Published : 05 Dec 2022, 05:27 PM
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ভাড়ইমারি গ্রামের আলোচিত ৩৭ কৃষকের ঋণখেলাপির বিষয়টি পর্যালোচনায় বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের তদন্ত দল মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করেছে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় তদন্ত কমিটির তিন সদস্য এবং সমবায় ব্যাংক পাবনা শাখার কর্মকর্তারা ভাড়ইমারী উত্তরপাড়া সবজি চাষি সমবায় সমিতির সভাপতি বিলকিস নাহারের বাড়িতে যান।
এ সময় সেখানে উপস্থিত কৃষক আব্দুস সামাদ, মজনু প্রামাণিক ও আতিয়ার রহমানসহ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলেন। সেখান থেকে বেরিয়ে কমিটির সদস্যরা অন্য কৃষকদের বাড়ি যান।
তদন্তকাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম-পরিদর্শন) আহসানুল গণি। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপক (পরিদর্শন ও আইন) আব্দুর রাজ্জাক ও সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রকল্প ঋণ) আমিনুল ইসলাম রাজীব।
তবে তদন্তকাজ নিয়ে কোনো বক্তব্য দিতে অস্বীকার করেন আহসানুল গণি। তিনি সংবাদকর্মীদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, “ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিদের্শনা আছে, গণমাধ্যমে কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না।”
পাবনার ঈশ্বরদীর ভাড়ইমারী উত্তরপাড়ার ৩৭ জন কৃষক ঋণ নিয়ে খেলাপী হওয়ায় গ্রেপ্তারি পরায়ানা জারি হয়। এরপর ১২ কৃষককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয় এবং বাকি ২৫ জন গ্রেপ্তার এড়াতে এলাকাছাড়া হন। তাদের ঋণের পরিমাণ ছিল ২৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা।
বিষয়টি নিয়ে দেশে সমালোচনার মধ্যে তাদের জামিন দেয় আদালত।
এই অবস্থার মধ্যে গত ২৮ নভেম্বর ব্যাংকের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের তথ্য জানানো হয়। কমিটির সদস্যরা রোববার পাবনায় পৌঁছেন এবং সোমবার সকাল থেকে তদন্তকাজ শুরু করেন।
কৃষকরা জানিয়েছেন, তদন্ত দলের সদস্যরা তাদের কাছে বেশ কিছু বিষয় জানতে চেয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে- ঋণের টাকা কেন তারা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছেন, ঋণের কিস্তি পরিশোধের রশিদ আছে কি-না, কার কাছে তারা কিস্তির টাকা জমা দিয়েছেন, মামলা করার আগে ব্যাংক তাদের ঋণ পরিশোধের জন্য কোনো নোটিশ দিয়েছে কি-না।
ভাড়ইমারী উত্তরপাড়া সবজি চাষি সমবায় সমিতির সভাপতি বিলকিস নাহার বলেন, “ব্যাংকের মাঠকর্মীরা এসে কৃষকের কাছ থেকে কিস্তি গ্রহণ করেছেন। কিস্তির টাকা মাঠকর্মীরা ব্যাংকে জমা দিয়েছেন কি-না তা আমি জানি না।“
“ব্যাংক আমার বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতির মামলা করেছে। আমি সেই মামলায় নিয়মিত হাজিরা দিয়ে আসছি। ৩৭ জন কৃষকের নামে মামলা হয়েছে তা আমি জানতাম না। এমনকি মামলার আগে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কৃষকদের ঋণ পরিশোধের জন্য কোনো নোটিশও দেয়নি।”
কৃষক আব্দুল হান্নান বলেন, “চল্লিশ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে লভ্যাংশসহ পরিশোধ করেছি। এরপরও কারাগারে যেতে হয়েছে, এজন্য ব্যাংক কর্মকর্তারা দায়ী। যদি ঋণ পরিশোধ না করে থাকি, তবে কেন আমাদের বিরুদ্ধে উকিল নোটিশ পাঠানো হলো না। উকিল নোটিশ পাঠালেই জানতে পারতাম ঋণ পরিশোধ হয়নি। কোথায় সমস্যা রয়েছে, সেটা আমরা দেখতাম। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তা না করে সরাসরি আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়ে দিলো। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে!”
স্থানীয় ইউপি সদস্য মহির মণ্ডল বলেন, এলাকার ৩৭ জন কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর ১২ কৃষককে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার বিষয়ে কোনো কৃষক আগে জানতেন না। ঋণ পরিশোধের জন্য কৃষকদের নোটিশ দেওয়া হয়নি। এই তদন্ত নামকাওয়াস্তে তদন্ত ছাড়া আর কিছুই না।
কারাভোগের শিকার কৃষকরা আরও বলেন, জানান, টাকা পরিশোধের পরও তাদের কারাগারে থাকতে হয়েছে। এ দায়ভার ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।
আরও পড়ুন: