হত্যার পাঁচ বছর পর ৩ আসামি গ্রেপ্তার, আদালতে স্বীকারোক্তি

বিউটির ‘দুই প্রেমিক’, দুই খালা ও খালু মিলে এই হত্যাকাণ্ড ঘটান বলে জানায় পিবিআই।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
Published : 29 May 2023, 04:08 PM
Updated : 29 May 2023, 04:08 PM

সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরের এক নারী হত্যা মামলায় তিন আসামিকে পাঁচ বছর পর গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই।তারা আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

সোমবার সকালে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সন্মেলনে সিরাজগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার রেজাউল করিম এ তথ্য জানান।

গত ২৩ ও ২৫ মে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় এবং ২৬ মে ওই তিনজন আদালতে জবানবন্দি দেন।

গ্রেপ্তাররা হলেন এনায়েতপুর থানার খোকশাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা স্বপন ব্যাপারী (৩৭), ব্রাক্ষণগ্রামের মো. মোমিন (৫০) ও তার স্ত্রী আনু বেগম (৪০)।

পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার রেজাউল করিম বলেন, ২০১৪ সালে কোচগাঁও গ্রামে বিউটি খাতুনের (২২) বিয়ে হয়। স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ২০১৮ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়। এরপর থেকে বিউটি বাবার বাড়িতে থাকেন। এ অবস্থায় প্রতিবেশী ওমর ফারুকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। এক পর্যায়ে ওমর ফারুক বিয়ের প্রস্তাব দেন বিউটিকে। কিন্তু বিউটি তার প্রস্তাবে রাজি হননি।

“একই সময়ে বিউটির ছোট বোন আলোমতির সঙ্গে তার স্বামীর পরিবারে ঝামেলা হয়। তখন বিউটির বাবা সাচ্চু মিয়া বিষয়টি সমাধানের জন্য পাশের গ্রামের স্বপন ব্যাপারীর সহযোগিতা চান। স্বপনের সহযোগিতায় ছোট বোনের সংসারের ঝামেলা মিটে যাওয়ায় বিউটির সঙ্গে স্বপনের সু-সর্ম্পক তৈরি হয়।”

তিনি বলেন, এদিকে বিউটির ছোট খালা আন্না ‘মাদক ব্যবসায়ী’ হওয়ায় মাদক সেবনের জন্য স্বপন ব্যাপারী প্রায়ই তাদের বাড়িতে আসতেন। বিউটিও সেখানে গিয়ে স্বপনের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতেন। এক পর্যায়ে সর্ম্পক গভীর হলে বিউটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে যান।এরপর স্বপনকে বিয়ে করার জন্য চাপ দেন বিউটি। কিন্তু স্বপন বিবাহিত হওয়ায় তাতে রাজি হননি।

পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, “এ অবস্থায় স্বপন বিউটির আগের প্রেমিক ওমর ফারুকের সঙ্গে পরামর্শ করে বিউটিকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এরপর বিউটির ছোট খালা আন্নাকেও সঙ্গে থাকার প্রস্তাব দেন স্বপন। নিজের ভাগনিকে হত্যায় রাজি না হওয়ায় স্বপন ও ওমর ফারুক তাকে ৫০ হাজার টাকা দেন।

“তখন আন্না এই টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা তার মেঝ বোন আনুকে দিয়ে হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করতে বলেন। টাকা পেয়ে আনু তার স্বামী মোমিনকেও সঙ্গে থাকতে রাজি করান।”

জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, পরিকল্পনা মোতাবেক ২০১৮ সালের ১৩ মে রাতে স্বপন, ফারুক, খালু মোমিন, মেঝ খালা আনু ও ছোট খালা আন্না মিলে নিজ ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় বিউটির মুখে বালিস চাপা দিয়ে তাকে হত্যা করেন।

হত্যাকাণ্ডের পর রাতেই বাইরে থেকে দরজা খোলা দেখে বিউটির মা ভেতরে ঢুকে মেয়েকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান; এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে ২০১৮ সালের ১৪ মে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন বলে তিনি জানান।

পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার বলেন, থানা পুলিশ দুই বছর মামলা তদন্ত করলেও রহস্য উৎঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এ অবস্থায় বাদীর আবেদনের ভিত্তিতে মামলাটি পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

“এরপর পিবিআইয়ের এসআই ফয়সাল আহমেদ মামলার তদন্ত শুরু করেন। ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় পলাতক থাকা ওমর ফারুককে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠান হয়।”

তিনি বলেন, পরবর্তীতে গোয়েন্দা তথ্য এবং তথ্য প্রযুক্তি সহায়তায় চলতি মাসের ২৩ ও ২৫ তারিখে নিহতের প্রেমিক স্বপন, খালু মোমিন ও মেঝ খালা আনুকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এরপর তারা জবানবন্দি দিলে আদালত তাদের জেলহাজতে পাঠায়; তবে নিহতের ছোট খালা আন্না এখনও পলাতক রয়েছেন বলে জানান পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা।