বিস্ফোরণের পর কারখানা কর্তৃপক্ষ ‘রহস্যজনক কারণে’ ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশকে জানায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
Published : 06 May 2023, 01:36 AM
লোহা গলানোর চুল্লিতে বিস্ফোরণে চার শ্রমিকের মৃত্যু ঘটেছে যে কারখানায়, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সেই রহিমা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স লিমিটেড শ্রমিকদের নিরাপত্তাজনিত ব্যবস্থার ঘাটতির কারণে ছাড়পত্র না পেলেও লোহা গলানো ও তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছিল।
কারখানা কর্তৃপক্ষ গত বছর লোহা গলানো ও তৈরির অনুমতি চেয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কাছে দুই দফা আবেদন করে। অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দুইবার পরিদর্শন করে এবং নির্দেশ দিয়েও শ্রমিকদের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করাতে পারেনি।
অনুমতি ছাড়াই ছয় মাস ধরে উৎপাদনে থাকা কারখানাটির চুল্লিতে বৃহস্পতিবার বিকট বিস্ফোরণে চার শ্রমিককে প্রাণ দিতে হয়েছে।
বিস্ফোরণের পর কারখানা কর্তৃপক্ষ ‘রহস্যজনক কারণে’ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং পুলিশ প্রশাসনকে খবর দেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি সেখানে অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থাও দেখতে পাননি ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপ মহাপরিদর্শক রাজীব চন্দ্র দাস শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় তাদের ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি৷ কারখানা কর্তৃপক্ষকে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য নোটিস দেওয়া হয়েছিল৷ নিরাপত্তা জোরদার না করেই তারা চুল্লিতে লোহা গলানোর কাজ শুরু করেন৷ এ অবস্থায় দুর্ঘটনা ঘটেছে৷”
তবে শ্রমিকদের নিরাপত্তার ‘যথাযথ ব্যবস্থা’ ছিল দাবি করে রহিমা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স লিমিটেডের (আরআইসিএল) তত্ত্বাবধায়ক (সুপারভাইজার) শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, তারা ছয় মাস ধরে লোহা গলানোর কাজ চালাচ্ছেন৷
কারখানাটির অবস্থান রূপগঞ্জের ভুলতার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের সাওঘাট এলাকায়। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশেই প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কমপ্লেক্সটির অবস্থান। কমপ্লেক্সের ভেতরে অনেকগুলো অবকাঠামো রয়েছে।
ফটক থেকে বেশ কিছুটা দূরে একটি বড় টিন শেডের মধ্যে লোহা গলানোর চুল্লি। সেখানে প্রায় অর্ধশত শ্রমিক কাজ করেন।
এ কারখানার মালিক সাইফুর রহমান কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দায়িত্বে রয়েছেন। অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য জানা যায়নি।
গত বছর ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করে আরআইসিএল কারখানা কর্তৃপক্ষ৷ আবেদনের প্রেক্ষিতে দুইজন পরিদর্শক কারখানাটি পরিদর্শন করে কারখানার শ্রেণি ও কাজের ধরন অনুযায়ী পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকার কথা জানান। শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পর ছাড়পত্র দেওয়ার কথা বলেন তারা৷
গত মার্চেও সরেজমিনে কারখানা পরিদর্শন করেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা৷ এ সময় কারখানার মেশিন লে-আউট, শ্রমিকদের কর্ম পরিবেশ, শ্রমিকদের নিরাপত্তা পোশাক যথাযথ না হওয়ায় তারা প্রথমে মৌখিক ও পরে লিখিতভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দেন।
