“আমি নিজে কয়েকদিন দেখেছি দুটি কুমির একসঙ্গে। অনেকেই বলে তারা নাকি একসঙ্গে তিনটি কুমির দেখেছে।”
Published : 04 Mar 2025, 02:12 PM
এক মাসের বেশি সময় ধরে রাজবাড়ী-ঝিনাইদহ জেলার সীমান্ত ঘেঁষা গড়াই নদীতে দেখা মিলেছে কুমিরের। এতে নদীপাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ালেও কুমির দেখতে নদীতীরে ভিড় করছেন উৎসুক জনতা।
স্থানীয়দের দাবি- কখনো সকাল, কখনো দুপুরে আবার কখনো সন্ধ্যার আগে একটি নয়, দুটি নয়, একাধিক কুমির ভেসে উঠছে নদীতে।
পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস. এম আবু দারদা জানিয়েছেন, মানুষের নিরাপত্তার জন্য দ্রুত বনবিভাগের বিশেষজ্ঞ টিম এনে কুমির ধরার ব্যবস্থা করা হবে।
সরেজমিনে পাংশা উপজেলার কসবামাজাইল ইউনিয়নের কেওয়া গ্রামে দেখা যায়, গড়াই নদীর মোহনের ঘাট এলাকার নদীপাড়ে ভিড় করে আছেন বেশ কিছু মানুষ। অধীর আগ্রহে তারা তাকিয়ে আছেন নদীর দিকে। যদি দেখা মেলে কুমিরের।
তারা জানান, এক মাসের বেশি সময় ধরে নদীতে কুমির দেখার খবর পাওয়া যাচ্ছে। তাই কুমির দেখতে প্রতিদিন নদীপাড়ে ভিড় করছে মানুষ।
নদীতে কুমির ভেসে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কেউ কেউ মোবাইলে ভিডিও করে রাখছে। আবার অনেকেই দিনের পর দিন নদীর পাড়ে এসেও দেখা পাননি কুমিরের।
কেউ কেউ এক নজর কুমির দেখায় আশায় নদী পাড়ে বসে বলছেন- “কুমির বড় না ঢেঁকি বড়” ইত্যাদি। স্থানীয়দের বিশ্বাস এসব কথা বললে নাকি কুমির ভেসে ওঠে।
স্থানীয় শিপন আলী বলেন, “কখনো একটি, কখনো দুটি, আবার কখনো তিনটি কুমিরও ভেসে উঠে নদীতে। আমি নিজে কয়েকদিন দেখেছি দুটি কুমির একসঙ্গে। মোবাইলে ভিডিও করে রেখেছি। অনেকেই বলে তারা নাকি একসঙ্গে তিনটি কুমির দেখেছে।”
তিনি আরও বলেন, “গত দেড় মাস হলো কুমির দেখা যাচ্ছে নদীতে। এতে আতঙ্কে দিন পার করছে নদী তীরের মানুষ। কেউ গোসল বা অন্যকাজে নদীতে নামতে পারছে না। গবাদিপশুকে নদীতে নামাতে পারছে না।”
নদী পাড়ের বাসিন্দা কেসমত আলী বলেন, “বিশাল কুমির কালা কুচকুচে এটা, সাথে ছোট ছোট আরও দুডে, গত পরশু সাঁতার কাটে বেড়াচ্চে দেকলাম। মিনিট পাঁচেক সাঁতার কাটার পর ডুবে গেলো।”
“আমরা তো খুব ভয়ে আছি বাপু। কহন কারে নদীতি টানে নিয়ে যায়। আমারে তো নদীতি মেলা কাম করা লাগে। নিজিগরে গোছল, গরু-ছাগলের গোছল করানো লাগে। কুমির দেহার পরতে ভয়ে কেউ নদীতি নামবার চায় না।”
কেসমত আলী আরও বলেন, “এ বাজান আপনেরা তো সাম্বাদিক, সরকারের ইটু কবার পারেন না আমারে হেনতে কুমির ধরে নিয়ে যাক।”
পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন সিরাজ খাঁ। তিনি বলেন, “কিযে কায়দা-বায়দা হয়ছে কুমিরির জন্নি। বিয়ানের তে সন্দে পর্যন্ত মানুষ গিজগিজ করে কুমির দেহার জন্নি। কেউ যদি দেহে ওরে জাহর দেয়।
“ওদিকে আমরা নাবের পারতে ছিনে, গরু-ছাগলের নওয়াবের পারিনে। কি যে সম্মেস্যা, এ কুমির যাবি কবে? শুনলাম ইউএনওর কাছে নাহি চিটি দেছে। কিন্তু কেউ তো আইলে না কুমির ধরবের।”
সিরাজ খাঁ আরও বলেন, “আমি একদিন দেকছি, সিডা ছোট কুমির। পাঁচ- সাড়ে পাঁচ হাত লম্বা হবি। তারাতারি কুমির সরানের ব্যবস্তা করা লাগবি। তা না হলি নদীতি নামলি কার পাওডা ধরে টানে নিয়ে যাবি ঠিক নাই।”
চায়না খাতুন বলেন, “উরি মানুষজন আসে। মেলা দূরিরতে আসে কুমির দেকপার। আমি দুইদিন দেকচি। এহন তো ভয় করে নদীতি নামতি। আমরা নদীতি গোসল করি ভয়ে কেউ এহন নামে না।
দৈনন্দিন জীবনের ভোগান্তির বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, “ড্যাঙ্গায় দাঁড়ায়া মগে পানি নিয়ে গোসল করি। মগের পানিতি গোসল করে শান্তি পায়নে। রুজার দিন ইটু শান্তিমত ডুব না দিলি হয়।
“দেহেন কুমির কয়ডা ধরার ব্যবস্থা করা যায় কিনা? ধরে বড় নদীতি ছাড়ে দিক। সরকারের কাচে অনুরোধ এই কামডা যেন করে।”
পদ্মা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত গড়াই নদীটি বয়ে গেছে রাজবাড়ী, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া জেলার সীমান্ত দিয়ে। এই নদীতে আগে কখনো কুমিরের দেখা মেলেনি। কীভাবে কুমিরগুলো নদীতে আসল তাও কেউ বলতে পারছেন না।
তবে স্থানীয়দের ধারণা, বর্ষায় নদীতে যখন নদীতে পানি বেশি ছিল তখন হয়তো পদ্মা নদী হয়ে এখানে কুমির এসেছে। এখান নদীর পানি কমে গেছে, তবে গড়াই নদীর মোহনের ঘাট এলাকায় কিছুটা গভীর পানি আছে। তাই সেখানে আশ্রয় নিয়েছে কুমিরগুলো।
পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস. এম আবু দারদা বলেন, “ওই এলাকা পরিদর্শন করেছি। আমি বেশ কয়েকবার গিয়েছি। তবে আমি নিজে দেখতে পাইনি। স্থানীয়দের মোবাইলে ভিডিওগুলো দেখতে পেয়েছি। তাতে মনে হয়েছে কুমির হতে পারে। ”
তিনি আরও বলেন, “মানুষের নিরাপত্তার জন্য দ্রুত বনবিভাগের বিশেষজ্ঞ টিম এনে কুমির ধরার ব্যবস্থা করা হবে। এর মধ্যেই উপজেলা বনবিভাগকে লিখিত দিয়েছি তাদের বিশেষজ্ঞ টিম এনে কুমির ধরার ব্যবস্থা জন্য।”
রাজবাড়ী বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক কর্মকর্তা সানজিদা সুলতানা বলেন, “আমরা একটি লিখিত পেয়েছি। তবে রাজবাড়ীতে কোনো বিশেষজ্ঞ টিম নেই। যে কারণে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তারা যে নির্দেশনা দিবে সে অনুযায়ী কাজ করা হবে।”