Published : 02 Nov 2023, 08:39 AM
রাজবাড়ীতে প্রতি মৌসুমে আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ করা হয়; কিন্তু এ বছর বৃষ্টিতে চারা রোপণ কিছুটা পিছিয়েছে। এতে এবার এ পেঁয়াজ বাজারে আসতে একটু দেরিই হবে বলে মনে করছেন চাষিরা।
তবে দেরিতে আবাদ ও উপকরণের মূল্য বাড়লেও ভালো ফলন আর লাভের আশা করছেন তারা। যদিও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এ পেঁয়াজ বাজারে এলেই রান্নায় ব্যবহৃত এ নিত্যপণ্যের চড়া বাজার কমে আসবে।
এ বছর জেলার সদর, পাংশা, কালুখালী, বালিয়াকান্দি ও গোয়ালন্দ উপজেলায় মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল পাঁচ হাজার হেক্টর। কিন্তু অতিবৃষ্টিতে আবাদ পিছিয়ে যাওয়ায় এখন পর্যন্ত জেলায় ২৫ শতাংশ পেঁয়াজ রোপণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। বাকি জমিতেও শিগগির আগাম পেঁয়াজ লাগানো হবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা।
মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণের ৯০ দিনের মধ্যে ফলন তোলা যায়। ফলে লাভের আশায় চাষিরা এ জাতের পেঁয়াজের আগাম চাষ করেন। কিন্তু এবার অতিবৃষ্টির কারণে একটু দেরিতে পেঁয়াজ লাগিয়েছেন তারা।
সরজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দুই সপ্তাহ আগে রোপণ করা মুড়িকাটা পেঁয়াজ পরিচর্যায় মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।
কেউ জমিতে নিড়ানি, আবার কেউ আগাছা পরিষ্কার বা কীটনাশক ছিটাচ্ছেন। বৃষ্টির কারণে যাদের জমিতে পানি জমেছিল তারা কিছুটা দেরিতে পেঁয়াজ রোপণ করছেন।
সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের উড়াকান্দা এলাকার কৃষক মো. ফটিক প্রামাণিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “৩ বিঘা জমিতে মুড়িকাটা পিজের আবাদ করেছি। এ বছর পিজ আবাদে মেলা খরচ। এক বিঘা জমিতে ৬ মণ গুটি পিজ (বীজ) লাগে। এক মণ পিজির দাম সাড়ে ৫ হাজার টাকা।
“তিন বিঘা জমিতে প্রায় এক লাখ টাকায় গুটি পিজ কিনতে হয়েছে। এরপর সার, কীটনাশক, শ্রমিক খরচ দিয়ে এখন পর্যন্ত ২ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, “ঘরে তোলা পর্যন্ত আরও ১ লাখ টাকা খরচ হবি। ফলন ভালো হলি তিন বিঘা জমিতে ২৪০ মণ পিজ পাব। বাজারে দাম থাকলি লাভবান হব আশা করি।”
একই এলাকার আরেক কৃষক মো. ছালাম বলেন, “এ বছর পিজির গুটি, জমি চাষ, সার, সেচ ও জোন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ঘরে উঠানো পর্যন্ত বিঘা প্রতি মুড়িকাটা পিজি খরচ পড়বি ৫০-৬০ হাজার টাকা। আর বিঘা প্রতি পিজ পাব ৬০-৭০ মণ। পিজির গাছের বয়স ২০ দিন চলতেছে। দুই মাস পর এই পিজ ঘরে তোলা যাবি।”
তিনি জানান, গত বছরের তুলনায় এবার দ্বিগুণ খরচ। সারের দাম বেশি। এক বস্তা ইউরিয়ার দাম ১৫০০ টাকা, টিএসপি ১৪০০ টাকা। তিন হাজার টাকায় কীটনাশক, বীজ খরচ ৩০ হাজার টাকা, চাষের খরচ ৯ হাজার, এরপর শ্রমিক খরচ আছে, সেচ খরচ আছে তাতে প্রতি বিঘায় কমপক্ষে ৬০ হাজার টাকা খরচ হবে।
দামের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. ছালাম বলেন, দুই হাজার টাকা মণ করে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারলে লাভ হবে। আর যদি ১৫০০ টাকা মণ হয় লাভ হবে না। এটা আসলে নির্ভর করবে বাজারের ওপর।
“এহন বাজারে ১৩০ টাকা কেজি পিজির দাম। আমরা যহন তুলবো তহনতো এই দাম থাকপি না। আমরা মারা পরে যাচ্ছি সার আর কীটনাশকের দামের কাছে। যদি সার আর কীটনাশকের দাম কম থাকে তালি আমরা কৃষকরা ফসল আরও বৃদ্ধি করতে পারব।”
পাংশা উপজেলার মজিবর বলেন, “পিজির অবস্থা তো ভালো না। বৃষ্টিতি পচে গেছে মেলা। তারপর যে কয়ডা আছে খুচা-মুচা দিয়ে নিড়াচ্ছি। খরচ তো বেশি পড়ে যাচ্ছে। সারের দাম বেশি, ওষুদের দাম বেশি, জোনের (শ্রমিক) দামও বেশি।
“একজনকে জোন নিলি দিনি দিয়া লাগে ৬০০ টাকা; আরও তিন বেলা খাওয়া। এহন অনেক কৃষক পিজ লাগাচ্ছে। যারা বৃষ্টির জন্নি লাগাতি পারে নাই। এহন আশা তো করতিছি যে কয়ডা গাছ আছে এতেই ভালো ফলন পাবো। বাকিটা উপরআলাই ভালো জানে কী হবি।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম রাসূল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সারা দেশের উৎপাদিত পেঁয়াজের ১৪ শতাংশ রাজবাড়ীতে হয়ে থাকে। এ বছর জেলায় মুড়িকাটা পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা পাঁচ হাজার হেক্টর ধরা হলেও অতিবৃষ্টিতে এখন পর্যন্ত ২৫ শতাংশ রোপণ করা হয়েছে।
“বৃষ্টির পানি শুকিয়ে যাওয়ায় কৃষকেরা কিছুটা দেরিতে হলেও এখন পেঁয়াজ আবাদ করছেন। আশা করছি অল্প কয়েক দিনের মধ্যে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যাবে। এবং ৭০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হবে”, বলেন তিনি।
এবার পেঁয়াজ চাষের খরচ বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বছর পেঁয়াজ বীজ, সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের দাম বেশি হওয়াতে কৃষকদের আবাদ খরচ বেড়ে গেছে। তবে বাজারে পেঁয়াজের দাম ভালো থাকায় আশা করছি কৃষকেরা লাভবান হবেন।
গোলাম রাসূল আরও বলেন, পেঁয়াজের বাজারটা অনেকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। সারা দেশে যে পরিমাণ মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ হয় সেটা দিয়ে হালি পেঁয়াজ না ওঠা পর্যন্ত চাহিদা পূরণ করা সম্ভব না।
ভারত পেঁয়াজের মূল্য আরও বাড়িয়েছে সে হিসাবে মুড়াকাটা পেঁয়াজ উঠলে বাজারের পেঁয়াজের দাম যে খুব বেশি কমবে সেটা মনে হচ্ছে না বলে জানান জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।