তারপরও শ্রমিকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ লোহা গলানোর কারখানাটিতে উৎপাদন কার্যক্রম চলছিল৷
এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার বিকালে লোহা গলানোর সময় চুল্লির ভেতরে বিস্ফোরণে সাত শ্রমিক দগ্ধ হন৷ তপ্ত লোহা শরীরে পড়ে ঘটনাস্থলেই একজনের মৃত্যু হয়। বাকি ছয়জনকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার সেখানে আরও তিনজন মারা যান।
এখন সেখানে যে তিনজন চিকিৎসাধীন আছেন তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন আইউব হোসেন৷
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কারখানার স্টোর হাউজের কর্মকর্তা আল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, তার অফিসের পেছনেই চুল্লিটির অবস্থান। বিকালে বিকট শব্দে বিস্ফোরণের পর তিনি দৌড়ে সেখানে গিয়ে দেখেন দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, “চুল্লিটি ঠিক আছে। হয়তো ভিতরে কোনো কিছুর বিস্ফোরণ ঘটেছে। তারপর গরম লোহা এসে শ্রমিকদের গায়ে পড়েছে।“
কারখানার অবস্থানগত ছাড়পত্র ছিল বলে জানিয়েছেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ জেলার উপ-পরিচালক (ডিডি) আব্দুল্লাহ আল মামুন।
তিনি বলেন, “কারখানার উৎপাদনে যেতে হলে এনভায়রনমেন্টাল ইমপেক্ট অ্যাসেসমেন্ট প্রতিবেদন দাখিল করতে হয়। তারা সেটি দাখিল করেনি। যার কারণে তাদেরকে উৎপাদনে যাওয়ার জন্য চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি।
অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্ট টিম এখন চাইলে কারখানাটির অবস্থানগত ছাড়পত্র বাতিল করে দিতে পারে, জরিমানাও করতে পারে বলে জানান উপ-পরিচালক।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিদর্শক মেহেদী হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কারখানা চালু করার অন্তত ১৫ দিন আগে আমাদের অবহিত করতে হয়৷ কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ তা করেননি৷ নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন আছে, কারখানার অবকাঠামো, লে-আউট ঠিকমত আছে কিনা এসব বিষয়ের ওপর নির্ভর করে ছাড়পত্র দেওয়া হয়৷ তারা ছাড়পত্র ছাড়াই কার্যক্রম চালাচ্ছিল৷”
পরীক্ষামূলকভাবে চুল্লিতে লোহা গলানোর কাজ চলছিল বলে জানিয়েছেন রাজীব চন্দ্র দাস।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের এই উপমহাপরিদর্শক বলেন, “যদিও এই কাজও তারা করতে পারেন না৷
দুর্ঘটনার পর এবং শুক্রবার দুদফায় কারখানা পরিদর্শন করেছেন জানিয়ে রাজীব বলেন, “সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি পেয়েছি৷ এটা আমরা আমাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করব এবং এ বিষয়ে তদন্তের পর আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷”
আরআইসিএল কারখানার তত্ত্বাবধায়ক শফিকুল ইসলামের কাছে ছাড়পত্র ছাড়া কার্যক্রম চালানোর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এই বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না৷”
ফায়ার সার্ভিসকে না জানানো ‘রহস্যজনক’
কোনো কারখানায় দুর্ঘটনা ঘটলে কর্তৃপক্ষ প্রথমেই জানায় ফায়ার সার্ভিসকে। অথচ রহিমা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স লিমিটেডের চুল্লিতে বিস্ফোরণের পর ফায়ার সার্ভিস বা পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়নি।
বিকালে দুর্ঘটনা ঘটলেও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে খবর পেয়ে সন্ধ্যায় আড়াইহাজার ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের একটি দল কারখানায় যায়৷
স্টেশনের সাব-স্টেশন অফিসার শহীদ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিস্ফোরণের পর রহস্যজনক কারণে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে পুলিশ কিংবা ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হয়নি৷ বিভিন্ন সূত্রে খবর পেয়ে কারখানা পরিদর্শনে যায় একটি দল৷
“পরিদর্শনে কারখানাটিতে কোনো অগ্নিনির্বাপন যন্ত্র দেখা যায়নি৷ কাজের সময় শ্রমিকদের নিরপত্তার জন্য যে ধরনের নিরপত্তা সরঞ্জাম থাকার কথা সেসবও ব্যবহার করা হয়নি বলে অভিযোগ পেয়েছি৷”
ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা বলেন, “বিস্ফোরণের কারণ নিশ্চিত করা যায়নি৷ তবে লোহা গলানোর চুল্লিটি অক্ষত আছে। ধারণা করছি, চুল্লির ভেতরেই কিছু বিস্ফোরিত হয়েছে৷ পরে গরম লোহা শ্রমিকদের গায়ে এসে পড়েছে৷”
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটি একটি লোহা তৈরির কারখানা৷ কারখানাটিতে তাদের পুরোপুরি উৎপাদন কাজ শুরু হয়নি৷ তারা লোহা গলানোর চুল্লিটি চালাচ্ছিলেন৷ তাদের ফায়ার সেইফটির জন্য যথাযথ ব্যবস্থা এবং কাগজপত্র ছিল কি-না এ বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে৷”
কেন ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হয়নি এ ব্যাপারে চেষ্টা করেও রহিমা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স লিমিটেডের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
‘সব স্টিল মিলেই এইরকম চলে’
নারায়ণগঞ্জে তালিকা অনুযায়ী মোট ৯০টি রি-রোলিং ও স্টিল মিল রয়েছে বলে জানিয়েছে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। কারও মতে, এই সংখ্যা আড়াই শতাধিক। এর মধ্যে মাত্র তিন-চারটি কারখানায় শ্রমিকদের নিরাপত্তার সরঞ্জাম ও পরিবেশ রয়েছে। বাকি সবগুলো কারখানাতেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই দুর্বল৷
লোহা গলানোর এসব কারখানা উচ্চঝুঁকিপূর্ণ হলেও শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের৷
নিয়ম অনুযায়ী, কারখানা কর্তৃপক্ষের সেইফটি জ্যাকেট, জুতা, হেলমেট, গ্ল্যাভস সরবরাহ করার কথা৷ কিছু কারখানায় এসব সরঞ্জাম সরবরাহ করা হলেও তা অতি নিম্নমানের থাকে বলে অভিযোগ তাদের৷
রহিমা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স লিমিটেড (আরআইসিএল) কারখানায় কাজ করার সময় নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ না করার কথা জানান কারখানার শ্রমিকরাও৷
একজন শ্রমিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেইফটি জ্যাকেট সবসময় দেওয়া হয় না৷ সব স্টিল মিলেই এইরকম চলে৷”
আরেকজন শ্রমিক বলেন, “শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়া কারখানার লোকজনের অত ভাবার টাইম আছে? আমরাও অমনেই কাজ করি৷”
নারায়ণগঞ্জে আরআইসিএল কারখানায় যেদিন বিস্ফোরণ ঘটে, সেদিন ঢাকার শ্যামপুরের একটি স্টিল মিলে কাজ করতে গিয়ে আহত হন শ্রমিক জাকির হোসেন। তিনি থাকেন ফতুল্লার পাগলা এলাকায়৷
জাকির হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের সেইফটি জ্যাকেট তো দূরের কথা; ঠিকমতো বুটও (জুতা) পাই না৷ মাঝে মাঝে জ্যাকেট দেয়৷ কিন্তু সবসময় দেয় না৷ কোম্পানির কোনো চিন্তা নাই আমাদের নিয়া৷ হেলমেট না পাইয়া মাথায় গামছা বাইন্ধা কাজ করি৷ গায়ে মোটা জিন্সের কাপড় বাইন্ধা লই৷
“গতকাল বুট পাই নাই কারখানায়৷ খালি পায়ে কাজ করার সময় পায়ে লোহা পইড়া গেছে৷ ঠাণ্ডা লোহা ছিল, কিন্তু যে ব্যথা পাইছি তাতে আগামী ১৫ দিন কাজে যাইতে পারমু না৷ এমন ঘটনা প্রায়সময় হয় আমাদের৷”
