তৈরি পোশাক কারখানার জন্য ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি প্রত্যাখান করে একদিন পর গাজীপুরে শ্রমিকরা আবারও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। এ সময় তাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার সকাল থেকে এই সংঘর্ষে এক নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আরেক শ্রমিক চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এ ঘটনার পর বেশ কিছু কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হলেও দিনভর শ্রমিকরা গাজীপুরের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে বিক্ষোভ চালিয়ে গেছেন। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হয়েছেন।
এতে বেশ কিছু সময় ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ থাকে।
এর মধ্যেই বিকালে একটি এপিসি কারে সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণে তিন পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে একজনের হাতে কব্জি উড়ে গেছে। তাদেরকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজীপুর মহানগর পুলিশ।
ন্যূনতম বেতন ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করছেন গার্মেন্ট শ্রমিকরা। এর মধ্যে মঙ্গলবার সাড়ে ১২ হাজার টাকা মজুরি ঘোষণা করে সরকার।
সেই মজুরি প্রত্যাখান করে সকালে গাজীপুরের কোনাবাড়ি, বাইমাইল, জরুনসহ আশপাশের কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভে নামেন। এক পর্যায়ে তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এই সংঘর্ষে নিহত হন কোনাবাড়ির ইসলাম গার্মেন্টসের সেলাই মেশিন অপারেটর মোসা. আঞ্জুয়ারা খাতুন (২৪)। জামাল উদ্দিন (৪২) নামে আরও একজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তখন আতঙ্কে বেশকিছু কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু শ্রমিক নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে দুপুরের দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কোনাবাড়ি এলাকায় শ্রমিকরা আবার বিক্ষোভ শুরু করে।
তখনও তাদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংষর্ঘ হয়। এ সময় শ্রমিকদের ছোড়া ইট-পাটকেলে পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত থেমে থেমে এই বিক্ষোভ চলে।
পুলিশ জানায়, এদিন কোনাবাড়ি, চান্দনা চৌরাস্তা, শিববাড়ী, কাশিমপুর, সফিপুর ও মৌচাকসহ আশপাশের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক আন্দোলনে যোগ দেয়।
বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের নাওজোড় এলাকা অবরোধ করে। এতে যানচলাচল ব্যাহত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়ে শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে চাইলে ফের সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। সেখানে শ্রমিকদের ইট-পাটকেলে পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হয়।
সেখানকার পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশের পাশাপাশি শিল্প পুলিশ, বিজিবি, র্যাব সদস্যরা সেখানে ছুটে যান। তাদের সঙ্গে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ছিলেন। একপর্যায়ে শ্রমিকরা পিছু হটে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে।
এদিকে ভাওয়াল বদলে আলম সরকারি কলেজের সামনের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে টায়ার ও ভাঙ্গা আসবাবপত্রে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে তারা।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. মাহবুব আলম বলেন, সন্ধ্যায় শ্রমিকরা মহাসড়ক ছেড়ে চলে গেলে, পরিস্থিতি ক্রমেই স্বাভাবিক হয়ে যায়।
“বুধবার শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষে মোট আট পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এর মধ্যে সকালে কোনাবাড়ি এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন ও বিকেলে নাওজোড় এলাকায় সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়েছেন।
“বিকালে যে পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন তাদের মধ্যে শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষে দুইজন আহত হয়েছেন।
কমিশনার আরও বলেন, এ ছাড়া এপিসি কারে সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণে আরও তিনজন আহত হওয়ার ঘটনা আছে। তাদেরকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, আহতবস্থায় পাঁচ পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত পুলিশ সদস্য প্রবীর (৩০) ও খোরশেদের (৩০) শরীরের বিভিন্ন অংশে জখমের চিহ্ন রয়েছে এবং ফুয়াদের (২৮) ডান হাতের কব্জি বিছিন্ন হয়ে গেছে।
এ তিনজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আর পুলিশ সদস্য আশিকুল (২৭) ও বিপুলকে (২৪) শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।