পেঁয়াজের সাদা ফুলে ‘কালো সোনা’র স্বপ্ন রাজবাড়ীর চাষিদের 

এ বছর জেলায় ৭৫-৮০ টন বা ১ হাজার টাকা কেজি ধরলেও ৮০ কোটি টাকার পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন হবে বলে আশা কৃষি বিভাগের।

শামিম রেজা, ‍রাজবাড়ী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 March 2023, 10:54 AM
Updated : 17 March 2023, 10:54 AM

সবুজ কন্দের ডগায় কদমের মতো দেখতে সাদা সাদা ফুলে ভরে গেছে রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার গরিয়ানা গ্রামের মাঠ। তবে পেয়াজের এই সাদা ফুল থেকেই পাওয়া যাবে কালো বীজ, যাকে কৃষকরা বলছেন ‘কালো সোনা’। 

চাষিরা বলছেন, আবহাওয়া ভালো হলে খরচ বাদে এই পেয়াজের বীজ চাষে লাভ হয় দ্বিগুণেরও বেশি, তাই এগুলো ‘কালো সোনা’ নামে খ্যাতি পেয়েছে।   

উপজেলার মদাপুর ইউনিয়নের গরিয়ানা গ্রামের পেঁয়াজ বীজ চাষি জয়নাল মোল্লা বলেন, “পেঁয়াজের দানা বিক্রি করে আমি ১০ বিঘা জমি কিনেছি। সংসারের অভাব দূর করেছি। বাড়িতে ঘর করেছি। ছেলে-মেয়েকে লেখা-পড়ার খরচ চালাচ্ছি, আল্লাহর রহমতে এই ক্ষেত করে আমি ভালো আছি।” 

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম রাসুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাজবাড়ী জেলা পেঁয়াজ চাষের জন্য উপযোগী একটি জেলা। এই জেলার কৃষকেরা পাশাপাশি পেঁয়াজ বীজ আবাদ করে থাকেন। 

তিনি  বলেন, “এ বছর জেলায় ৭৫-৮০ টন পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন হতে পারে। ১ হাজার টাকা কেজি ধরলেও ৮০ কোটি টাকার পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন হবে। “ 

সরেজমিনে গরিয়ানা গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠে মাঠে এখন শোভা পাচ্ছে পেঁয়াজ বীজের সাদা ফুল। শেষ সময়ের পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষিরা। 

পেঁয়াজ বীজের গাছে শক্তি যোগানোর জন্য অনেকে কীটনাশক স্প্রে করছেন। মৌমাছি সংকট থাকা অনেক কৃষক আবার হাত দিয়েই পেঁয়াজ ফুলের ‘মধু ফেলা’র কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত রোপন করা পেঁয়াজ বীজ গাছের ফলন ভালো হওয়ায় লাভের স্বপ্ন বুনছেন তারা। 

পেঁয়াজ বীজ চাষি জয়নাল মোল্লা বলেন, “আমার দাদা যখন মারা যায় তখন আমাদের এক বিঘা জমি থাকে। তখন থেকেই আব্বার সাথে আমি এই দানা ক্ষেত (পেঁয়াজ বীজ) আবাদ শুরু করি। গত ৪০ বছর ধরে আমি দানা ক্ষেত করে আসছি।” 

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই এলাকায় আমিই প্রথম দানা চাষ শুরু করি। এই ফসল আবাদে যা খরচ হয় তার থেকে দ্বিগুণ লাভ থাকে। আমার দেখাদেখি এলাকার এখন এই ফসলের চাষ করছে।” 

“দুই বছর আগে ছয় লক্ষ টাকার দানা বিক্রি করেছি। এ বছরও ৫০ শতাংশ জমিতে দানা ক্ষেত করেছি। খুবই সুন্দর ফুল ফুটেছে। ঝড় বা শিল না পড়লে আশা করছি এবারও লাভ পাবো।” 

আরেক চাষি নব কুমার বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করতে খরচ পড়ে ৫০-৬০ হাজার টাকা। আর বিঘা প্রতি পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন হয় দুই মণের বেশি যা দুই লক্ষ টাকা বিক্রি হয়। 

“খরচ বাদে লাভ থাকে দ্বিগুণ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছরও পেঁয়াজ বীজে লাভবান হবো।” 

ক্ষেতে  কীটনাশক  ছিটাতে  ছিটাতে কৃষক অমল কুমার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই ফসলে আমাদের ভালো লাভ থাকে। আমি গত দশ বছর ধরে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করে থাকি। 

“এ বছর ১৫ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে ৯০ হাজার টাকার বীজ বিক্রি করতে পারবো আশা করছি।” 

মৌমাছি কম থাকায় হাত দিয়ে নেড়ে মধু ফেলে দেওয়ার ফাঁকে আরেক চাষি ওয়াজেদ শেখ বলেন, “আমরা এখন পেঁয়াজ বীজ ক্ষেতে ব্যস্ত সময় পার করছি। বিভিন্ন ওষুধ স্প্রে করছি। হাত  দিয়ে ফুলের মধু ফেলে দিচ্ছি। 

“এই ক্ষেত থেকে যে বীজ উৎপাদন হয় নিজেদের জন্য যতটুকু দরকার ততটুকু রেখে বাকিটা বিক্রি করে দিই। এই ফসলে খরচের দ্বিগুণ-তিনগুণ লাভ থাকে।” 

কৃষি কর্মকর্তা গোলাম রাসুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গোলাম রাসুল বলেন, এ বছর ১৭২ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিলো। কিন্তু গত বছর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে চাষিরা সময়মত বীজ রোপন করতে পারেনি। যার ফলে চলতি মৌসুমে জেলায় ১৪৩ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করা হয়েছে। 

কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষি কর্মকর্তাগণ নিয়মিত চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এবার জেলায় এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ কৃষক পেয়াজ বীজ আবাদ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজ বীজের ফলনও ভালো হবে, তাতে লাভবান হবেন চাষিরা।