ফেনীর ফুলগাজীর উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হককে হত্যার দায়ে ৩৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত; খালাস পেয়েছেন বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ওরফে মিনার চৌধুরীসহ ১৬ জন।
Published : 13 Mar 2018, 02:40 PM
মঙ্গলবার ফেনীর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আমিনুল হক ঘটনার প্রায় চার বছর পর এ মামলার রায় দেন।
২০১৪ সালের ২০ মে ফেনী শহরের বিলাসী সিনেমা হলের সামনে ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি ও চেয়ারম্যান একরামকে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে, কুপিয়ে ও গাড়িসহ পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।
ফেনী জজ আদালতের পিপি হাফেজ আহম্মদ জানান, দণ্ডবিধির ৩০২, ৩৪, ১২০বি ও ১০৯ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ৩৯ জনের বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত।
“অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার প্রধান আসামি বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী মিনারসহ ১৬ জন বেকসুর খালাস পেয়েছেন।”
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ২২ জন রয়েছেন কারাগারে, আটজন জামিনে মুক্ত হয়ে পলাতক আছেন এবং নয়জন শুরু থেকে পলাতক রয়েছেন।
দণ্ডিত জাহাঙ্গীর কবির আদেল ও আবদুল্লাহ হিল মাহমুদ শিবলু (সবুজ গেঞ্জি)
ফাঁসির দণ্ডিত কারাবন্দি ২২ জন হলেন- হত্যার পরিকল্পনাকারী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির আদেল, ফেনী পৌরসভার কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ হিল মাহমুদ শিবলু, সাজ্জাদুল ইসলাম পাটোয়ারী ওরফে সিফাত, আবু বক্কার সিদ্দিক ওরফে বক্কর, মো. আজমির হোসেন রায়হান, মো. শাহজালাল উদ্দিন শিপন, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ওরফে আজাদ, কাজী শানান মাহমুদ, মীর হোসেন আরিফ ওরফে নাতি আরিফ, আরিফ ওরফে পাঙ্কু আরিফ, রাশেদুল ইসলাম রাজু, মো. সোহান চৌধুরী, জসিম উদ্দিন নয়ন, নিজাম উদ্দিন আবু, আবদুল কাইউম, নুর উদ্দিন মিয়া, তোতা মানিক, মো. সজিব, মামুন, রুবেল, হুমায়ুন ও টিপু।
জামিনের পর পলাতক ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আট আসামি হলেন- ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন জিহাদ, সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারীর মামাত ভাই আবিদুল ইসলাম আবিদ, চৌধুরী মো. নাফিজ উদ্দিন অনিক, আরমান হোসেন কাউসার, জাহেদুল হাসেম সৈকত, জিয়াউর রহমান বাপ্পি, জসিম উদ্দিন নয়ন ও এমরান হোসেন রাসেল ওরফে ইঞ্জিনিয়ার রাসেল।
শুরু থেকে পলাতক ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত নয় আসামি হলেন- রাহাত মো. এরফান ওরফে আজাদ, একরাম হোসেন ওরফে আকরাম, শফিকুর রহমান ওরফে ময়না, কফিল উদ্দিন মাহমুদ আবির, মোসলে উদ্দিন আসিফ, ইসমাইল হোসেন ছুট্টু, মহিউদ্দিন আনিছ, বাবলু ও টিটু।
মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী মিনার (ফাইল ছবি)
খালাসপ্রাপ্ত ১৬ জন হলেন- প্রধান আসামি জেলা তাঁতী দলের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী মিনার, একরামের একান্ত সহযোগী আওয়ামী লীগ নেতা বেলাল হোসেন পাটোয়ারী ওরফে টুপি বেলাল, পৌর যুবলীগের যুগ্ন আহবায়ক জিয়াউল আলম মিস্টার, মো. আলমগীর ওরফে আলউদ্দিন, আবদুর রহমান রউপ, সাইদুল করিম পবন ওরফে পাপন, জাহিদ হোসেন ভূইয়া, ইকবাল হোসেন, মো. শাখাওয়াত হোসেন, শরিফুল ইসলাম পিয়াস, কালা ওরফে কালা মিয়া, নুরুল আবসার রিপন, মো. ইউনুস ভূইয়া শামীম ওরফে টপ শামীম, মো. মাসুদ, কাদের ও ফারুক।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহত একরামের ভাই মোজাম্মেল হক। তবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “দোষীরা উপযুক্ত শাস্তি পেলেও পর্দার আড়ালে থেকে গেছে হোতা।”
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা উচ্চ আদালত থেকেও রেহাই পাবে না বলে তিনি আশা করেন।
এদিকে বিএনপির নেতা চৌধুরী মিনার খালাস পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তার আইনজীবী ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মেসবাহ উদ্দিন খাঁন।
তিনি বলেন, “একরাম সরকারদলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হলেও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বিএনপির নেতাকে জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল তার কোনোটি প্রমাণ করতে পারেনি আদালত।”
আসামি পক্ষের আইনজীবী আহসান কবীর বেঙ্গল বলেন, “দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। দ্রুত উচ্চ আদালতে তাদের শাস্তি মওকুফের আবেদন করা হবে।”
এই গাড়িতেই পুড়িয়ে হত্যা করা হয় একরামকে
একরাম হত্যার পর ২০১৪ সালের ২০ মে রাতে নিহতের ভাই রেজাউল হক জসিম বাদী হয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একরামের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপি নেতা মিনারের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় ৩০-৩৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ওই বছরের ২৮ অগাস্ট তদন্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ ৫৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
তিন দফা শুনানির আড়াই মাস পর আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করে এবং ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ বিচার শুরু হয়।
মামলায় বিভিন্ন সময়ে পুলিশ ও র্যাব ৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল। এদের মধ্যে জামিনে নিয়ে বেরিয়ে পালিয়ে যান নয়জন। এ মামলার অন্যতম আসামি সোহেল ওরফে রুটি সোহেল র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় ১৫ জন।
মামলার বাদী একরামের বড় ভাই রেজাউল হক জসিম, ছোট ভাই এহসানুল হক, একরামের স্ত্রী তাসমিন আক্তার, গাড়ি চালক আবদল্লাহ আল মামুনসহ ৫০ জন সাক্ষ্য দেন।