তিন দিন বন্ধ থাকার পর আবারও মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
Published : 29 Feb 2024, 06:17 PM
তিন দিন বন্ধ থাকার পর আবারও কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এতে নতুন করে সীমান্তের বাসিন্দাদের মাঝে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার হ্নীলা ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নের সীমান্তের ওপারে বিস্ফারণের পাশাপাশি বিমান থেকে গোলাবর্ষণের মত ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের জেরে সবশেষ সোমবার বিকাল ৪টার পর থেকে আর কোনো বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি।
হোয়াইক্যং ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী উনচিপ্রাং, কাঞ্জরপাড়া এবং হ্নীলা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ফুলেরডেইলসহ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, নাফ নদীর ওপারে অন্তত দুই থেকে তিন কিলোমিটারের ভেতরে রাখাইন রাজ্যের বলিবাজার ও নাকপুরা এলাকায় দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘাত চলছে।
বৃহস্পতিবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা গেছে। সকালে আকাশে চক্কর দিতে দিতে বিমান থেকে মর্টার শেল অথবা বোমা বর্ষণ করতে দেখা গেছে বলে জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।
আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ নেওয়া বলিবাজার এলাকায় মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর সদস্যরা হামলা চালিয়েছে বলে ধারণা স্থানীয়দের।
টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, “তিন দিন পর সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। ভোর থেকে গোলাবর্ষণের শব্দ পাওয়া যায়; যা সকাল ৯টার পর থেমে যায়।
“পরে সকাল ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত বিকট শব্দ ভেসে আসে। এ সময় মিয়ানমারের বলিবাজার ও নাকপুরা পাড়ার দিকে আকাশে বিমান চক্কর দিতে দেখা গেছে। বিমান থেকে গুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটেছে। তবে দুপুরের পর থেকে শব্দ কমলেও এখনও থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।”
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ শাহজালাল বলেন, তিন দিন পর আবারও গোলাগুলি শব্দ শোনা গেছে। সীমান্তের লোকজন আতঙ্কে রয়েছেন।
টেকনাফের উনচিপ্রাং এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক তাহের নঈম জানিয়েছেন, কয়েকদিন সীমান্ত পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক ছিল। তিন দিন পর আবারও বিস্ফোরণের শব্দে নতুন আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি সদস্যদের টহল জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবির টেকনাফে ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে তমব্রু রাইট ও লেফট ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে জান্তা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। দু-তিন দিন তীব্র লড়াইয়ের পর তমব্রু ও ঢেঁকিবনিয়া সীমান্ত চৌকি দখলে নেয় আরাকান আর্মি।
সেখানে বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ে টিকতে না পেরে ৩৩০ জন বিজিপি, সেনা ও বেসামরিক নাগরিক পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাদের বৃহস্পতিবার সাগরপথে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি।
এর মধ্যে ৫ ফেব্রুয়ারি নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের ওপর মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে দুজন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নারী ও অন্যজন রোহিঙ্গা পুরুষ। এ ছাড়া গোলাগুলিতে আহত হন আরও নয়জন।
কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবারও ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে টেকনাফ সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে কয়েকটি এলাকায় গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে; যা পরদিন সকাল ৮টার পর থেকে আর শোনা যায়নি।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত আবারও থেমে থেমে হোয়াইক্যং, হ্নীলা ও টেকনাফ সীমান্তে গোলাগুলি ও বিকট শব্দ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন সীমান্তের বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা।
কয়েক দিন না যেতেই আরও টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নের সীমান্তের ওপারে বিস্ফারণের পাশাপাশি বিমান থেকে গোলাবর্ষণের মত ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা।
আরও পড়ুন: