পরিবার বলছে, তিনি আর্জেন্টিনা সমর্থক ছিলেন ঠিক; তবে পছন্দের দলের হারে তার মৃত্যুর খবর ‘ঠিক নয়’।
Published : 23 Nov 2022, 09:23 AM
কাতার বিশ্বকাপের একটি ম্যাচ চলাকালে কুমিল্লায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এক প্রৌঢ়ের মৃত্যুর ঘটনায় গণমাধ্যমে যেভাবে ‘আর্জেন্টিনা সমর্থকের মৃত্যু’ লেখা হয়েছে তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পরিবার।
তারা বলছেন, ৫০ বছর বয়সী কাউছার জাবেদ কাঁকন দীর্ঘদিন ধরে অ্যাজমা ও হৃদরোগে ভুগছিলেন। তিনি আর্জেন্টিনা সমর্থক ছিলেন ঠিক; তবে পছন্দের দলের হারে তার মৃত্যুর খবর ‘ঠিক নয়’।
কাঁকনের চাচাতো ভাই নেসার আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “একজন মৃত মানুষকে নিয়ে এভাবে তামাশা করার কোনো মানে হয় না।”
কাতারের আইকনিক লুসাইল স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার আর্জেন্টিনা-সৌদি আরবের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। খেলায় ২-১ গোলে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে সাবাইকে তাক লাগায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। এর পরপরই বিভিন্ন পত্রিকায় আর্জেন্টিনার হারে 'হার্ট অ্যাটাক করে' কাঁকনের মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়।
কাঁকন আগে কুমিল্লা নগরীর রেসকোর্স এলাকায় থাকলেও অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বুড়িচং উপজেলার শিকারপুর গ্রামের বাড়িতে বসবাস করছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি সেখানেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কাঁকন আগে থেকেই হৃদরোগে ভুগছিলেন এবং অসুস্থতার কারণে ‘স্বাভাবিকভাবেই’ তার মৃত্যু হয়েছে বলে তার চাচাতো ভাই নেসার আহমেদ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আর্জেন্টিনা হেরে যাওয়ায় কাঁকন ভাই মারা গেছেন, এটা ঠিক নয়। বিষয়টি পুরোপুরি গুজব। তার মৃত্যুর ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেভাবে ছড়িয়েছে তাতে, পরিবারের সদস্যরা ক্ষুব্ধ।“
কাঁকনের বন্ধু কুমিল্লা নগরীর রেসকোর্স এলাকার বাসিন্দা ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সরকার মাহমুদ জাভেদ সাংবাদিকদের বলেন, “কাঁকন কখনোই আর্জেন্টিনার অন্ধ সমর্থক ছিল না। খেলা চলাকালীন তার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু আর্জেন্টিনার পরাজয়ে মৃত্যু হয়েছে, বিষয়টি ভিত্তিহীন ছাড়া কিছু নয়।”
বুড়িচংয়ের মোকাম ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জাকির হোসেন কাঁকনদের পাশের গ্রামের বাসিন্দা। ফেইসবুকে কাঁকনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তিনি বিষয়টি জানতে মঙ্গলবার রাতে শিকারপুর গ্রামে যান।
সেখানে অবস্থানকালে জাকির সাংবাকিদের বলেন, কাঁকন ও তার চাচাতো ভাই একসঙ্গে বাড়িতেই খেলা দেখছিলেন। এক পর্যায়ে কাঁকন বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন। তাকে দ্রুত নিমসার ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা জানায় যে, আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
কাঁকনের মৃত্যুর খবরটি যেভাবে প্রকাশিত হয়েছে তাতে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক শ্রেণীর লোক 'আর্জেন্টিনার পরাজয়ে সমর্থকের মৃত্যু' বলে প্রচার করতে থাকে। একটা মৃত মানুষকে নিয়ে ঠাট্টা করে গুজব ছড়ানো দুঃখজনক। এছাড়া কাঁকন খেলাধুলার প্রতি তেমন আগ্রহী ছিলেন না বলেও পরিবারের লোকজন জানিয়েছে।”
বুড়িচং থানার ওসি মারুফ রহমান বলেন, “শিকারপুর এলাকায় একজন হার্টের রোগী মারা গেছেন বলে শুনেছি। কিন্তু তিনি আর্জেন্টিনার সমর্থক ছিলেন বা আর্জেন্টিনা হেরে যাওয়ায় হার্ট অ্যাটাক করেছেন, এমন কোনো তথ্য পাইনি।”