রি-রোলিং স্টিল মিলস শ্রমিক ফ্রন্টের নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক এস এম কাদির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নারায়ণগঞ্জে অন্তত আড়াইশ রি-রোলিং ও স্টিল মিল আছে৷ স্টিল মিলের সংখ্যাই শতাধিক৷ সরাসরি লোহা গলানোর মত অতিঝুঁকির এ কাজে কোনো সেইফটি ব্যবস্থা শ্রমিকদের জন্য থাকে না৷ হাতে গোনা কয়েকটা কারখানায় সেইফটি সরঞ্জাম প্রোভাইড করলেও তা অতি নিম্নমানের৷
“সেইফটি ইক্যুইপমেন্ট না পেয়ে পুরান জিন্সের কাপড়, গামছা ব্যবহার করেন শ্রমিকরা৷ রি-রোলিং বা স্টিল মিলে কাজ করেন কিন্তু আহত হননি– এমন কোনো শ্রমিক খুঁজে পাবেন না৷”
শ্রমিকদের নিরাপত্তার ব্যাপারে বারবার বললেও কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করেন না অভিযোগ করে এই শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা বলেন, “তদারকি করার জন্য সরকারি যেসব সংস্থা আছে তারা আর্থিক সুবিধা নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেন না৷ প্রতিমাসে একবার কারখানায় পরিদর্শন করা দরকার৷ কিন্তু অসাধু সরকারি কর্মকর্তারা পরিদর্শনে গিয়ে টাকা নিয়ে পরে চুপ থাকেন৷
“এমনকি কারখানার অধিকাংশ শ্রমিকের নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র দেওয়া হয় না৷ হতাহত হলে আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পাওয়ারও সুযোগ থাকে না৷”
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জের উপমহাপরিদর্শক রাজীব চন্দ্র দাস বলেন, “আমরা প্রায় সময় এসব কারখানা ভিজিট করে তাদের নোটিস দিই৷ নোটিসের পরও ব্যবস্থা না নিলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়৷ কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সবসময়ই উদাসীন থাকে।“
নারায়ণগঞ্জে লোহা গলানোর কারখানায় চুল্লিতে বিস্ফোরণ, শ্রমিকের মৃত্যু
নারায়ণগঞ্জে লোহা গলানোর চুল্লি বিস্ফোরণে মৃত্যু বেড়ে ৪
শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা সেইফটি অ্যান্ড রাইটসের তথ্য বলছে, গত বছর সারাদেশে কর্মক্ষেত্রে বিস্ফোরণে ৮৪ জন নিহত হয়েছেন।
কারখানায় বিদ্যুৎ বন্ধ, মামলা হয়নি
বিস্ফোরণ ও নিহতের ঘটনার পর আরআইসিএল কারখানায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছে রূপগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। এ ছাড়া এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে বিস্ফোরণের এক দিন পরেও কোনো মামলা হয়নি৷
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল হক বলেন, “কী কারণে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে এবং এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সে সিদ্ধান্ত নিতে কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ তারা দ্রুতই প্রতিবেদন দেবেন৷
“আমরা কারখানাটির উৎপাদন কার্যক্রম চালানোর অনুকূলে কোনো প্রকার কাগজ এখনও পাইনি৷ তদন্তের পর সামগ্রিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ আপাতত কারখানার বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে৷”
মামলা ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার ওসি এ এফ এম সায়েদ বলেন, “ভিকটিমের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও মামলা করা হয়নি৷ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে৷ ভিকটিমের পক্ষ থেকে মামলা না করলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।“
এ ঘটনায় নিহত চারজন হলেন- শংকর (৪০), ইলিয়াস আলী (৩৫), আলমগীর (৩৩) এবং লিয়ন (২০)।
আহত যারা চিকিৎসাধীন, তাদের মধ্যে ইব্রাহিমের শরীরের ২৮ শতাংশ, মো. জুয়েলের শরীরের ৯৭ শতাংশ, গোলাম রাব্বির শরীরের ৯৯ শতাংশ পুড়ে গেছে।