সকাল ৭টায় বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।
Published : 22 Aug 2024, 04:24 PM
কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ৯২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তলিয়ে গেছে নদীর পাড়ে থাকা ঘরবাড়ি। প্রতিনিয়ত প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।
নদীতে তীব্র স্রোতের যেকোন সময় গোমতীর শহর রক্ষা বাঁধ ধসে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে চুইয়ে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। নগরী সংলগ্ন বাঁধ ধসে পড়লে পুরো নগরীর অবস্থা হবে ভয়াবহ। বর্তমানে টানা বৃষ্টির কারণে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বেলা ১টা ১৫ মিনিটে কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান জানান, এখন গোমতীর পানি বিপৎসীমার ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এর আগে সকাল ৭টায় পাউবো থেকে জানানো হয়েছিল, গোমতীর পানি বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী ওয়ালিউজ্জামান জানান, বাঁধ রক্ষায় সেনাবাহিনী, জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা কাজ করছেন। বাঁধের বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ অংশ দিয়ে বুধবার রাত থেকে চুইয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকছে।
তিনি বলেন, “যেখানেই আমরা খবর পাচ্ছি, স্থানীয় লোকজনকে সহায়তায় করছি। পাশাপাশি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
এদিকে বাঁধ ভাঙার ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন গোমতীর দুই তীরের বাসিন্দারা। এছাড়া টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলার ১০ লক্ষাধিক মানুষ এরই মধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বলে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তলিয়ে গেছে শত শত মাছের ঘের, পুকুর, দিঘি, আউশ ধান ও আমনের বীজতলা। নদীর চর তীরবর্তী শাকসবজিসহ নিম্নাঞ্চলের ফসলও তলিয়েছে।
কুমিল্লার দক্ষিণাঞ্চলের উপজেলা নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ ও চৌদ্দগ্রামের অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কুমিল্লা আদর্শ সদর, লাকসাম, বুড়িচং, বরুড়া, দেবিদ্বার, মুরাদনগর ও দাউদকান্দির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় নিদারুণ কষ্টের মধ্যে পড়েছেন ওইসব এলাকার মানুষ।
নাঙ্গলকোটের সাতবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা সামছুল আলম বলেন, “আমাদের পুরো গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বেশির ভাগ বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। বন্যা আগেও দেখেছি, তবে এমন বন্যা কখনো দেখিনি।”
নাঙ্গলকোট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া আক্তার লাকী বলেন, “আমার উপজেলার প্রায় শতভাগ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আমরা দুর্গতদের তালিকা করার চেষ্টা করছি। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো চালু করা হয়েছে। বন্যাদুর্গতদের ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।”
চৌদ্দগ্রাম উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, “আকস্মিক এমন বড় বন্যায় মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এলাকাগুলো থেকে বিচ্ছিন্নভাবে খবর পাচ্ছি।
“চেয়ারম্যানরা অধিকাংশ কাজে যোগ না দেওয়ায় ইউপি সচিবদের থেকে তথ্য নিচ্ছি। তথ্য পেলে ত্রাণসহ অন্যান্য সহায়তা শুরু করবো। লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।”
চৌদ্দগ্রামের গুণবতী গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন বলছিলেন, “গ্রামের একটি বাড়িও প্লাবিত হওয়ার বাকি নেই। বাড়িঘর, মাছের ঘের, ফসল সব পানির নিচে। মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।”
মনোহরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ বলেন, পুরো উপজেলার প্রায় সব সড়ক পানির নিচে ডুবে গেছে। পুকুর-দিঘি থেকে শুরু করে মাছের ঘের সবকিছুই প্লাবিত হয়েছে। মানুষের দুর্ভোগ এখন অবর্ননীয়।
বুড়িচংয়ের বাজেবাহেরচর গ্রামের বাসিন্দা সুমন মিয়া বলেছেন, “আমাদের গ্রামসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি নিচু গ্রাম গোমতীর পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ঘরে থাকতে ভয় পাচ্ছি। সাপ-বিচ্ছু ঘরে ঢুকে পড়তে পারে।”
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা বলেন, “গোমতী নদীর সদর অংশের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত পানি বাড়ছে। উপজেলার পাঁচথুবি ও আমড়াতলি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলা হয়েছে। আমরা মাঠে রয়েছি।”
জেলার দেবিদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. সালাহ উদ্দিন বলেছেন, “বুধবার রাতে সেচ প্রকল্পের ড্রেন ছাড়াও কয়েকটি স্থান দিয়ে কিছু পানি বের হচ্ছিল। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় তা বন্ধ করা হয়।
“কিন্তু অবস্থা এখন বেগতিক। বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে যাচ্ছে।”
বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় কুমিল্লায় বুধবার পর্যন্ত ১৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবেদ আলী জানান।
তিনি বলেন, “পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বৃহস্পতিবার আরও কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হবে। বন্যা দুর্গতদের চাল ও শুকনো খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।”