চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে ছিলেন উচ্ছ্বসিত। কীভাবে উপস্থাপনা করবেন সেই পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত থাকার মধ্যে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন; সেখান থেকে আর ফেরা হল না সংবাদ কক্ষে।
Published : 28 Jun 2024, 12:31 AM
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিউ মিডিয়া বিভাগের সহযোগী প্রযোজক ইমরান হোসেন রাকিব আর নেই।
বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে খুলনার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ২৭ বছর।
রাকিবের ভগ্নিপতি শেখ সিয়াম আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অ্যাজমার সমস্যায় ভুগছিলেন রাকিব। এর সঙ্গে মাথা ব্যাথা, জ্বর, অনিদ্রাসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে গত ১২ দিন তিনি খুলনা আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকলে তাকে অন্য হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। রাত ৮টার দিকে অন্য হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
এর আগে জ্বর ও মাথাব্যাথা নিয়ে গত ১২ জুন ঢাকায় বেসরকারি ইবনে সিনা হাসপাতালে যান রাকিব। তার পরিবারের সদস্য ও চিকিৎসকরা জন্ডিসের আশঙ্কা থেকে তাকে সেখানে ভর্তি করা হয়। এখানে দুই দিন ভর্তি থাকার পর পরিবারের সদস্যরা তাকে খুলনায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন।
পরিবারের সদস্য ও সহকর্মীরা তার চিকিৎসার বিষয়ে বলেন, তবে ওই সময় রাকিবের মাথাব্যাথা অনেক বেড়ে গেলে তাকে ঢাকার আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। তখন তার ছটফট অবস্থা দেখে চিকিৎসকরা ইনজেকশন প্রয়োগ করেন।
এ হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়ার জন্য রেফার করেন। সেখানেও তাকে ইনজেকশন দেওয়া হয়। এখানে একরাত ভর্তি থাকার পর ঈদের আগে তার পরিবারের সদস্যরা তাকে খুলনায় নিয়ে যান। সেখানে ভর্তি করা হয় আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে।
রাকিবের ছোট বোনের স্বামী সিয়াম বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তখন তারা হাসপাতাল বদলের পরিকল্পনা করেন।
তিনি চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ করে বলেন, “দুপুরে তার তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় আমরা অক্সিজেন সুবিধা চেয়েও পাচ্ছিলাম না। হাসপাতাল থেকে রিলিজও চেয়েও পাচ্ছিলাম না। রাত ৮টার দিকে রিলিজ পেয়ে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
”খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”
তার আকস্মিক মৃত্যুর খবরে খুলনার বয়রা এলাকার বাসিন্দারা শোকাহত হয়ে পড়েছেন। ওই এলাকাতেই তার পরিবারের বসবাস। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে রাকিব ছিলেন মেজ। তার বাবা আমীর হোসেন অবসরপ্রাপ্ত সেটেলমেন্ট অফিসার।
ঢাকায় তিনি বন্ধুদের সঙ্গে মোহাম্মদপুরে ভাড়া বাসায় থাকতেন।
রাকিব ২০১৯ সাল থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিউ মিডিয়া বিভাগে কাজ করছিলেন। বেসরকারি ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিতে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় স্নাতক পড়ার সময়ে একাধিক শর্ট ফিল্ম নির্মাণ করেছিলেন তিনি।
সদা হাস্যোজ্জ্বল ও সদালাপী রাকিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে কাজ করার সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতেন। বিভিন্ন ইভেন্টের লাইভ করার পাশাপাশি উপস্থাপনাও করতেন। কণ্ঠ দিতেন বিভিন্ন প্রতিবেদনে।
খেলার খবর নিয়ে আলোচনায় সংবাদকক্ষ সরব করে রাখতেন তরুণ এ সংবাদকর্মী। অন্যান্য প্রতিবেদন তৈরি ও লাইভ ইভেন্ট কাভারের মধ্যেই খেলা অন্তপ্রাণ এই সংবাদকর্মী খেলার ভিডিও প্রতিবেদন তৈরি করতেন নিয়মিত।
ভারতে অনুষ্ঠিত আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ক্রিকেট কাভারের পর ব্যস্ত ছিলেন ইউরোপের ফুটবল নিয়ে।
এরপর চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে ছিলেন উচ্ছ্বসিত। কীভাবে কাভার ও উপস্থাপনা করবেন সেই পরিকল্পনা নিয়ে ছিলেন ব্যস্ত ছিলেন সারাক্ষণ। বেশ রোমাঞ্চিত ছিলেন এ প্রতিযোগিতা কাভার করা নিয়ে।
এর সঙ্গে কোপা আমেরিকা ও ইউরো ফুটবলের রোমাঞ্চ দর্শকদের কাছে উপস্থাপনের পরিকল্পনা নিয়ে ছিলেন বিভোর। এমনকি হাসপাতালের বেডে শুয়েও সহকর্মীদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছিলেন। তবে অসুস্থতা বাড়লে আর ফেরা হল না তার প্রিয় সংবাদকক্ষ ও স্টুডিওতে।
এ টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলে ভর্তি হন বেসরকারি ইবনে সিনা হাসপাতালে। ঈদের আগে সেবা-শুশ্রুষার জন্য পরিবারের সদস্যরা তাকে খুলনায় নিয়ে যান।
তার আকস্মিক মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।