সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে খাগড়াছড়ির মাইনী নদীতে ফুল দিয়ে পূজা শুরু করেন চাকমা জাতিগোষ্ঠীর মানুষ।
Published : 12 Apr 2025, 01:09 PM
পুরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করতে নদীতে ফুল দিয়ে দেবী গঙ্গার পূজা করার মাধ্যমে শুরু হয়েছে চাকমা সম্প্রদায়ের ‘বিঝু উৎসব’। এ সময় নদী তীরে প্রার্থনায় দেশের মানুষের মঙ্গল কামনা করা হয়েছে।
বিজু উৎসব শুরুর প্রথম দিন চৈত্রের ২৯ তারিখে অনুষ্ঠিত হয় ‘ফুল বিঝু’। এ উপলক্ষে শনিবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে খাগড়াছড়ির মাইনী নদীতে ফুল দিয়ে পূজা শুরু করেন চাকমা জাতিগোষ্ঠীর মানুষ।
এ সময় মাইনী ব্রিজ সংলগ্ন এলাকাটি পরিণত হয় বিভিন্ন বয়সী মানুষের মিলনমেলায়।
ফুল বিঝুর প্রস্তুতি হিসেবে আগের রাতেই বন থেকে বিঝু, মাধবীলতা, অলকানন্দা, রঙ্গনসহ নানা রকমের ফুল সংগ্রহ করে রাখে চাকমা তরুণ-তরুণীরা।
পরে ভোর থেকেই নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে সেসব ফুল নিয়ে তারা পরিবারের সদস্য, স্বজন, বন্ধুদের নিয়ে মাইনী নদীর তীরে জড়ো হন।
পরে ফুল, নিম পাতা, মোমবাতি জ্বালিয়ে দেবী গঙ্গাকে তুষ্ট করার জন্য পূজা করা হয়। নদীর পাড়ে গঙ্গা দেবীর উদ্দ্যেশে প্রার্থনা করে ফুল ভাসিয়ে দেন নদীতে।
মূলত জলের দেবী গঙ্গার প্রতি আনুগত্য ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি নতুন বছরে সুখ আর সমৃদ্ধির আশায় এ প্রার্থনা করা হয়।
ভোরে মাইনীর তীরে বাবা-মায়ের সঙ্গে ফুল বিঝুতে অংশ নেওয়া বর্ণিতা চাকমা বলেন, “আমরা গঙ্গা মায়ের উদ্দ্যেশে ফুল দিয়ে পূজা করেছি। এজন্য রাতেই ফুল সংগ্রহ করেছি। আজকে আমাদের ফুল বিঝু।”
প্রীতি চাকমা বলেন, “প্রতিবছরই আমরা ফুল বিঝু উদযাপন করি। এবারও আমরা মা গঙ্গাকে প্রণাম করে উদযাপন করছি। পরিবারের মঙ্গল কামনা করি। ভবিষ্যতেও যেন আমরা এভাবে উদযাপন করতে পারি।”
তৃষা চাকমা বলেন, “প্রতিবছরই এখানে এসে বিভিন্ন ধরনের ফুল দিয়ে গঙ্গা দেবীর পূজা করি। আমাদের বন্ধু-বান্ধবরা একসঙ্গে এসেছি। খুবই ভালো লাগছে।”
ফুল বিঝুতে অংশ নেওয়া ডেসটিনি চাকমা বলেন, “আমরা কাল রাতেই ফুল সংগ্রহ করেছি। আজকে ভোরে এখানে এসে মাইনী নদীতে ফুল দিয়ে পূজা করেছি।”
এদিকে এবারের বর্ষবরণকে ঘিরে খাগড়াছড়িতে চলছে নানা আয়োজন। এর অংশ হিসাবেই সকালে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে বৈসু-সাংগ্রাই-চাংক্রান-বিঝু-বিহু-বিষু-পাতা উদযাপন কমিটি।
সকাল ৮টা থেকে হর্টিকালচার এলাকা সংলগ্ন এলাকা থেকে শুরু হয়ে শোভাযাত্রাটি মাইনী নদীতে শেষ হয়। শত শত মানুষ এ শোভাযাত্রায় যোগ দেয়।
শোভাযাত্রায় অংশ নেন সেনাবাহিনীর দীঘিনালা জোনের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল ওমর ফারুক ও উপ-অধিনায়ক মেজর মেহেদি হাসান। এ সময় উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বৈসু-সাংগ্রাই-চাংক্রান-বিঝু-বিহু-বিষু-পাতা উদযাপন কমিটি উপদেষ্টা সমির চাকমা বলেন, “সকালে মাইনী নদীতে ফুল দিয়ে পূজা করার মাধ্যমে ফুল বিঝু আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। প্রার্থনায় আমরা দেশের মঙ্গল কামনা করি। দেশের মানুষ এবং জাতি-ধর্ম-বর্ণ নিবিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ যাতে পুরাতন বছরের অতীত ভুলে নতুন বছরে আরও সুখী ও সমৃদ্ধ হোক তার কামনা করি।”