কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর ফরিদপুরের চরাঞ্চলে ৮৫০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষাবাদ হয়েছে।
Published : 18 Mar 2024, 12:38 PM
ফরিদপুরের পদ্মার বুকজুড়ে অব্যবহৃত পতিত জমিকে ব্যবহার করে নানা ধরনের ফসলের আবাদ করছেন কৃষকরা। বিস্তীর্ণ এই বালুচরে কয়েক বছর ধরে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।
জেলা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর চরাঞ্চলে ৮৫০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষাবাদ হয়েছে। এতে প্রায় ৫০ কোটি টাকার অধিক মূল্যের মিষ্টি কুমড়ার বাজার সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে সদর উপজেলার ডিক্রিচর ও চর মাধবদিয়া ইউনিয়নের পদ্মার দুর্গম চরে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে জেগে উঠেছে বিস্তীর্ণ বালুচর। যেদিকে দৃষ্টি যায় শুধু ধু-ধু বালু আর বালু।
এসব বালু মাটিতে আগে তেমন ফসল ফলানো যেত না। কিন্তু এখন বদলে গেছে চিত্র। চরের কৃষকরা অনাবাদি সেই জমিকে ব্যবহার উপযোগী করে ফসল ফলাচ্ছেন।
কয়েক বছর ধরে বালু আর পলি মাটিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করছেন তারা। ভালো লাভ পাওয়ায় চরাঞ্চলবাসীর মুখে হাসি ফুটিয়েছে কুমড়া।
জেলায় এ বছর ৫০ কোটি টাকার অধিক মূল্যের মিষ্টি কুমড়া উৎপাদন হয়েছে। এর বেশির ভাগই চরাঞ্চলে উৎপাদিত। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাপারীরা এসে ক্ষেত থেকেই উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
এ ছাড়া কুমড়া বিক্রির জন্য হাটও রয়েছে। এ বছর কুমড়ার বাম্পার ফলন এবং দাম ভালো পাওয়ায় খুশি চাষিরা। প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়া ক্ষেত থেকে বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা।
ডিক্রিচরের বাসিন্দা কৃষক খলিলুর রহমান। এবার চরাঞ্চলে মিষ্টি কুমড়া আবাদ করেছেন তিনি। তিনি জানান, প্রতি বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে মিষ্টি কুমড়া আবাদে তার খরচ হয়েছে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।
কৃষক খলিলুর বলেন, মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মধ্যেই মিষ্টি কুমড়া বিক্রির উপযোগী হয়ে থাকে। সাথি ফসল হিসেবেও এর চাষাবাদ করা হয়ে থাকে।
এভাবেই চরের মানুষদের অর্থনৈতিক ও জীবনমানের উন্নয়ন ঘটছে বলে জানান এ চরাঞ্চলের চাষিরা।
তারা জানান, এক সময় চরে শুধু গবাদি পশু পালনের বাইরের ভূট্টা আর বাদামের আবাদ হত। কিন্তু এখন সময় পরিবর্তন হয়েছে। এই চরের বাসিন্দারা এখন বিভিন্ন জাতের সবজি, ডাল, কলা, তরমুজ, মিষ্টি কুমড়াসহ নানা ধরনের ফসলের আবাদ করছে। এতে করে দিন দিন এখানকার চাষিদের আর্থিক সচ্ছলতা বাড়ছে।
চর মাধবদিয়ার কৃষক তুহিন মণ্ডল বলেন, এখানে কয়েক বছর ধরে মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়। পাইকাররা চরে এসে মাল কিনে নিয়ে যায়। আবার হাট থেকেও পাইকাররা মিষ্টি কুমড়া কিনে নিয়ে যায়। কুমড়া চাষের মধ্য দিয়ে এই চরাঞ্চলের মানুষদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক বছর ধরে অনাবাদি জমি চাষের উপযোগী করে তুলেছেন চরাঞ্চলের বাসিন্দারা। তাদের সব ধরনের সহায়তা করা হয়ে থাকে।
এ ছাড়া পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হওয়ায় এ অঞ্চলের চাষিরা লাভবান হচ্ছেন বলে জানান তিনি।
রফিকুল বলেন, কৃষি অর্থনীতির মাধ্যমে অবহেলিত চরাঞ্চলের মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন ঘটেছে। সরকারি ব্যবস্থায় দুর্গম চরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে, হয়েছে সড়কের উন্নয়ন। যার ফলে তারা (চরবাসী) সহজেই তাদের উৎপাদিত পণ্যটির বাজারজাতকরণ করতে পারছেন।