যদিও প্রশাসনের দাবি, মহাসড়কে পরিবহন চলাচল নির্বিঘ্ন করতে সজাগ থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
Published : 05 Apr 2024, 09:08 PM
ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতুর আগের ১০ কিলোমিটারে যানজটের শঙ্কা বিরাজ করছে।
মহাসড়কটি চার লেইনের হলেও দুর্ঘটনা ও গাড়ি বিকল হওয়া, ফিটনেসবিহীন পরিবহন, ওভারটেক প্রতিযোগিতা, কয়েকটি লিংক রোড ও টোল আদায়ে ধীরগতির কারণে এবারও ঈদযাত্রায় ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে যাত্রী ও চালকদের।
বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায়ে নিয়োজিত কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, অনেক সময় সেতুর উপর পরিবহন বিকল হয়ে যায়। কোনো কোনো পরিবহন ওভারটেক করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। পরে দুর্ঘটনাকবলিত পরিবহনগুলো সরাতে সেতুর এক লেইন বন্ধ করতে হয়। এতে কিছু সময়ের জন্য টোল আদায় বন্ধ রাখা হয়। এসময় যদি মহাসড়কে পরিবহনের চাপ থাকে তাহলে সেতুর দুপাশের মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়।
পরিবহন থেকে টোল আদায়ে কোনো ঝামেলা হবে না এবং বিগত ঈদেও হয়নি দাবি করে তারা জানান, ঈদকে কেন্দ্র বাড়তি টোলবুথ স্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সেতু আগে সাতটি এবং মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা দুটি বুথ করা হয়েছে। একইভাবে সেতুর পশ্চিমে সাতটি বুথ চালু করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চাইলে টোলবুথ আরও বাড়ানো যাবে। তবে সেটা সেতুতে ধারণ ক্ষমতার মধ্যে পড়বে কিনা তাও বিবেচনা করতে হবে।
শ্যামলী পরিবহনের চালক সুমন ইসলাম বলেন, “এবারও মহাসড়কে ভোগান্তি হবে। এলেঙ্গা থেকে সেতুপূর্ব পর্যন্ত দুই লেইনের সড়কে যানজট হতে পারে। চার লেইনের পরিবহন যখন দুই লেইনে প্রবেশ করবে এবং একটি গাড়ি আরেকটি গাড়িকে ওভারটেক করবে তখন ঘটবে বিপত্তি।”
“তবে পুলিশ প্রশাসন যদি ঠিকমত দায়িত্ব পালন করেন তাহলে সমস্যা হবে না।”
হানিফ পরিবহনের চালক ইকবাল হোসেন বলেন, “মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে সেতুপূর্ব পর্যন্ত রাস্তার কাজ শেষ হয়নি। এছাড়া চন্দ্রার আগেই যানজটের সৃষ্টি হবে। তবে চন্দ্রার পর মহাসড়কের
এলেঙ্গা পর্যন্ত কোনো যানজট হবে না যদি এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব পর্যন্ত মহাসড়ক স্বাভাবিক থাকে।”
তিনি আরও বলেন, “এলেঙ্গা থেকে সেতুপূর্ব পর্যন্ত সড়কে লাগা যানজট চার লেইনে গিয়ে ঠেকে। তবে রাত ১২টার পর থেকে ভোর পর্যন্ত যদি পুলিশের নজরদারি থাকে তাহলে দিনের বেলায় তেমন চাপ থাকবে না। এর মধ্যে পরিবহনের চাপ বাড়লে যানজট হবেই। যে পরিমাণ গরম পড়েছে ও রোদ রয়েছে তাতে যানজটের সৃষ্টি হলে মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকবে না।”
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে হাইওয়ে পুলিশ প্রধান মো. শাহাবুদ্দিন খান মহাসড়ক পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, “সেতুর পূর্বে কিছুটা যানজট হতে পারে। বিগত সময়ে এমনই ঘটেছে।”
তবে তার সঙ্গে একমত নন জেলা পুলিশ প্রশাসন।
তাদের দাবি, এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব গোলচত্বর পর্যন্ত কয়েকটি পয়েন্টে আলাদা লেইন হয়েছে। ফলে কোনো ঝামেলা ছাড়াই পরিবহনগুলো চলাচল করতে পারবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব থেকে এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার মহাসড়কের কিছু অংশ আলাদা লেইন করা হয়েছে।
মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে চরভাবলা পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার এবং বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব গোলচত্বর থেকে জোকারচর পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার মহাসড়কে আলাদা লেইনের কাজ শেষ হয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশ প্রধান জানান, দুএকদিনের মধ্যেই ওই অংশটুকু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
এ অংশ ছাড়া উত্তরবঙ্গ থেকে ছেড়ে আসা পরিবহনগুলো সেতুপূর্ব গোলচত্বর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু-ভূঞাপুর-এলেঙ্গা আঞ্চলিক সড়ক ব্যবহার করে এলেঙ্গায় মহাসড়কে প্রবেশ করে ঢাকার দিকে যাবে।
এদিকে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ওই মহাসড়কে যানজট নিরসনে জেলা প্রশাসন, হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কয়েকদিন ধরে মহাসড়ক পরিদর্শন করে তাদের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছেন যেন ঈদে ঘরমুখো মানুষজন কোনো ঝামেলা ছাড়াই গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি তল্লাশি চৌকিতে অতিরিক্তি পুলিশ ও একজনকে নির্বাহী হাকিম মোতায়েন করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক টহলে থাকবেন হাইওয়ে পুলিশের বিভিন্ন সদস্য।
বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব থানার ওসি আলমগীর আশরাফ বলেন, “এবার মহাসড়কে তেমন যানজটের সৃষ্টি হবে না তবে গাড়ির চাপ থাকবে। ঈদের ছুটিতে মানুষ যেহেতু বাড়ি যাবে সেহেতু পরিবহনের সংখ্যা বৃদ্ধিতো পাবেই। সেতুতে কোনো ধরনের ঝামেলা তৈরি না হলে পরিবহনগুলো অনায়াসে সেতু পার হতে পারলে কোনো যানজটের সৃষ্টি হবে না।”
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, “ঈদে যাতে উত্তরবঙ্গের মানুষজনের কোনো ভোগান্তি পোহাতে না হয় এজন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রত্যেক পয়েন্টে পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা, সেতুপূর্ব গোলচত্বর হয়ে উত্তরবঙ্গ থেকে আসা ঢাকাগামী পরিবহনগুলো মহাসড়ক দিয়ে যেতে না দিয়ে ভূঞাপুর-এলেঙ্গা সড়ক দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হবে। এতে মহাসড়কে পরিবহনের চাপ কমে যাবে।”
হাইওয়ে পুলিশের প্রধান বলেন, “সেতুর পশ্চিমপ্রান্ত হাটিকুমরুল হয়ে উত্তরবঙ্গমুখি সড়কের উন্নয়ন হয়েছে। পশ্চিম অংশে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফলে পশ্চিমপাড়ে যানজটের আশঙ্কা খুবই কম।
“দ্বিতীয়ত বঙ্গবন্ধু সেতুতে একটা জট তৈরি হয় বা গাড়ি ধীরগতির সৃষ্টি হয়। চার বা ছয় লেইনের পরিবহন যে গতিতে সেতুতে চলে আসে… তাতে… সেতুর ক্যাপাসিটিতো আগের মতই আছে। ক্যাপাসিটি বাড়েনি। ফলে সেতুর টোলপ্লাজায় গিয়ে পরিবহন জমে যায়। ঈদে বড় ধরনের যানজট হওয়ার আশঙ্কা না থাকলেও টোলপ্লাজা কেন্দ্রিক স্বল্পমাত্রার যানজট হতে পারে।”