“আটজন নিহতের পর ভয় ও আতঙ্ক আরও বেড়েছে।”
Published : 08 Apr 2023, 08:59 PM
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলায় দুই পক্ষের গোলাগুলিতে নিহত আটজনই বম জনগোষ্ঠীর সদস্য।
বান্দরবান বম স্যোশাল কাউন্সিলের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে শনিবার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইনি প্রক্রিয়া শেষে দুপুর আড়াইটার দিকে আটজনের মরদেহ বম সোস্যাল কাউন্সিল ও নিহত কয়েকজনের পরিবারের সদস্যদের হাতে হস্তান্তর করা হয়। কয়েকটি মরদেহ গরমের কারণে কিছুটা পচে গেছে; দুর্গন্ধ বের হয়েছে।”
নিহত আটজনের মধ্যে ছয়জনই একটি পাড়ার বাসিন্দা। তারা হলেন- রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাংখুম বম (৪৫), লাল ঠাজার বম (২৭), ভানলাল দুহ বম (৩৫), সান থির থাং বম (২২), বইরেম বম (১৭) ও লাললিয়ান ঙাক বম (৪৪)।
এর মধ্যে লাল ঠাজার বম জুরভারং পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক ছিলেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালে আসা স্বজনরা।
নিহত অন্য দুজন হলেন রোয়াংছড়ি পাইক্ষ্যং পাড়ার বাসিন্দা জেহিম বম ও রনিন পাড়ার বাসিন্দা বমরাম বম। মরদেহ যার যার পাড়ায় ধর্মীয় রীতি অনুসারে দাফন করা হবে জানায় বম স্যোশাল কাউন্সিল।
বম স্যোশাল কাউন্সিলের একাধিক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বম জনগোষ্ঠীর লোকজন এমনিতে আগে থেকে আতঙ্কে রয়েছে। আটজন নিহতের ঘটনার পর ভয় ও আতঙ্ক আরও বেড়েছে।”
রোয়াংছড়ি থানার ওসি আব্দুল মান্নান বিকালে সাংবাদিকদের জানান, আটজন নিহতের ঘটনায় থানায় এখনও পর্যন্ত মামলা হয়নি। এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ভয়ে পাড়া ছেড়ে পালিয়ে এসে রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া লোকজনের নিরাপত্তার জন্য স্কুলের পাশে অস্থায়ী পুলিশ বক্স বসানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে রোয়াংছড়ি ও রুমা সংযোগ সড়কের মাঝামাঝি খামতাং পাড়ায় পাহাড়ি দুটি সশস্ত্র সংগঠনের মধ্যে গোলাগুলিতে আটজন নিহত হয়। পরে জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে খবর পেয়ে শুক্রবার দুপরে ঘটনাস্থলে গিয়ে আটজনর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বান্দরবান সদর হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।
কোন দুটি সংগঠনের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে এ ব্যাপারে পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন এবং এলাকাবাসী কোনো কথা না বললেও শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে ‘ভা তে কুকি’ নামের একটি পেইজ থেকে রোয়াংছড়ির হত্যাকাণ্ডে নিহত সাতজনের নাম প্রকাশ করা হয়।
পরে আরেকটি পোস্টে চারজনের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ ছয়জনের ছবি প্রকাশ করা হয়। তারা সবাই বম সম্প্রদায়ের। ‘ব্রাশফায়ারে’ এই হত্যাকাণ্ডের জন্য কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে ‘মদদপুষ্ট সংস্কারপন্থিদের’ দায়ী করা হয়েছে। এই পেইজটি থেকে কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্টের কার্যক্রমের প্রচার চলতে দেখা যায়।
ওই এলাকায় সংস্কারপন্থি বলতে পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-ইউপিডিএফকে (গণতান্ত্রিক) বোঝান স্থানীয়রা। তবে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ওই পেইজের তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি। জেলা পুলিশ সুপারও এ বিষয়ে ‘অবগত নন’ বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
আর গোলাগুলির ওই ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) এর বান্দরবান জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক উবা মং মারমা।
গোলাগুলির আতঙ্কে পাড়া ছেড়ে পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয় খামতাং পাড়ার খিয়াং সম্প্রদায়ে ৮০টি পবিারের লোকজন। তার মধ্যে রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের আশ্রয় নেন ১৮৫ জন ও রুমা উপজেলার বম কমিউনিটি সেন্টারে আশ্রয় নেন ২২টি পরিবারের ৮৫ জন।
আশ্রয় নেওয়া লোকজনদের খাবার, কম্বল ও অস্থায়ী শৌচাগারে ব্যবস্থা করার কথা জানিয়ে রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোরশেদ আলম চৌধুরী (রুমা উপজেলার দায়িত্বেও রয়েছেন) বলেন, “পরিস্থিতি ভাল না হওয়া পর্যন্ত তারা যতদিন থাকবেন উপজেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনী সদস্যরা সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।“
রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উহ্লা মং মারমা জানান, রুমায় বম কমিউনিটি সেন্টারে আশ্রয় নেওয়া লোকজনদের জন্য তার ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে শনিবার সকালে ২০০ কেজি চাল ও অন্যান্য খাবার সামগ্রী পাঠানো হয়েছে।
সাবির্ক বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জেলা পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভয়-আতঙ্কে যারা রয়েছে তাদের সঙ্গে পুলিশের টহল টিম সবসময় যোগাযোগ রাখছে। স্বাভাবিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা আছে। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। স্কুলে আশ্রয় নেওয়া লোকজনদের জন্য পুলিশ ও সেনাবাহিনী কাজ করছে। তাদেরকে সাহস দেওয়া হচ্ছে।
পুরনো খবর: