এ ঘটনায় ওই গৃহবধূর তার স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িসহ পাঁচজনের নামে থানায় অভিযোগ করেছেন।
Published : 05 Jun 2024, 11:14 PM
নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ উপজেলায় যৌতুকের দাবিতে এক গৃহবধূর হাতমুখ বেঁধে মারধর ও গরম খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে।
উপজেলার জয়পুর গ্রামে স্বামীর বাড়িতে নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূকে মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান মোহনগঞ্জ থানার ওসি মো. দেলোয়ার হোসেন।
এ ঘটনায় বুধবার সকালে ভুক্তভোগী বাদী হয়ে তার স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িসহ পাঁচজনের নামে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
নির্যাতনের শিকার সুবর্না আক্তার (২২) উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামের মো. বাচ্চু মিয়ার মেয়ে। তার স্বামী মো. সাকিব মিয়া (২৬) উপজেলার জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা। এ দম্পতির নয় মাস বয়সি একটি ছেলে রয়েছে।
ওসি দেলোয়ার হোসেন বলেন, “ওই গৃহবধূর শরীরে মারধরের একাধিক চিহ্ন রয়েছে। তার অভিযোগটি আমলে নিয়ে মামলা রেকর্ড করা হচ্ছে। পরে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।”
আসামিরা হলেন- সুবর্নার স্বামী সাকিব মিয়া, তার দুই বোন মোসা. সুমা আক্তার (৩০), মোসা. রুমা আক্তার (২৮), শ্বশুর মো. খোকন মিয়া (৫০) এবং শাশুড়ি মোসা. তহুরা আক্তার (৪৮)।
পুলিশ ও মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, দুই বছর আগে পারিবারিকভাবে সাকিবের সঙ্গে সুবর্নার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দেওয়ার জন্য চাপ দিতেন সাকিব। মেয়ের সংসার টিকিয়ে রাখতে সুবর্নার বাবা জমি বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা সাকিবকে দেন।
“সম্প্রতি আবারও টাকার জন্য সুবর্নাকে নির্যাতন শুরু করেন সাকিব। কিন্তু এবার টাকা এনে দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন সুবর্না। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় সাকিব, তার বাবা-মা ও বোনরা মিলে সুবর্নার হাতমুখ বেঁধে মারপিট করেন।
“এক পর্যায়ে রান্না ঘর থেকে খুন্তি গরম করে সুবর্নার পিটে ছ্যাঁকা দেওয়া হয়। যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা সুবর্না কোনো রকমে মুখের বাঁধন খুলে চিৎকার করেন। চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়।”
সুবর্নার বাবা বাচ্চু মিয়া বলেন, “কোনোরকম কাজকর্ম করে সংসার চালাই। মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার সময় দুই থেকে তিন লাখ টাকা খরচ করে জিনিসপত্র দিয়েছি। পরে টাকার জন্য মেয়েকে তার স্বামীসহ পরিবারের লোকজনের অত্যাচারের কথা শুনে জমি বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা দেই।
“এখন আবার টাকার জন্য অত্যাচার শুরু করেছে। আমি গরীব মানুষ টাকা দেব কোথা থেকে। জমি যেটুকু ছিল বিক্রি করে টাকা দিয়েছি, এখন বাড়িটা ছাড়া কিছু নেই। টাকা দিতে পারিনি বলে ওরা মেয়েটাকে মারধর করেছে।”
মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, সুবর্নার শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে সাকিব মিয়ার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। এমনকি তার বাবা-মায়ের মোবাইল নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়।