ফেনীতে উপজেলা চেয়ারম্যানকে গাড়িসহ পুড়িয়ে হত্যা

ফেনী শহরে বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে গুলিবর্ষণ ও ছুরিকাঘাতের পর গাড়িসহ পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে ফুলগাজীর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একরামুল হককে।

ফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 May 2014, 06:28 AM
Updated : 20 May 2014, 07:11 PM

মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে জেলা শহরের একাডেমি এলাকায় বিলাসী প্রেক্ষাগৃহের সামনে নিহত একরাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও ছিলেন।

কারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তা জানাতে পারেনি পুলিশ। তবে নিহতের ভাই রেজাউল হক জসিম কয়েক মাস আগে উপজেলা নির্বাচনে একরামের কাছে পরাজিত বিএনপি প্রার্থীকে আসামি করে রাতে একটি মামলা করেছেন।  

ফেনী সদর মডেল থানার ওসি মাহবুব মোর্শেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলায় বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর নাম উল্লেখসহ ৩০/৩৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই হত্যাকাণ্ডে ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে খুনিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন।

ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, তারা হামলাকারী কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেননি।

হামলায় একরামের সঙ্গে গাড়িতে থাকা এক সাংবাদিকসহ তিনজন আহত হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। তাদের দুজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ফাইল ছবি

এই হত্যাকাণ্ডের পর জেলা শহরের থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে, বন্ধ হয়ে যায় শহরের ভেতরে সব ধরনের গাড়ি চলাচল। বিক্ষোভ মিছিল করেছে জেলা আওয়ামী লীগ, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কয়েকটি গাড়ি ভাংচুরও হয়েছে।

একরাম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ফুলগাজীতে তার সমর্থকদের অবরোধ করলে জেলার সঙ্গে পরশুরাম উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকে দীর্ঘসময়।

আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, একরাম সকালে শহরের মাস্টারপাড়ায় নিজের বাসা থেকে নিজের গাড়ি নিয়ে ফুলগাজীর উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন।

একরামের সঙ্গে ছিলেন ফুলগাজীর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সম্বু চেয়ারম্যান, একরাম সম্পাদিত দৈনিক ফেনী প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক মুহিব উল্লাহ ফরহাদ।

একাডেমি এলাকার বিলাসী সিনেমা হলের সামনে পৌঁছলে একদল দুর্বৃত্ত একটি ভ্যান দিয়ে একরামের গাড়িটি আটকে ফেলে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়।

হামলাকারীরা কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটালে ওই এলাকায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর হামলাকারীরা একরামকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর পর গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়।

গাড়িতে আগুন দেয়ার আগে সম্বু চেয়ারম্যান, ফরহাদ ও গাড়িচালককে বের করে এনে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করা হয়। এরপর গাড়িতে পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে হামলাকারীরা চলে যায়।

ফেনীর সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি-সার্কেল) সামছুল আলম সরকার সাংবাদিকদের বলেন, হামলার খবর পেয়েই তারা ঘটনাস্থলে যান। সেখানে গিয়ে গাড়ির ভেতরে একরামের অগ্নিদগ্ধ লাশ পাওয়া যায়। এর মধ্যে দমকল বাহিনী এসে আগুন নেভায়।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়,একরামের হলুদ রঙের প্রাইভেট কারটি পুড়ে গেছে, তার লাশ পড়ে আছে গাড়ির দরজার পাশে। লাশটি পুড়ে এতটাই বিকৃত হয়েছে যে চেনার জো নেই।   

পুলিশ একরামের লাশটি গাড়ি থেকে বের করে আনার পর ফেনী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। তবে দেহ পুড়ে যাওয়ায় ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পরে তা চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠানো হয় বলে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুর রহমান জানান।

একরাম হত্যাকাণ্ডের খবরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে কয়েকটি গাড়ি ও দোকান ভাংচুর করে। এরপর শহরে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

জেলা আওয়ামী লীগ শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে। এর মধ্যে একদল নেতা-কর্মী দুপুর ৩টার দিকে মহিপালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে। পরে তাদের সরিয়ে দেয় পুলিশ।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা শহরে পুলিশ, র‌্যাবের পাশাপাশি ২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়ন করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, একরামুল হকের প্রথম জানাজা হবে শহরের মিজার ময়দানে বুধবার সকাল ৯টায়। এরপর লাশ ফুলগাজীতে নেয়া হবে।

ফুলগাজী উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজিমুদ্দীন মজুমদার জানান,সকাল সাড়ে ১০টায় দ্বিতীয় জানাজা হবে ফুলগাজী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। এরপর বেলা সাড়ে ১১টায় তৃতীয় জানাজা হবে বন্ধুয়া গ্রামে নিহতের বাড়িতে।