নতুন চাকরি হওয়ায় আনন্দ উদযাপন করতে তুষার তার এক সহকর্মীকে নিয়ে বেইলি রোডের ওই রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলেন।
Published : 01 Mar 2024, 06:07 PM
ঢাকার বেইলি রোডে ভবনে অগ্নিকাণ্ডে নিহত সংবাদকর্মী তুষার হাওলাদারের মরদেহ ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলায় তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছেছে।
শুক্রবার বিকালে লাশ গ্রামে পৌঁছালে স্বজন ও এলাকাবাসীর আর্তনাদে এলাকাজুড়ে চলে শোকের মাতম; আর ছেলের লাশ দেখে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন মা।
বৃহস্পতিবার রাতে গ্রিন কোজি কটেজে আগুনে তুষার হাওলাদারের সঙ্গে মারা যান সহকর্মী সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রীও।
তুষারের ওই এলাকার দীনেশ চন্দ্র হাওলাদার ছেলে। তিনি ঢাকায় পরিবারের সঙ্গে গোড়ানে ভাড়া বাসায় থাকতেন।
বিকাল সাড়ে ৫টায় মৃতদেহবাহী গাড়ি করে উপজেলার শৌলজালিয়া ইউনিয়নের তালগাছিয়া গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায় তুষারের মরদেহ। বাবা-চাচা-চাচাত বোনসহ ঢাকায় থাকা স্বজনরা মরদেহ নিয়ে যান।
এর আগে ছেলের মৃত্যুর খবর মা অঞ্জনা রানী হাওলাদারকে জানানো হয়নি। বাড়ির উঠানে ছেলের মৃতদেহ দেখে বার বার মূর্ছা যান মা অঞ্জনা রানী। কোনোভাবেই তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলেন না স্বজনরা। এলাকায় তৈরি হয় শোকাবহ পরিবেশ।
তুষারের বাবা দীনেশ চন্দ্র হাওলাদার বলেন, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি থেকে সদ্য সাংবাদিকতায় স্নাতক পাশ করা তুষার ঢাকার একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমে কাজ করতেন।
২৪ বছর বয়সি তুষার ফেব্রুয়ারিতে ‘দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ’ ছেড়ে ‘কেস্টারটেক’ নামে একটি অনলাইন মাল্টিমিডিয়ায় কাজ শুরু করেন।
নতুন চাকরি হওয়ায় আনন্দ উদযাপন করতে সহকর্মী অপর সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রীকে নিয়ে বেইলি রোডের ওই রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলেন তুষার। কিন্তু ভবনে লাগা আগুনে অন্যদের সঙ্গে তাদেরকেও সব ছেড়ে পাড়ি দিতে হয়েছে না ফেরার দেশে।
ঝালকাঠির গ্রামের বাড়ির পারিবারিক শ্মশানে তুষারের মরদেহ সমাহিত করা হবে বলে জানান দীনেশ চন্দ্র হাওলাদার।
বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনটিতে আগুন লাগে। প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে আগুন নিভিয়ে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস।
এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয়েছেন ৪৬ জন। সবার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে রাখা হয়। সকাল থেকে লাশের পরিচয় নিশ্চিত করে ৩৫ জনের মরদেহ স্বজনের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তবে তাদের মধ্যে ছয়জনকে আর চেনার উপায় নেই। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় শনাক্ত হলে তাদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিহতের এই সংখ্যা জানিয়ে বলেছেন, আহত ১২ জনের মধ্যে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে ১০ জন ভর্তি আছেন আর ঢাকা মেডিকেলে আছে দুইজন। এই ১২ জনের প্রত্যেকের শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়ায় তারা কেউ শঙ্কামুক্ত নন।
আরও পড়ুন: