টাঙ্গাইলের বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার রায় রোববার।
Published : 02 Feb 2025, 12:42 AM
টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার যুক্তিতর্ক শেষে রোববার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছে আদালত। হত্যার এক যুগ পর এখন রায় শোনার অপেক্ষায় স্বজনরা।
স্বজনদের পাশাপাশি অপেক্ষায় রয়েছেন টাঙ্গাইলের মানুষজন। আসামিদের বিরুদ্ধে কি রায় দিবেন আদালত? ফাঁসি নাকি যাবজ্জীবন? এই প্রশ্ন এখন পুরো জেলাজুড়ে।
২৬ জানুয়ারি টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে ফারুক হত্যা মামলার বাদী ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। ওই দিন বিচারক মো. মাহমুদুল হাসান মামলার রায় ঘোষণার তারিখ দিয়েছেন ২ ফেব্রুয়ারি।
ফারুক আহমেদের ছেলে আহমেদ মজিদ সুমন বলেন, মামলা থেকে তদন্ত, আদালতে অভিযোগ গঠন, সাক্ষ্যগ্রহণ বিভিন্ন পর্যায়ে আসামিরা বিচার প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করছেন। আইন সঠিক পথে চললে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশা করছেন তিনি।
২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ তার কলেজপাড়ার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার তিন দিন পর ফারুকের স্ত্রী নাহার আহমেদ টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
২০১৪ সালের অগাস্টে হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আনিসুল ইসলাম রাজা ও মোহাম্মদ আলীকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরে তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাদের জবানবন্দিতে আওয়ামী দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার নাম উঠে আসে।
পরে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওয়াহেদ, আবদুল খালেক এবং সনি আদালতে জবানবন্দি দেন। তাদের জবানবন্দিতেও ওই চারজনের নাম উঠে আসে। এরপর ওই চার ভাই আত্মগোপনে চলে যান। এক পর্যায়ে আমানুর রহমান খান আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তিন বছর পর জামিনে মুক্ত হন তিনি।
২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ডিবির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মাহফীজুর রহমান চার ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র প্রদান করেন। ২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।
বিচার চলাকালে দুই আসামি আনিছুর রহমান ওরফে রাজা এবং মোহাম্মদ সমির কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। সবশেষ ২৬ জানুয়ারি ফারুক হত্যা মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হয়।
এদিকে ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আমানুর রহমান খান আবার আত্মগোপনে চলে যান। তার অপর দুই ভাই ২০১৪ সাল থেকে বিদেশে অবস্থান করছেন বলে তাদের ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন। এ ছাড়া আমানুরের আরেক ভাই সাবেক পৌর মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি অন্য একটি মামলায় কারাগারে আছেন।
এই চার ভাইয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় হত্যা, চাঁদাবাজি, দখল, সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন অভিযোগে একাধিক মামলা হয়েছে। তবে কোনো মামলায় তাদের বিচার হয়নি।
আমানুর রহমান খানের বিরুদ্ধে পাঁচটি হত্যা মামলাসহ অর্ধশতাধিক মামলা রয়েছে। সহিদুর রহমান খান মুক্তির বিরুদ্ধেও পাঁচটি হত্যাসহ অন্তত ৪০টি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া জাহিদুর রহমান খানের বিরুদ্ধে তিনটি হত্যা এবং সানিয়াত খান বাপ্পার বিরুদ্ধে চারটি হত্যাসহ ডজন খানেক মামলা হয়েছে।
এত মামলা হলেও তাদের কখনো বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি। কখনও তাদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার হয়েছে। আবার কখনও আসামিদের চাপে বাদীপক্ষ মামলা তুলে নিতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের ভয়ে কেউ কখনো আদালতে সাক্ষ্য পর্যন্ত দিতে যায়নি।
টাঙ্গাইলের রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত কৌঁসুলি (এপিপি) মোহাম্মদ সাইদুর রহমান বলেন, যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় ২৭ জন স্বাক্ষীর জবানবন্দি, জেরা, কয়েকজন আসামি ও স্বাক্ষীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনা করে আদালতকে শোনানো হয়েছে।
তিনি বলেন, “আদালতে যুক্তিতর্কের মাধ্যমে আসামিদের বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি আমরা। আশা করি আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে।”