দুই সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
Published : 28 Jun 2024, 07:22 PM
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিউ মিডিয়া বিভাগের সহযোগী প্রযোজক ইমরান হোসেন রাকিবকে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় পারিবারিক কবরস্থানে শায়িত করা হয়েছে।
শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে মঠবাড়িয়ার ছোটশৌলা গ্রামে দ্বিতীয় দফা জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।
এর আগে সকাল ৭টার দিকে খুলনা শহরের ছোট বয়রা ইসলামিয়া কলেজ রোডের বাসার সামনে প্রথম দফায় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তার বন্ধু-স্বজন ও সহকর্মীরা জানাজায় অংশ নেন।
বাবার চাকরির সুবাদে খুলনা শহরেই রাকিবের জন্ম ও বেড়ে ওঠা। মঠবাড়িয়ায় তার নানাবাড়ির গ্রামে কবরস্থান গড়েছেন বাবা আমীর হোসেন, সেখানেই পরিবারের প্রথম সদস্য হিসেবে শায়িত হলেন রাকিব।
সদা কর্মচঞ্চল ২৭ বছর বয়সী রাকিব বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে খুলনার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
তার ভগ্নিপতি শেখ সিয়াম আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অ্যাজমা সমস্যায় ভুগছিলেন রাকিব। এর সঙ্গে মাথাব্যথা, জ্বর, অনিদ্রাসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ১২ দিন ধরে তিনি খুলনা আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
“বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকলে তাকে অন্য হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। রাত ৮টার দিকে অন্য হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।”
রাকিবের বোন তাসনিয়া অথৈ বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে রাকিবকে মৃত ঘোষণা করার কিছুক্ষণ আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে তার মস্তিষ্কে সংক্রমণের তথ্য দেন চিকিৎসকরা। এছাড়া তারা রাকিবের শ্বাসনালিতে খাবার জমে থাকা এবং ফুসফুসে খাবারের কণা ঢুকে পড়ার কথাও বলেছেন।
এর আগে জ্বর ও মাথাব্যথা নিয়ে গত ১২ জুন ঢাকায় বেসরকারি ইবনে সিনা হাসপাতালে যান রাকিব। সেখানে দুই দিন ভর্তি থাকার পর পরিবারের সদস্যরা তাকে খুলনায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন।
তবে ওই সময় প্রচণ্ড মাথাব্যথা দেখা দিলে তাকে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। তখন তার ছটফট অবস্থা দেখে চিকিৎসকরা দুটি ওষুধ ইনজেকশন হিসেবে দেন বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্য ও সহকর্মীরা।
তারা এও বলেন, এ হাসপাতালের চিকিৎসকরা রাকিবকে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করতে বলেন। সেখানেও তাকে দুটি ওষুধ ইনজেকশন হিসেবে দেওয়া হয়। সেখানে একরাত ভর্তি থাকার পর পরিবারের সদস্যরা তাকে খুলনায় নিয়ে যান। সেখানে ভর্তি করা হয় আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে।
রাকিবের ভগ্নিপতি সিয়াম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঈদ ঘনিয়ে আসায় এবং বাবা-মার কাছে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার সুবিধার্থে তাকে খুলনায় আনা হয়েছিল। কিন্তু এখানে ১২ দিন চেষ্টা করেও এমআরআই পরীক্ষা করাতে পারছিলাম না।
“বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সে শ্বাসকষ্টে ছটফট করছিল। কিন্তু সন্ধ্যায় অক্সিজেনের ব্যবস্থা যখন হল ততক্ষণে রাকিবের অবস্থার চরম অবনতি হয়েছে। হাসপাতাল থেকে রিলিজও চেয়েও পাচ্ছিলাম না। রাত ৮টার দিকে রিলিজ পেয়ে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।”
রাকিব ২০১৯ সাল থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিউ মিডিয়া বিভাগে কাজ করছিলেন। বেসরকারি ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিতে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় স্নাতক পড়ার সময়ে একাধিক শর্ট ফিল্ম নির্মাণ করেছিলেন তিনি।
সদা হাস্যোজ্জ্বল ও সদালাপী রাকিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে কাজ করার সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতেন। বিভিন্ন ইভেন্টের লাইভ করার পাশাপাশি উপস্থাপনাও করতেন। কণ্ঠ দিতেন বিভিন্ন প্রতিবেদনে।
খেলার খবর নিয়ে আলোচনায় সংবাদকক্ষ সরব করে রাখতেন তরুণ এ সংবাদকর্মী। অন্যান্য প্রতিবেদন তৈরি ও লাইভ ইভেন্ট কাভারের মধ্যেই খেলা অন্তপ্রাণ এই সংবাদকর্মী খেলার ভিডিও প্রতিবেদন তৈরি করতেন নিয়মিত।
ভারতে অনুষ্ঠিত আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ক্রিকেট কাভারের পর ব্যস্ত ছিলেন ইউরোপের ফুটবল নিয়ে।
এরপর চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে ছিলেন উচ্ছ্বসিত। কীভাবে কাভার ও উপস্থাপনা করবেন সেই পরিকল্পনা নিয়ে ছিলেন ব্যস্ত ছিলেন সারাক্ষণ। বেশ রোমাঞ্চিত ছিলেন এ প্রতিযোগিতা কাভার করা নিয়ে।
এর সঙ্গে কোপা আমেরিকা ও ইউরো ফুটবলের রোমাঞ্চ দর্শকদের কাছে উপস্থাপনের পরিকল্পনা নিয়ে ছিলেন বিভোর। এমনকি হাসপাতালের বেডে শুয়েও সহকর্মীদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছিলেন। তবে অসুস্থতা বাড়লে আর ফেরা হল না তার প্রিয় সংবাদকক্ষ ও স্টুডিওতে।