সংসদ সদস্যের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিকালে নগর ভবনে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন।
Published : 28 Jun 2024, 12:18 AM
দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল নিহতের ঘটনায় ‘হামলাকারীদের প্রশ্রয়দাতা’ হিসেবে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দিয়েছেন সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে বাঘা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজার আগে বক্তব্যে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী একথা বলেন।
আশরাফুল ইসলাম বাবুলকে ‘পরিকল্পিতভাবে হত্যা’ করা হয়েছে দাবি করে শাহরিয়ার আলম বলেন, “বাবুল হত্যার বিষয়ে গোপনে যারা মদদ দিয়েছেন তাদেরকেও আইনের আওতায় নিয়ে বিচার করা হবে।”
এ সময় তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, রাজশাহী-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রায়হানুল হক রায়হান, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাভলুর নাম উল্লেখ করে বলেন, “তারা কেন জানাজায় আসেননি? তাদের সৎ সাহস নেই। প্রয়োজনে তাদের নামে মামলা করে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে।”
জানাজার আগে উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে নিহত বাবুলের বড় ছেলে আশিক জাবেদ ছাড়া আরও বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং রাজশাহী-৫ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ দারা।
পরে বাঘা পৌরসভার গাওপাড়া গ্রামের পারিবারিক গোরস্থানে বাবার কবরের পাশে আশরাফুল ইসলাম বাবুলকে দাফন করা হয়।
এদিকে জানাজা শুরুর আগে সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অনিল কুমার সরকার উপস্থিত হলে চাঞ্চল্য দেখা দেয়। পরে তিনি সেখান থেকে চলে আসেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অনিল কুমার সরকার বলেন, “সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে মরহুম বাবুলকে শেষ শ্রদ্ধা ও পরিবারকে সমবেদনা জানাতে সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে কিছু বুঝে উঠার আগেই পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ আমাকে জানাজার মাঠ থেকে চলে যেতে বলেন। কাউকে কিছু না জানিয়ে সেখান থেকে চলে এসেছি।”
পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ বলেন, “যেহেতু সভাপতিকে ইঙ্গিত করে সেখান থেকে চলে যেতে মাইকে ঘোষণা এসেছে তাই তাকে চলে যেতে বলা হয়েছে; যাতে সেখানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।”
মেয়র লিটনের প্রতিক্রিয়া
এদিকে, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন জানিয়েছেন, আশরাফুল ইসলাম বাবুল নিহতের ঘটনায় তার কোনোভাবে জড়িত থাকার কোনো কারণ, সুযোগ বা যুক্তিও নেই।
সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলমের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় নগর ভবনে মেয়রের দপ্তর কক্ষে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন খায়রুজ্জামান লিটন।
তিনি বলেন, “বাবুল সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী ও নেতা ছিলেন, আমার অনেক স্নেহভাজন ছিলেন। আমি আমার রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই তাকে পাশে পেয়েছি, বাবুল যখন ছাত্রনেতা, তখন থেকেই। তিনি নিবেদিত প্রাণ আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন।”
মেয়র বলেন, “বাবুলকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করার মতো নিন্দনীয়-নৃশংস ঘটনার সঙ্গে আমার কোনোভাবে জড়িত থাকার কোনো কারণ নেই, কোনো সুযোগ নেই, যুক্তিও নেই।
“মরহুমের জানাজায় আমাকে দায়ী করে, সরাসরি আমার নাম ধরে, আমার দলীয় পদ উল্লেখ করে, আমার পাশাপাশি আমাদের আরেকজন সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদসহ আরও কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে বাঘা-চারঘাটের বর্তমান এমপি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ঈর্ষাপরায়ণভাবে এ রকম উক্তি করতে পারেন, সেটা আমার বোধগম্য নয়। ”
খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, “জানাজা নামাজের মতো একটি পবিত্র কাজ, যেখানে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা হয়, সেখানে এভাবে মামলা করা হবে, মোবাইল কললিস্ট চেক করা হোক, মামলার আসামি করা হবে-এই সমস্ত কথা তার কাছ থেকে আমি আশাই করিনি। তিনি কী উদ্দেশ্যে বলেছেন, কেন বলেছেন তা তিনিই বলতে পারবেন।”
তিনি আরও বলেন, “আমার বয়স এখন ষাটের ওপরে। আমার রাজনৈতিক জীবনে এ ধরনের ঘটনায় মদদ দেওয়ার ইতিহাস নেই। মনে হচ্ছে যেন লাশটি কারও দরকার ছিল। একজনের মৃতদেহ দরকার ছিল যেটাকে পুঁজি করে রাজনীতি করা যায় এবং প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা যায়।”
খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, “আমার কাছে মনে হচ্ছে, আমরা যারা আওয়ামী লীগের রক্ত নিয়ে বড় হয়েছি, তাদেরকেই এখন হেনস্তা করার অপচেষ্টা করছেন নতুনেরা।”
সংঘর্ষ: বাঘা আওয়ামী লীগের আহত সম্পাদকের মৃত্যু
আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র বাঘা, আহত ৩০