদিকে নিম্ন আদালতে দণ্ডিতদের মধ্যে যারা কারাবন্দি আছেন, রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে তাদের আপিলের শুনানি শুরু না হওয়ায় শঙ্কিত রয়েছেন নিহতের স্বজনরা।

নিহত একরামের ভাই মোজাম্মেল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দোষীদের মধ্যে কেউ কেউ উপযুক্ত শাস্তি পেলেও হত্যাকাণ্ডের হোতা থেকে গেছে পর্দার আড়ালে। তবে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা যেন উচ্চ আদালত থেকে কোনোভাবে রেহাই না পায় সেদিকে সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে।

২০১৪ সালের ২০ মে ফেনী শহরের বিলাসী সিনেমা হলের সামনে ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একরামকে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে, কুপিয়ে ও গাড়িসহ পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।

ওই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই জসিম উদ্দিনের করা হত্যা মামলার বিচার শেষে এবছর ১৩ মার্চ ফেনীর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আমিনুল হক ৩৯ আসামিকে ফাঁসির আদেশ দেন। পাশাপাশি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার প্রধান আসামি বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী মিনারসহ ১৬ জন বেকসুর খালাস দেন।

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ২২ জন রয়েছেন কারাগারে, আটজন জামিনে মুক্ত হয়ে পলাতক আছেন এবং নয়জন শুরু থেকে পলাতক রয়েছেন।  

আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসান কবীর বেঙ্গল জানান, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে পলাতক আসামিরা হলেন- ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন জিহাদ, সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারির মামাতো ভাই আবিদুল ইসলাম আবিদ, চৌধুরী মো. নাফিজ উদ্দিন অনিক, আরমান হোসেন কাউসার, জাহেদুল হাসেম সৈকত, জিয়াউর রহমান বাপ্পি, জসিম উদ্দিন নয়ন, এমরান হোসেন রাসেল ওরফে ইঞ্জি. রাসেল, রাহাত মো. এরফান ওরফে আজাদ, একরাম হোসেন ওরফে আকরাম, শফিকুর রহমান ওরফে ময়না, কফিল উদ্দিন মাহমুদ আবির, মোসলে উদ্দিন আসিফ, ইসমাইল হোসেন ছুট্টু, মহিউদ্দিন আনিছ, বাবলু ও টিটু।

এদের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে একেবারে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত জাহিদ হোসেন জিহাদ ও আবিদুল ইসলাম আবিদ পালিয়ে দেশের বাইরে চলে গেছে বলে এলাকাবাসীর ধারণা।

তবে আসামিদের অবস্থানের বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন ফেনী মডেল থানার ওসি রাশেদ খান চৌধুরী।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পলাতক ২২ আসামির অনুসন্ধানে রয়েছে পুলিশ। তাদের হদিস পেলেই গ্রেপ্তার করা হবে।  

১৩ মার্চ রায় ঘোষণার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিচারিক আদালত থেকে ডেথ রেফারেন্সের নথি হাই কোর্টে পাঠানো হয়। ডেথ রেফারেন্স নথির ভিত্তিতে পেপারবুক প্রস্তুত হলেই হাই কোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল শুনানি হবে।

চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার রায়ে বলা হয়, স্থানীয় নির্বাচন থেকে আসামিদের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধের কারণেই একরামকে হত্যা করা হয়েছে।

তবে দুই মাসেও উচ্চ আদালতে আপিলের শুনানি না হওয়ায় রায় কার্যকর হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বজনরা।

দণ্ডিত জাহাঙ্গীর কবির আদেল ও আবদুল্লাহ হিল মাহমুদ শিবলু (সবুজ গেঞ্জি)

এই হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডিত কারাবন্দি ২২ জন হলেন- হত্যার পরিকল্পনাকারী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির আদেল, ফেনী পৌরসভার কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ হিল মাহমুদ শিবলু, সাজ্জাদুল ইসলাম পাটোয়ারী ওরফে সিফাত, আবু বক্কার সিদ্দিক ওরফে বক্কর, মো. আজমির হোসেন রায়হান, মো. শাহজালাল উদ্দিন শিপন, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ওরফে আজাদ, কাজী শানান মাহমুদ, মীর হোসেন আরিফ ওরফে নাতি আরিফ, আরিফ ওরফে পাঙ্কু আরিফ, রাশেদুল ইসলাম রাজু, মো. সোহান চৌধুরী, জসিম উদ্দিন নয়ন, নিজাম উদ্দিন আবু, আবদুল কাইউম, নুর উদ্দিন মিয়া, তোতা মানিক, মো. সজিব, মামুন, রুবেল, হুমায়ুন ও টিপু।

খালাসপ্রাপ্ত ১৬ জন হলেন- প্রধান আসামি জেলা তাঁতী দলের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী মিনার, একরামের একান্ত সহযোগী আওয়ামী লীগ নেতা বেলাল হোসেন পাটোয়ারী ওরফে টুপি বেলাল, পৌর যুবলীগের যুগ্ন আহবায়ক জিয়াউল আলম মিস্টার, মো. আলমগীর ওরফে আলউদ্দিন, আবদুর রহমান রউপ, সাইদুল করিম পবন ওরফে পাপন, জাহিদ হোসেন ভূইয়া, ইকবাল হোসেন, মো. শাখাওয়াত হোসেন, শরিফুল ইসলাম পিয়াস, কালা ওরফে কালা মিয়া, নুরুল আবসার রিপন, মো. ইউনুস ভূইয়া শামীম ওরফে টপ শামীম, মো. মাসুদ, কাদের ও ফারুক।

একরাম হত্যার পর ২০১৪ সালের ২০ মে রাতে নিহতের ভাই রেজাউল হক জসিম বাদী হয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একরামের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপি নেতা মিনারের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় ৩০-৩৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ওই বছরের ২৮ অগাস্ট তদন্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ ৫৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

তিন দফা শুনানির আড়াই মাস পর আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করে এবং ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ বিচার শুরু হয়।

মামলায় বিভিন্ন সময়ে পুলিশ ও র‌্যাব ৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল। এদের মধ্যে জামিনে নিয়ে বেরিয়ে পালিয়ে যান নয়জন। এ মামলার অন্যতম আসামি সোহেল ওরফে রুটি সোহেল র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় ১৫ জন।

মামলার বাদী একরামের বড় ভাই রেজাউল হক জসিম, ছোট ভাই এহসানুল হক, একরামের স্ত্রী তাসমিন আক্তার, গাড়ি চালক আবদল্লাহ আল মামুনসহ ৫০ জন সাক্ষ্য দেন।