স্বামীর দাবি, আঞ্জুয়ারার মৃত্যু হয়েছে পুলিশের গুলিতে, তবে পুলিশ বিষয়টি স্পষ্ট করেনি।
Published : 08 Nov 2023, 10:20 PM
গাজীপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে নিহত পোশাক শ্রমিক আঞ্জুয়ারা খাতুনের সুরতহাল প্রতিবেদনে তার কপাল, পিঠ, পেটসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ‘কালো ছিদ্র’ পাওয়ার কথা জানানো হয়েছে।
তবে তিনি গুলিতে মারা গেছেন কি-না সে বিষয়ে গাজীপুর মহানগর পুলিশের কাছ থেকে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য আসেনি।
কোনো ব্যক্তির অপমৃত্যু হলে তার লাশের দৃশ্যমান অবস্থা নিয়ে পুলিশ যে প্রতিবেদন তৈরি করে, তাকে বলা হয় ‘সুরতহাল প্রতিবেদন’। সুরতহাল প্রতিবেদনের পর ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের উপস্থিতিতে লাশের ময়নাতদন্ত (পোস্টমর্টেম) করা হয়।
বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আঞ্জুয়ারার লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন ঢাকার শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর হোসেন।
সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, আঞ্জুয়ারার কপালের মাঝখানে একটি কালো ছিদ্র, কপালের বাঁপাশে একটি, ডান গালে একটি, বাম গালে দুটি, বাম কানের নিচে ঘাড়ে দুটি এবং পেটের বাঁ পাশে দুটি কালো ছিদ্র রয়েছে।
এছাড়া বাঁ হাতের কনুইয়ের ওপর থেকে কাঁধ হয়ে পিঠের বাঁ পাশে কোমর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত কালো ছিদ্র ছিল। ডান হাতের বিভিন্ন স্থানেও ছিল একই ধরনের ছিদ্র। সমস্ত মুখমণ্ডল রক্তমাখা ছিল।
সুরতহাল প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, আঘাতজনিত কারণে আঞ্জুয়ারার মৃত্যু হয়েছে। আর হাসপাতালের ডেথ সার্টিফিকেটে বলা হয়েছে, ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেলেই আঞ্জুয়ারার লাশের ময়নাতদন্ত হয়। তবে সেখানে কী পাওয়া গেছে, তা জানা যায়নি। ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।
সরকারঘোষিত ন্যূনতম মজুরি প্রত্যাখ্যান করে বুধবার গাজীপুরে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে আঞ্জুয়ারার মৃত্যু হয়। ২৪ বছর বয়সী আঞ্জুয়ারা কোনাবাড়ির ইসলাম গার্মেন্টসের সেলাই মেশিন অপারেটর ছিলেন।
সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ জামাল উদ্দিন (৪২) নামের আরেক পোশাক শ্রমিক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
জামাল হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি ইসলাম গার্মেন্টসের সুপারভাইজার। সকালে অফিসে যাওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে তিনি আহত হন।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. মাহবুব আলম জানান, সাড়ে ১২ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরির ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কোনাবাড়ি ও জরুনসহ আশপাশের কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বুধবার সকালে বিক্ষোভে নামেন। এক পর্যায়ে তারা পুলিশের সঙ্গে এই সংঘর্ষে জড়ায়।
আঞ্জুয়ারার মৃত্যু কীভাবে হল, সেই প্রশ্নে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “সংঘর্ষের সময় ওই নারী হয়ত সড়কে ছোটাছুটি করতে গিয়ে পড়ে গিয়ে জখম হয়েছেন। দুই জনকে আমরা উন্নত চিৎকসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে পাঠাই। হয়ত অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি মারা যেতে পারেন।”
তবে আঞ্জুয়ারার স্বামী মো. জামালের অভিযোগ, তার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে পুলিশের গুলিতে। জামাল ওই এলাকার একটি প্রিন্টিং কারখানায় কাজ করেন।
হাসপাতালে লাশ গ্রহণের সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে স্ত্রীর সাথে তার দেখা হয়, কথা হয়। আঞ্জুয়ারা জানান, তাদের কারখানা ছুটি দিয়ে দিয়েছে। তখন তাকে কোনাবাড়ির জরুন এলাকা দিয়ে বাসায় ফেরার পরামর্শ দেন জামাল।
তিনি বলেন, কিছুক্ষণ পরে তিনি লোকের কাছে শোনেন, জরুন এলাকায় আঞ্জুয়ারা পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।
পরে স্থানীয় হাসপাতালে গিয়ে স্ত্রীকে গুরুতর আহত অবস্থায় পান জাামল। সেখানকার চিকিৎসকেরা তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিতে বলেন।
সে অনুযায়ী তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সোয়া ১২টার দিকে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।
জামাল ও আঞ্জুয়ারার দুই সন্তান আরিফ (৭) ও জয়া খাতুন (৬) আগে সিরাজগঞ্জে তদের দাদা-দাদীর কাছে থাকত। দিন ১৫ আগে তাদের কোনাবাড়িতে নিজের কাছে নিয়ে আসেন আঞ্জুয়ারা। আগামী শুক্রবার তাদের সবাই মিলে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল।
জামাল জানান, প্রিন্টিং কারখানার চাকরিতে তার বেতন ১১ হাজার টাকা। আর তার স্ত্রীর বেতন ছিল ১০ হাজার ৮ শ টাকা।
আরো পড়ুন
মজুরি প্রত্যাখান: শ্রমিক বিক্ষোভে দিনভর উত্তপ্ত গাজীপুর, সংঘর্ষ
গাজীপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে নারী শ্রমিক নিহত
গাজীপুরে সাঁজোয়া যানের মধ্যে সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণে ৩ পুলিশ আহত