বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৩০০ কোটি টাকা দেনাসহ দায়িত্ব গ্রহণ করলেন নতুন মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত।
মঙ্গলবার দুপুরে তিনি মেয়রের দায়িত্বভার নেন। দায়িত্ব তুলে দেন সিটি করপোরেশনটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব মাসুমা আক্তার।
সিটি মেয়র ও কাউন্সিলরদের অভিষেক উপলক্ষে নগর ভবনের সামনে ফজলুল হক এভিনিউ এলাকায় অনুষ্ঠান হয়।
অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন বরিশাল ৫ আসনের সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম, বরিশাল ২ আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহে আলম, বরিশাল ৪ আসনের সংসদ সদস্য পংকজ নাথ, সংরক্ষিত সংসদ সদস্য রুবিনা মীরা, মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নাসিমা ফেরদৌসি, ঝালকাঠি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খান সাইফুল্লাহ পনির, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পরিচালক খন্দকার আনোয়ার হোসেন, সাবেক সচিব সিরাজউদ্দীন আহমেদ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা হাফিজ মল্লিক।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. শওকত আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো ছিলেন- ডিআইজি জামিল হাসান, পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসাহাক আলী খান পান্না, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস।
নগরীর ৩০ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের নেতারা ছাড়াও নবনির্বাচিত কাউন্সিলর ও সাধারণ মানুষ এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুমা আক্তার।
অতিথির বক্তব্যে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারাদেশ এগিয়ে গেছে। কিন্তু বিগত বছরে বরিশাল অবহেলিত ছিল। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ায় পিছিয়ে ছিল বরিশাল।”
পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, “স্থানীয় এমপি হিসেবে আমি সব সময় মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের পাশে থাকব। নিজের জীবন বিপন্ন করে হলেও তাকে সহায়তা করব।
প্রধানমন্ত্রী নতুন মেয়রের মাধ্যমে বরিশালকে এগিয়ে নিতে চান দাবি করে জাহিদ ফারুক শামীম বলেন, “তাই নতুন মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতকে ৭৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দ ও ৮০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন।”
নতুন মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, “বরিশালবাসী যে মহান দায়িত্ব অর্পণ করেছেন তা সঠিকভাবে পালন করব।”
নতুন মেয়র বলেন, “দুঃখজনক হলেও সত্য, বরিশাল সিটি করপোরেশনের অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে। তবে হতাশ হলে চলবে না। এ থেকে উত্তরণ ঘটবে।”
সঠিক ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে সিটি করপোরেশন পরিচালনা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এখানে কোনো বৈষম্য-হিংসাত্মক আচরণ থাকবে না।”
খোকন সেরনিয়াবাত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার বাবা শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ও জাতীয় চারনেতাসহ ৭৫ ঘাতকদের বুলেটে ও স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
এ সময় তিনি দাবি করেন, সিটি করপোরেশনের তহবিলে মাত্র ১২ কোটি টাকা তিনি পেয়েছেন, দেনা রয়েছে ৩০০ কোটি টাকা।
এর মধ্যে এ সিটি করপোরেশনকে বরাদ্দ-অনুদান দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মেয়র।
তিনি বলেন, “জাতির জনকের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তারই সুযোগ্যা কন্যা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে চলছেন। তার নেতৃত্বে সমস্ত বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে শামিল হলেও বরিশালে সে অর্থে কোনো উন্নয়ন হয়নি। অথচ আশপাশে তার উন্নয়নের ছোঁয়া দৃশ্যমান। সারাদেশের মানুষ আজ পদ্মা ও পায়রা সেতুর সুফল ভোগ করছে। শুধু বরিশালবাসী এ থেকে সার্বিকভাবে বঞ্চিত রয়েছে। আমি কথা দিচ্ছি, এই সুফল পেতে যা যা করণীয় তা সবকিছু করব।”
এদিকে, গত ৯ নভেম্বর মেয়াদ শেষ হওয়ার পাঁচ দিন আগেই বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন। সাদিক বরিশাল ১ আসনের সংসদ সদস্য হাসানাত আব্দুল্লাহর বড় ছেলে ও নতুন মেয়রের ভাতিজা।
বরিশালে অবস্থান করলেও অভিষেক অনুষ্ঠানে ছিলেন না সদ্য বিদায়ী মেয়র। ছিলেন না তার অনুসারী হিসেবে পরিচিত আটজন কাউন্সিলরও।
ছোট ভাই, নতুন মেয়র আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাত বাসায় গিয়ে আমন্ত্রণ জানিয়ে এলেও অনুষ্ঠানে আসেননি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহসহ তার পরিবারের কেউ।
এদিকে, আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নিয়ে নতুন মেয়র প্রথম স্বাক্ষর করলেন একটি মসজিদের বকেয়া বিলে। মেয়রের একান্ত সহকারী মো. রুবেল হাওলাদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দায়িত্ব নিয়ে নিয়ম অনুযায়ী মেয়র অফিস করেছেন। এ সময় তিনি নগরের বাংলাবাজার এলাকার একটি মসজিদের বকেয়া বিলে স্বাক্ষর করেছেন।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের কর নির্ধারক বেলায়েত হাসান বাবলু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নতুন মেয়র বাংলা বাজার মসজিদের ৫০ হাজার টাকার বকেয়া বিলে স্বাক্ষর করেছেন। এর মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশনের পঞ্চম পরিষদের।
করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মাসুমা আক্তার জানান, নতুন মেয়রের দায়িত্বগ্রহনের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করার পরপরই দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। পরে মেয়রকে মিষ্টিমুখ করিয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম। এ সময় মেয়রপত্নী লুনা আব্দুল্লাহও স্বামী খোকন সেরনিয়াবাতের মুখে মিষ্টি তুলে দেন।
এদিকে, নতুন মেয়রের আগমনে সিটি করপোরেশনের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল নগর ভবন ও এর আশপাশের এলাকা। শুরুতে মেয়রকে লাল গালিচা সংবর্ধনার পাশাপাশি ফুলেল শুভেচ্ছাও জানান তারা।