বজলুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে এ পর্যন্ত ২৩টি মামলার রেকর্ড পাওয়া গেছে বলে র্যাবের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
Published : 19 Nov 2022, 11:42 PM
গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি সদস্য বজলুর রহমান ওরফে বজলু চনপাড়ার মাদক কারবারের ‘প্রধান সমন্বয়ক ও গডফাদার’ বলে জানিয়েছে র্যাব।
শনিবার র্যাব-১ এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার নোমান আহমদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুক্রবার বিকালে পূর্বগ্রাম থেকে অস্ত্র, মাদক, জাল টাকা ও বিদেশি মুদ্রাসহ চনপাড়ার মৃত নাদের বক্সের ছেলে বজলুর রহমানকে (৫২) গ্রেপ্তার করা হয়৷
তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, পাঁচ রাউন্ড গুলি, ২২০ গ্রাম হেরোইন, ২৫ হাজার ভারতীয় রূপি ও ৭৫ হাজার টাকার জাল নোট, মাদক বিক্রির নগদ সাড়ে ২১ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়৷
বজলুর রহমান নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান এবং রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।
ব়্যাবের বিজ্ঞপ্তিতে বজলুর রহমান ওরফে বজলুকে রূপগঞ্জের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র (চনপাড়া বস্তি) এলাকার ‘চিহ্নিত অস্ত্রধারী শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রক’ বলে উল্লেখ করা হয়।
এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় তার বেশ কয়েকজন সহযোগী রয়েছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপসহ বিভিন্ন অপরাধে এখন পর্যন্ত ২৩টি মামলার রেকর্ড পাওয়া গেছে।
“তিনি চনপাড়া বস্তি এলাকাসহ আশেপাশের এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসিক ভিত্তিতে টাকা তুলত বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রটি প্রকৃতপক্ষে চনপাড়া বস্তি নামে অধিক পরিচিত; যেখানে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। অপেক্ষাকৃত নিম্ন আয়ের মানুষ এই বস্তিতে বসবাস করে যার অধিকাংশই দিনমজুর। বিশাল ও অত্যন্ত ঘিঞ্জি এবং ঘনবসতিপূর্ণ এই চনপাড়া বস্তিটি নয়টি এলাকায় বিভক্ত।
“এই এলাকার শীর্ষ ৫-৬টি মাদক কারবারির প্রধান সমন্বয়ক ও গডফাদার ছিলেন বজলুর রহমান ওরফে বজলু। বস্তি এলাকার মাদকের প্রায় ২০০টি স্পট হতে কয়েকটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বজলু এই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া যায়।”
বজলুর রহমান স্থানীয় উঠতি বয়সের ছেলেদের কাছে ‘বজলু ভাই’ নামে পরিচিত উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব জানায়, বিভিন্ন সোর্স তার ছত্রছায়ায় এলাকার ছেলেদেরকে টাকা প্রদান করে বিভিন্ন প্রকার অপকর্ম যেমন- হত্যা, মাদক বেচাকেনা, চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি, কিশোর গ্যাং, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি এবং পতিতালয় পরিচালনা করে।
কেউ চাঁদা না দিলে ভয়াবহ নির্যাতন করা হয় এবং এসব আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত এক-দেড় বছরে ছয়জন নিহত হয়েছেন বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে চনপাড়ায় অভিযান চালিয়ে মাদক ও অস্ত্র উদ্ধারসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১। গ্রেপ্তার আসামিদের গাড়িতে তোলার সময় তাদের ছিনিয়ে নিতে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে র্যাব সদস্যদের উপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে; রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ও গুলি চালায়।
ওইদিন গ্রেপ্তার ১১ জনের মধ্যে মো. হাসানও রয়েছেন; যিনি বজলুর রহমানের ভাই।
বুয়েট ছাত্র ফারদিন নূর পরশ গত ৪ নভেম্বর নিখোঁজ হন; ৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জে গোদনাইলে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। তদন্তের ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা পুলিশ নিখোঁজ হওয়ার রাতে ফারদিনের চনপাড়ার সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়।
এরপর ১০ নভেম্বর চনপাড়ায় ব়্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যান রাশেদুল ইসলাম শাহীন ওরফে সিটি শাহীন।
ফারদিন ও শাহীনের মৃত্যুর ঘটনার পর থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ চনপাড়ার বিষয়ে বিশেষ খোঁজখবর শুরু করে।
রাশেদুল ইসলাম শাহীন ওরফে সিটি শাহীন কায়েতপাড়া ইউনিয়নের এক ওয়ার্ড সদস্যের ছত্রছায়ায় থেকে অপরাধকাজ চালাতেন বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।
ফারদিন নূর পরশ হত্যায় বজলু জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে র্যাব জানিয়েছে।
আরও পড়ুন:
ফারদিনের ঘটনায় বজলুরের সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখছে র্যাব