চকরিয়ার ইউএনও জেপি দেওয়ান জানান, ১২ ইউনিয়নের ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
Published : 07 Aug 2023, 11:40 PM
টানা বৃষ্টি, জোয়ারের পানি ও পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারের ৩১ ইউনিয়নের লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। কিছু মানুষকে এরই মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে।
সোমবার চকরিয়া ও উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া মাতামুহুরি নদী থেকে কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক, সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টসহ উপকূলীয় এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
কক্সবাজার আঞ্চলিক আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষণ কর্মকর্তা দুলাল চন্দ্র দাশ বিকালে সাংবাদিকদের বলেন, “রোববার বিকাল ৩টা থেকে সোমবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১০৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে সোমবার সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৮১ মিলিমিটার।
আরও তিন দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
সন্ধ্যায় কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, গত কয়েক দিন ধরে প্রবল বর্ষণ ও পূর্ণিমার উচ্চ জোয়ার অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে উচ্চ জোয়ারের কারণে পেকুয়ায় কিছু বাঁধ ভেঙে গেছে।
“কুতুবদিয়ার ছয়টি ইউনিয়নের ৭০ পরিবার, পেকুয়াতে আট হাজার পরিবার, মহেশখালীতে ১০০ পরিবার, টেকনাফে ২০০ পরিবার, চকরিয়ায় ৪৫ হাজার পরিবার, কক্সবাজার সদরে এক হাজার পরিবার, ঈদগাঁও উপজেলায় ১৫০ পরিবার ও উখিয়াতে ৫০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।”
মুহাম্মদ শাহীন ইমরান আরও বলেন, “প্রতিটি উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ইউএনওরা নৌকা নিয়ে পানিবন্দি মানুষের ঘরে ঘরে যাচ্ছেন এবং তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসছেন।
“এ ছাড়া পাহাড় ধসের শঙ্কায় কক্সবাজার সদর ও পৌরসভায় মাইকিং করা হচ্ছে। মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে আসার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে আসছেন তাদের জন্য শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রত্যেকে যাতে আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার পান তা সুনিশ্চিত করা হচ্ছে।”
চকরিয়া উপজেলায় ৯৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, এ পর্যন্ত সাত হাজার পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পেকুয়ায় ২০ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছে।
বৃষ্টি, জোয়ারের পানি এবং পাহাড়ি ঢলে চকরিয়া উপজেলার কমপক্ষে ১২টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে মানুষ পানিবন্দি হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী।
তিনি জানান, পাহাড়ি ঢলে মাতামুহুরি নদীতে ভেসে আসা কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে দুপুরে রশিদ নামের এক যুবক নিখোঁজ হয়। দুই ঘণ্টা পর নদীর লক্ষ্যরচর মোহনা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
চকরিয়া পৌরসভাসহ ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে কাঁকড়া, লক্ষ্যরচর, বুমুবিল ছড়ি, সুরেজপুর-মানিকপুর, কৈয়ারবিল ও কোনাখালী ইউনিয়ন। তবে পানি নেমে যাচ্ছে বলেও জানান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান জানান, ১২ ইউনিয়নের ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
অপরদিকে ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাঁও, জালালাবাদ ও পোকখালী ইউনিয়নের অর্ধ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে ঈদগাঁও নদীর পানি ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।
জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদ জানান, বেড়িবাঁধ ভেঙে তিনটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার প্লাবিত হওয়া অব্যাহত রয়েছে। পানি না কমলে সামনে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে, সামুদ্রিক জোয়ারের ঢেউয়ে মেরিন ড্রাইভ সড়ক, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী ও সুগন্ধা পয়েন্ট, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। মেরিন ড্রাইভের কিছু অংশে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে নতুন করে আরও কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।