পাবনায় ছেলের সঙ্গে এসএসসি পাস করলেন মুঞ্জুয়ারা

সন্তানদের পড়ালেখা করাতে গিয়ে আবারও পড়াশোনার প্রতি টান অনুভব করেন তিনি।

পাবনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Nov 2022, 06:08 PM
Updated : 29 Nov 2022, 06:08 PM

অভাব-অনটনের কারণে অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়ায় পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার গৃহবধূ মুঞ্জুয়ারা খাতুন পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে পারেননি; কিন্তু ২০ বছর পর ছেলের সঙ্গে এসএসসি পাস করে এলাকায় সাড়া ফেলে দিয়েছেন।

সোমবার প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার শামীমা জাফর মৎস্য ইনস্টিটিউট থেকে মুঞ্জুয়ারা খাতুন জিপিএ ৪ দশমিক ৯৩ পেয়ে এবং তার ছেলে মো. মেহেদী হাসান ভাঙ্গুরা উপজেলার খানমরিচ বিএম স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোকেশনাল শাখা থেকে জিপিএ ৪ দশমিক ৮৯ এসএসসি উত্তীর্ণ হয়েছে।

মুঞ্জুয়ারা খাতুন ভাঙ্গুরা উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের ভ্যানচালক আব্দুর রহিমের স্ত্রী। এই দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়েটি ওই গ্রামের সুলতানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী।

মুঞ্জুয়ারা খাতুন বলেন, ২০ বছর আগে অভাব-অনটনের সংসারে বাবা বিয়ে দিয়ে দেন। বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে এসে আর পড়াশুনা করা হয়ে ওঠেনি। বিয়ের চার বছরের মাথায় ছেলের জন্ম হয়, পরে একটি মেয়ে হয়। সন্তানদের পড়ালেখা করাতে গিয়ে আবারও পড়াশোনার প্রতি টান অনুভব করেন তিনি।

পড়াশোনার জন্য স্বামীর উৎসাহ আর সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে মুঞ্জুয়ারা খাতুন বলেন, “স্বামীকে লেখাপড়ার কথা বললে তিনি আমাকে সাহস যোগান। স্বামীর অনুপ্রেরণা আর আর্থিক সহযোগিতায় আমার এই অর্জন।“

“আমার ফলাফলের নেপথ্যে যা কাজ করেছে, তা হলো ইচ্ছাশক্তি। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে বড় করেছি, এমন সময় নিজেরও মনে হয়েছে একটু পড়াশোনা করতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু দুই সন্তানের পর নিজের পড়ালেখার খরচ চালানোর সামর্থ্য আমার ছিলো না। তবুও আমি মনোবল হারাইনি।”

এসএসসি পাশের পর উচ্চশিক্ষার আকাঙ্ক্ষা বেড়ে গেছে জানিয়ে মুঞ্জুয়ারা খাতুন জানান, তিনি ন্যূনতম ডিগ্রি পাশ করতে চান। তবে পরিবারের আর্থিক অবস্থার মধ্যে ছেলেমেয়ের পাশাপাশি নিজের লেখাপড়া কতোটা চালিয়ে নিতে পারবেন তা নিয়ে চিন্তিত তিনি।

ছেলে মেহেদী হাসানও মায়ের সঙ্গে এসএসসি পাশ করায় খুশি। সে বলে, “লেখাপড়ার কোনো বয়স নেই। মায়ের সঙ্গে এসএসসি পাশ করে আমি গর্ববোধ করছি। আপনারা দোয়া করবেন, আমি যেন একজন মানুষের মতো মানুষ হতে পারি।”

খানমরিচ বিএম কলেজের অধ্যক্ষ মোফাজ্জল হোসেন সাগর বলেন, “মেহেদী হাসান আমার প্রতিষ্ঠানের ভোকেশনাল শাখার নিয়মিত শিক্ষার্থী। এখন শুনলাম, ছেলের সঙ্গে তার মা এসএসসি পাশ করেছেন, বিষয়টি সত্যিই আনন্দের।”

ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান খান বলেন, “এ ধরনের উদাহরণ সমাজের জন্য খুবই ইতিবাচক। মা-ছেলের এই সফলতা অনেককেই উদ্দীপ্ত করবে। আমরা তাদেরকে অভিনন্দন জানাই।”