“আগামীকাল (শনিবার) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা থাকায় পরদিন রোববার থেকে আমরা কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলব।”
Published : 15 Feb 2025, 12:07 AM
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা বন্ধ রাখতে ফটক ভেঙে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শুচিতা শরমিনের বাসভবনে এ সভা হওয়ার কথা ছিল। পরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে ভার্চুয়াল মাধ্যমে ওই সভা হয়।
তবে সভায় অংশ না নিয়ে তা প্রত্যাখান করেছেন উপ-উপাচার্য গোলাম রাব্বানী, ট্রেজারার মো. মামুন অর রশিদ ও অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরের পর থেকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে প্রায় দুই ঘণ্টা অবস্থান নিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বিরোধী স্লোগান দেন। পরে বিকাল ৩টা ১৫ মিনিটে উপাচার্যের বাসভবনের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এ সময় বাসভবনের ভেতরেই সহকারী প্রক্টর মারুফা আক্তারের সঙ্গে কয়েক দফায় কথা বলেন শিক্ষার্থীরা।
এসময় সহকারী প্রক্টর শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রক্টর অফিসে বসে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার প্রস্তাব দিলেও শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখান করে।
জবাবে শিক্ষার্থীরা বলেছেন- বহুবার বসা হয়েছে। কোনো সমাধান হয়নি। এমনকি শিক্ষার্থীদের ২২ দফার কোনো প্রতিফলন ঘটানো হয়নি।
পরে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে সময়সীমা নির্ধারণ করে সাংবাদিক সম্মেলন করে দশ দফা দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ বন্ধ করেন শিক্ষার্থীরা।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়কে ফ্যাসিস্টদের ও ফ্যাসিস্ট দালাল মুক্ত না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম বলেন, “পাতানো সিন্ডিকেট ও আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন ঠেকাতে আমরা শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছি। আমাদের দশ দফা দাবি মেনে না নিলে ও সঠিক ব্যাখ্যা না দিলে আমরা এক দফা দাবিতে যেতে বাধ্য হবো।
তিনি বলেন, “আগামীকাল (শনিবার) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা থাকায় পরদিন রোববার থেকে আমরা কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলব।”
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জানিয়েছেন আন্দোলনের নামে ভাঙচুর কোনো অবস্থাতেই সমর্থনযোগ্য নয়। এভাবে বাসভবনের গেট ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করা ও শিক্ষার্থীকে প্রকাশ্যে মারধর করা ছাত্রলীগের সংস্কৃতি। তারা এ সংস্কৃতি চান না।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল মহানগর আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ভিসির বাসভবনের গেট ভাঙার বিষয়টি সমর্থন করে না। এটা কারা করেছে আমরা জানি না। এর বিরুদ্ধে আমরা নিন্দা জানিয়েছি।”
তিনি বলেন, “আমরা আলোচনার মাধ্যমে সবকিছুর সুষ্ঠু সমাধান চাই। ব্যক্তি স্বার্থ ও রাজনৈতিক স্বার্থের চেয়ে ক্যাম্পাস সুষ্ঠু পরিবেশ আগে।”
শিক্ষার্থীদের দাবি
শুক্রবার বিক্ষোভের পর সাংবাদিক সম্মেলন করে দশ দফা দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী নাসিম বিল্লাহ, লোক প্রশাসন বিভাগের মোকাব্বেল শেখ, মাইদুল ইসলাম, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আশরাফুল মোল্লা, ইতিহাস বিভাগের মোশাররফ হোসেন, আব্দুল করিম, মিরাজুল ইসলাম।
তাদের দাবিগুলো হল-
১. রেজিস্ট্রারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করতে হবে। আভ্যন্তরীণ শিক্ষকদের প্রতিনিধি করে এরপর সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করতে হবে। মেয়াদ শেষ না হওয়ায় আগে বাতিল করা দুই শিক্ষককে সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা।
২. ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রোডম্যাপ দিতে হবে।
৩. সিন্ডিকেটে ছাত্র প্রতিনিধি রাখার বিধান রাখতে হবে। সিন্ডিকেটের আলোচ্য বিষয় সাংবাদিকদের কাছে উন্মুক্ত (প্রকাশ যোগ্য) করতে হবে।
৪. বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টার কাছে দ্রুত সময়ের মধ্যে চিঠি পাঠাতে হবে। নিয়োগ পাওয়ার পর অবকাঠামো উন্নয়নে উপাচার্যের পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রমাণ সাপেক্ষে উপস্থাপন করতে হবে।
৫. স্বৈরাচারের দোসরদের সাথে সখ্যতার কারণ স্পষ্ট করে শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরে ক্ষমা চাইতে হবে। এবং গত প্রশাসনে বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে যারা ছিল তাদেরকে নতুন পদ বণ্টন করা যাবে না।
৬. শিক্ষকদেরকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। পাশাপাশি যেসব শিক্ষক সরাসরি ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৭. শিক্ষার্থীদের সেবাবঞ্চিত ফি ও বিভাগ উন্নয়ন ফি এর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। দারিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য মেধার ভিত্তিতে বৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
৮. বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে নতুন আরেকটি ব্যাংকের শাখা স্থাপন ও দপ্তরগুলোতে দক্ষ জনবল নিয়োগের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
৯. ২২ দফার অগ্রগতি দেখাতে হবে এবং তার ব্যাখ্যা করতে হবে।
১০. নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীদের তাড়াতাড়ি বিচারের আওতায় আনতে হবে।
সিন্ডিকেট সভা প্রত্যাখান করে তিন শিক্ষক
এদিকে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে সশরীরে উপস্থিতির বদলে ভার্চুয়াল মাধ্যমে করা সভা প্রত্যাখান করেছেন তিন শিক্ষক।
এক বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রত্যাখানের কথা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য গোলাম রাব্বানী, ট্রেজারার মো. মামুন অর রশিদ ও অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীন।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রব্বানী বলেন, “আমরা সিন্ডিকেট মিটিংয়ে যোগদান করতে গিয়েছিলাম কিন্তু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে আমাদেরকে ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে হয়।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ, কার্যালয়ে তালা
“পরবর্তীতে উপাচার্য ভার্চুয়ালি মিটিংয়ে যোগদানের জন্য বললে উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে অনলাইনে যোগদানের মতো সুযোগ না থাকায় আমিসহ তিনজন সিন্ডিকেট মিটিং প্রত্যাখান করেছি।”
তাদের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সিন্ডিকেটের নির্ধারিত সভায় যোগদান করতে এসে সভাস্থলে ঢুকতে না পেরে আধাঘণ্টা অপেক্ষা করেন তারা। পরে জানতে পারেন একটি আলোচ্য বিষয়ের সভা বিশেষ সভায় রুপান্তর করা হয়েছে।
ওই একটিমাত্র আলোচ্য বিষয়ে বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই তিনজন সভা বয়কট ও প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকালে উপাচার্যের বিরুদ্ধে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনের অভিযোগ এনে তার বাসভবন ও কার্যালয়ে তালা দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। তখন তারা সিন্ডিকেট সভা বাতিলেরও দাবি জানিয়েছিলেন।
এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শুচিতা শরমিন সাংবাদিকদের বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের গুটিকয়েক শিক্ষার্থী উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন।”
তারা সাধারণ কোনো শিক্ষার্থী নন জানিয়ে উপাচার্য বলেন, “তারা আজকে যে কাজ করেছে এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।”
এ ঘটনায় পুলিশি তদন্ত হবে বলেও জানান তিনি।