চনপাড়ার ঘটনায় ইউপি সদস্য বজলুর গ্রেপ্তার

আওয়ামী লীগ নেতা বজলুর রহমান কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান৷

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2022, 12:48 PM
Updated : 18 Nov 2022, 12:48 PM

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চনপাড়ায় মাদকবিরোধী অভিযানে হামলার ঘটনায় স্থানীয় ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা বজলুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে ব়্যাব; যিনি হত্যা ও মাদকসহ একাধিক মামলার আসামি। 

শুক্রবার বিকালে ব়্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাল আল মোমেন রূপগঞ্জ থেকে বজলুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানালেও বিস্তারিত কিছু বলেননি। 

তিনি বলেছেন, “গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে ব়্যাবের মাদক ও সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ অভিযানে হামলার অভিযোগে করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে৷” 

এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা ও মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মামলা রয়েছে৷ তার গ্রেপ্তারের বিষয়ে পরে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানান র‌্যাবের এ কর্মকর্তা। 

গ্রেপ্তার বজলুর রহমান কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান এবং রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য৷ 

সম্প্রতি বুয়েট ছাত্র ফারদিন নূর পরশ হত্যার পর চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের নাম সামনে আসে; যেখানে মাদক ব্যবসার অন্যতম নিয়ন্ত্রক হিসেবে এক ইউপি সদস্যের নাম জড়িত। এর কয়েকদিন পর চনপাড়ায় র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন ২৩ মামলার আসামি রাশেদুল ইসলাম শাহীন ওরফে সিটি শাহীন। 

৪ নভেম্বর নিখোঁজ হওয়ার পর ৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জে গোদনাইলে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিন নূর পরশের লাশ উদ্ধার করা হয়। তদন্তের ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা পুলিশ নিখোঁজ হওয়ার রাতে ফারদিনের চনপাড়ার সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়। ৪ নভেম্বর রাত ২টা ৩৫ মিনিটে ফারদিন ওই এলাকায় অবস্থান করছিলেন বলে প্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হন তারা। সেই তথ্য অনুযায়ী, তার অবস্থান ছিল চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র (চনপাড়া বস্তি) এলাকায়। 

১০ নভেম্বর চনপাড়ায় ব়্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যান রাশেদুল ইসলাম শাহীন ওরফে সিটি শাহীন। 

ফারদিন ও শাহীনের মৃত্যুর ঘটনার পর থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ চনপাড়ার বিষয়ে বিশেষ খোঁজখবর শুরু করে। 

রাশেদুল ইসলাম শাহীন ওরফে সিটি শাহীন কায়েতপাড়া ইউনিয়নের এক ওয়ার্ড সদস্যের ছত্রছায়ায় থেকে অপরাধকাজ চালাতেন বলে স্থানীয়দের ভাষ্য। 

কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য বজলুর রহমান রূপগঞ্জ উপজেলার চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা।

সেপ্টেম্বরে র‌্যাবের অভিযানে হামলা চরপাড়ায়

গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে চনপাড়ায় অভিযান চালিয়ে মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার ও ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১। গ্রেপ্তার আসামিদের গাড়িতে তোলার সময় তাদের ছিনিয়ে নিতে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে র‌্যাব সদস্যদের উপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে; রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ও গুলি চালায়। 

হামলায় নাঈম ইসলাম ও খন্দকার কামরুজ্জামান ইমন নামে দুইজন র‌্যাব সদস্য আহত হয়েছেন বলেও রূপগঞ্জ থানার ওসি এএফএম সায়েদ জানান। 

ওই রাতে গ্রেপ্তাররা হলেন চনপাড়া পুনর্বাসনকেন্দ্র এলাকার পারভিন বেগম, রিপন মিয়া, রাজু আহাম্মেদ রাজা, মো. হাসান, তপু মিয়া, জসিম বেপারি, মো. বাবু, মো. আমিন, রাসেল হোসেন, নাজমুল হোসেন রায়হান ও মো. সুজন।

গ্রেপ্তার মো. হাসান কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য বজলুর রহমানের ভাই। 

এ ঘটনায় দুদিন পর ইউপি সদস্য বজলুর রহমানসহ ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করে পৃথক তিনটি মামলা করে র‌্যাব। 

রূপগঞ্জ থানার ওসি এএফএম সায়েদ জানান, র‌্যাব-১, সিপিসি-১ এর নায়েক সুবেদার তৌফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মাদক ও অবৈধ বিদেশি অস্ত্র রাখা, সরকারি কাজে বাধা দিয়ে র‌্যাবের উপর হামলা করে আসামি ছিনতাইয়ের চেষ্টা, সরকারি গাড়ি ভাঙচুর ও দাঙ্গায় লিপ্ত থাকার অভিযোগে মামলা তিনটি দায়ের করেন। 

আরও পড়ুন:

Also Read: ‘মাদক ব্যবসায়ীদের’ গুলিতে নিহত হন শাহীন, মামলায় বলছে ব়্যাব

Also Read: ফারদিন হত্যা: চনপাড়ার মাদক কারবারিদের খোঁজে পুলিশ