কারখানা কর্তৃপক্ষ রোববার তাদের প্রায় ১ হাজার ৮০০ শ্রমিককে ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।
Published : 26 Mar 2024, 08:29 PM
বাগেরহাটের মোংলা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভের পর সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনায় শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১০ জনকে।
সোমবার গভীর রাতে ব্যাগ ও লাগেজ তৈরির প্রতিষ্ঠান ভিআইপি ইন্ড্রাস্ট্রিজ বাংলাদেশ লিমিটেডের মানবসম্পদ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মাইদুল ইসলাম রাজু বাদী হয়ে মামলাটি করেন বলে মোংলা থানার ওসি কে এম আজিজুল ইসলাম জানান।
তিনি বলেন, মামলায় চার নারীসহ ১০ শ্রমিকের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৪০০ থেকে ৫০০ শ্রমিককে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ১০ জনকে মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তাররা হলেন- মোংলা উপজেলার মিঠাখালী এলাকার সুমন হাওলাদার (২০), অমৃত মণ্ডল (২৩) ও রহিমা বেগম (২৩), উপজেলার উত্তর চাঁদপাই গ্রামের সিফাত উল্লাহ শেখ (২২), মোংলা শহরের বাতেন সড়কের নাসরিন জাহান ইভানা (২২), সুন্দরবন ইউনিয়নের বাঁশতলা গ্রামের গ্রামের লিপি বেগম (৩৫), রামপাল উপজেলার ফয়লা এলাকার রুমানা আক্তার (১৮), তেলিখালী এলাকার শেখ আবু ফাহাদ (২০), ডাকরা গ্রামের আজিজুল ফকির (২০) গোপীনাথপুর গ্রামের মো. মাসুদ হাওলাদার (২১)। তারা সবাই ভিআইপি ইন্ড্রাস্ট্রিজের ছাঁটাই হওয়া কর্মী।
মোংলা ইপিজেডে ভিআইপি ইন্ড্রাস্ট্রিজের সাতটি প্ল্যান্ট আছে। এতে কাজ করেন প্রায় সাড়ে ৬ হাজার শ্রমিক।
আন্দোলনকারী শ্রমিকদের অভিযোগের বরাতে পুলিশ জানিয়েছিল, ভিআইপি লাগেজ কারখানা কর্তৃপক্ষ রোববার তাদের প্রায় ১ হাজার ৮০০ শ্রমিককে ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। সোমবার তারা ছাঁটাই কার্যকর করেছে।
ভিআইপি লাগেজ বলছে, তারা নিয়ম অনুযায়ী শ্রমিকদের এক মাসের বেতন, ভাতা ও বোনাস প্রদান করেছে। তবে শ্রমিকরা বলছেন, তারা টাকা পাননি।
এর মধ্যেই সোমবার সকালে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করে। শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ভাঙচুরের অভিযোগ করেছিল পুলিশ। সেসময় ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছিল পুলিশ। রাতে মামলার পর তাদেরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এ ঘটনায় মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পরিবেশ ঘোলাটে করার উদ্দেশ্যে বেপজার মেইন গেইটে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। তাদের বোঝানের চেষ্টা করা হলেও শ্রম আইন না মেনে দুপুর সোয়া ১টার দিকে লাঠিসোঁটা ও ইট-পাটকেল নিয়ে বেপজা সিকিউরিটি এবং ভিআইপি কারখানার কর্মকর্তাদের উপর হামলা করে।
একপর্যায়ে ভিআইপির ৭ নম্বর প্লান্টের ভেতর থাকা মূল্যবান মালামাল লুট করে যার মূল্য আনুমানিক ৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া মালামাল ও জানালার গ্লাস, দুটি কন্টেইনার ট্রাক, বেপজা সিকিউরিটি রুমে ভাঙচুর করে। এতে সর্বমোট ৫০ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
এজাহারের বরাতে পুলিশ জানায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ভিআইপি ইন্ড্রাস্ট্রিজের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াতে বেপজা শ্রম আইন অনুযায়ী কোম্পানির বিভিন্ন প্লান্টের ১ হাজার ৭৭৭ জন শ্রমিককে এক মাসের অগ্রিম বেতন ও বোনাস দিয়ে সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ছাঁটাই কার্যক্রম শুরু করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলন শুরু করে।
প্রতিষ্ঠানটির মানবসম্পদ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মাইদুল ইসলাম রাজু সাংবাদিকদের বলেন, “কোম্পানির অবস্থা একটু খারাপ যাচ্ছে। গত তিন মাসে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ম্যানেজমেন্ট লোক ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। সেই অনুযায়ী ১ হাজার ৭৭৭ জন শ্রমিককে ছাঁটাইয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
“তাদের চলতি মাস এবং আগামী মাসের বেতন ও ঈদের বোনাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা তা না মেনে আন্দোলন শুরু করেন। আমরা যেহেতু ছাঁটাইয়ের এক মাস আগে নোটিশ দিতে পারিনি। তাই তাদের বেতন ও ঈদের বোনাসও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা তা না মেনে আন্দোলন শুরু করে।”
মাইদুল ইসলাম রাজু বলেন, “আমাদের কর্তৃপক্ষ ছাড়াও বেপজা, পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তা মিলে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করে। তাদের আইনও দেখানো হয়েছে। কিন্তু তারা তা না মেনে ভেতরে আমাদের উপর হামলা, ভাঙচুর করে। এক পর্যায়ে বেপজার সিকিউরিটি গেইট খুলে দিলে সেখানেও ভাঙচুর শুরু করে। আমরা ধারণা করছি, পেছন থেকে কেউ এখানে ইন্ধন দিচ্ছে। সব শ্রমিক এখানে জড়িত না।”
এদিকে ঘটনার পর মঙ্গলবার স্বাধীনতা দিবসের ছুটি ছিল কারখানাতে।
মোংলা থানার ওসি কে এম আজিজুল ইসলাম বলেন, মামলার পর এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।